সঠিক ব্যবস্থাপনা না থাকায় বাজার অস্থিতিশীল বলছেন সংশ্লিষ্টরা ধানের ভরা মৌসুমেও ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার
মো. আখতারুজ্জামান : চালের বাজারে অস্থিরতা কাটছেই না। আমনের ভরা মৌসুম দেশের চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী। দামের লাগমটানতে চাল আমদানি করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পাশাপাশি চালের বাজার স্থিতিশীল হচ্ছে না।
রাজধানীর খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে মানভেদে প্রতি কেজি চালে ৩ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। অথচ দেশের ধান-চালের বড় বড় মোকাম ও হাটবাজারগুলোতে এখন নতুন আমন ধানের ব্যাপক সরবরাহ। প্রতিদিনই হাট-বাজারগুলোতে ধান-চালের এ সরবরাহ বাড়ছে। সরকারের সঠিক বাজার ব্যবস্থাপনা না থাকায় ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম।
অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় প্রতি ট্রাকের ভাড়া ৩ হাজার টাকা বাড়িয়ে ১৭ হাজার টাকা করা হয়েছে। আমরা হিসাব করে দেখেছি, এতে প্রতি বস্তায় ১২ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে। এছাড়া ধানের দাম বেশি। গত বছরের চেয়ে এবার মণ প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি। এর প্রভাব পড়েছে চালের দামের ওপর। ফলে খুরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে রাজধানীর বাজারে নাজিরশাইল চালে কেজিতে বেড়েছে ২ থেকে ৩ টাকা। নাজিরশাইল চালে কেজি ৬৮-৭০ টাকা। মিনিকেট চালে প্রতি কেজিতে ২ টাকা দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৭-৬৮ টাকা, আটাশ চালের দাম কেজিতে বেড়েছে ২ টাকা। আটাশ চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৩ টাকা। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, চালের কেজিপ্রতি মূল্য ৪৫ থেকে ৪৬ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। সরকারের সঠিক ব্যবস্থপনা না থাকায় দাম বাড়ছে বলে তিনি মনে করেন। সরকার শুধু চাল ও ধান ক্রয় করে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। এই ধারণা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। সরকারের উচিৎ হবে দ্রুত চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত জুলাই থেকে ১০ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে ৭ লাখ ৭৩ হাজার টন চাল আমদানি হয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ে চাল আমদানির পরিমাণ ছিল শূন্যের কোঠায়। আমদানিকৃত চালের মধ্যে সরকার এনেছে ৪ লাখ ৯৪ হাজার টন। আর ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বেসরকারি পর্যায়ে চাল আমদানি হয়েছে ২ লাখ ৭৯ হাজার টন। ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত কোনো চাল আমদানি না হলেও রাষ্ট্রীয় গুদামগুলোতে খাদ্যের মজুত কমে আসা ও দেশের বাজারে চালের উচ্চমূল্যের কারণে পরিস্থিতির বদল ঘটে।
এমন পরিস্থিতিতে আমদানি বাড়াতে সরকার চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণ করে। ফলশ্রুতিতে গত অর্থবছরের শেষে চাল আমদানির পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩ লাখ ৫৯ হাজার টন।
এ বছর আমন ধান, চাল ও গমের সরকারি সংগ্রহ মূল্য নির্ধারণ করেছে সরকার। আমন ধানের সরকারি ক্রয় মূল্য প্রতি কেজি ২৭ টাকা, চালের মূল্য প্রতি কেজি ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। চলতি (২০২১-২২) অর্থ বছর উল্লিখিত মূল্যে ৭ নভেম্বর থেকে আমন ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে। এবারে ৩ লাখ টন আমন ধান, ৫ লাখ টন সিদ্ধ চাল ক্রয় করা হবে। উল্লেখ্য গত বছর আমন ধান ও চালের দাম ছিল যথাক্রমে ২৬ ও ৩৬ টাকা।