চীনের অর্থায়নে দেশব্যাপী ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ
সোহেল রহমান : চীন সরকারের অর্থায়নে দেশব্যাপী ডিজিটাল সংযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি’ (একনেক)-এর বৈঠকে এ-সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। দেশব্যাপী এ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ৮৮৩ কোটি ৭৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়নের পরিমাণ ২ হাজার ৫০৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা এবং চীনা ঋণের পরিমাণ ৩ হাজার ৩৭৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৫ সালের নভেম্বর পর্যন্ত।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির সুবিধার্থে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ‘বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি)-তে প্রকল্পটি বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত নতুন প্রকল্প হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকারের সেবাসমূহকে ই-সেবায় রূপান্তরের মাধ্যমে জনগণের কাছে দ্রুত ও সহজে পৌঁছে দেয়া এবং সকল ক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার বাড়াতে প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো স্থাপন এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।
প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে দেশের সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে উচ্চগতিসম্পন্ন ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা নিশ্চিত হবে, প্রান্তিক পর্যায়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রযুক্তি ব্যবহার ও চর্চা বৃদ্ধি পাবে, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন ও গবেষণা সম্ভব হবে, সরকারি সেবা স্বচ্ছ ও সহজ করার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। সার্বিক অর্থে সকল নাগরিকের জন্য ডিজিটাল সেবা গ্রহণ, জ্ঞানভিত্তিক দক্ষ সমাজ গঠন এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে সরকার।
সূত্রমতে, প্রকল্পের আওতায় ১ লাখ ৯ হাজার ২৪৪টি ব্রডব্যান্ড অ্যান্ড ইউজার কানেক্টিভিটি স্থাপন; ১০ হাজার শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন; ৫৭টি বিশেষায়িত ল্যাব, সেন্ট্রাল ক্লাউড প্লাটফর্ম এবং ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি সেন্টার অব এক্সিলেন্স স্থাপন; জেলা ও উপজেলা কমপ্লেক্স-এ আইটি অবকাঠামোসহ এলএএন ও নেটওয়ার্ক অপারেশন সেন্টার স্থাপন; বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ সুবিধাদি, ৫৫৫টি ডিজিটাল সার্ভিস ও এমপ্লয়মেন্ট ট্রেনিং সেন্টার স্থাপন; মাঠ পর্যায়ের ক্লাউড ফাইল সার্ভিস এবং ডিজিটাল স্টোরেজের জন্য কেন্দ্রীয় সার্ভার অবকাঠামো স্থাপন; আইসিটি ল্যাব, স্মার্ট ভার্চুয়াল ক্লাসরুম এবং ডিসট্যান্স লার্নিং প্ল্যাটফর্মসহ প্রয়োজনীয় আইসিটি অবকাঠামো সুবিধা সম্বলিত একটি ডিজিটাল লিটারেসি সেন্টার স্থাপন; সিভিল রেজিস্ট্রেশন ও ভাইটাল স্ট্যাটিসটিক্স (সিআরভিএস) বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিআরভিএস সেন্ট্রাল আইএসডিপি সার্ভার স্থাপন, মাঠ পর্যায়ে ৫ হাজার ৫০০টি এনরোলমেন্ট অবকাঠামো স্থাপন; ১৭ হাজার ৩১৪টি সার্ভিস ডেলিভারি ডিভাইস বিতরণ এবং ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশন; ১০টি ডিজিটাল ভিলেজ স্টেশনের আওতায় ফিল্ড সার্ভে; ২৮ ক্যাটাগরির পরামর্শক সেবা ক্রয়; কম্পিউটার এক্সেসরিজ ও সফটওয়্যার সংগ্রহ; ২০ হাজার জন কৃষককে স্মার্ট সেন্সর ডিভাইস প্রদান; বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ( বৈদেশিক ভেন্যু : ৪০ জন, বাংলাদেশ ভেন্যু : ৩ হাজার ৩৩৫ জন), স্থানীয় প্রশিক্ষণ: ১৬ হাজার ৮২১ জন; সেমিনার ও কনফারেন্স আয়োজন এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ৪৯ জন জনবল নিয়োগ দেয়া হবে।
এছাড়া প্রকল্পের পূর্ত কাজের মধ্যে রয়েছেÑ ৪৯২টি অনাবাসিক ভবন নির্মাণ, একটি ২১তলা বিশিষ্ট ‘ডু আইসিটি টাওয়ার’ নির্মাণ, উপজেলা শেয়ারড আইসিটি অপারেশন সেন্টারের জন্য উপজেলা বিল্ডিং-এর ১তলা ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ ৪৯১টি; ১০২টি অফিস ইক্যুইপমেন্ট ও ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৮২টি ফার্নিচার সংগ্রহ ইত্যাদি।
প্রকল্পের বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশন জানায়, ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উচ্চ প্রবৃদ্ধির জন্য প্রযুক্তিসমূহের উন্নয়ন, অবকাঠামো নির্মাণ, মানব সম্পদ উন্নয়ন, গবেষণা ও উন্নয়নের মাধ্যমে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের সুবিধা লাভের জন্য নীতি ও কৌশল গ্রহণের সার্বিক নির্দেশনা রয়েছে। এছাড়া ডিজিটাল অর্থনীতি বাস্তবায়ন ও মানবসম্পদ বিকাশের লক্ষ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহকে আধুনিক আইসিটি ল্যাবে সজ্জিতকরণ; স্বচ্ছতা, সুশাসন ও জনগনের নিকট সেবা সরবরাহ তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে তরান্বিত করা; আইসিটিভিত্তিক মানসম্পন্ন শিক্ষার প্রসার এবং তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন জনশক্তি বিনির্মাণের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এ বিবেচনায় প্রকল্পটি ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।