ওমিক্রন নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হতে বলছেন ডা. প্রবীর কুমার সরকার
শাহীন খন্দকার : সময় যত এগোচ্ছে বিশ্বে চিন্তা বাড়াচ্ছে করোনা ভাইরাসের নয়া ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন। ইতিমধ্যেই দক্ষিণ আফ্রিকায় নিজের খেলা দেখাতে শুরু করেছে সেটি। তাই বাংলাদেশে পা না রাখতে পারে তার জন্য সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তররা।
শিশু হাসপাতাল ও ইনিস্টিটিউটের অতিরিক্ত পরিচালক ডা. প্রবীর কুমার সরকার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখ্য বিজ্ঞানী সৌম্য স্বামীনাথানের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, অতিরিক্ত পরিচালক বলেন, এর মধ্যেই মডার্না দাবি করেছে- আগামী বছরের শুরুতেই ওমিক্রনকে কাবু করতে পারে এমন টিকা বাজারে আনবেন তারা।
এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওমিক্রনকে কাবু করতে পারে এমন টিকার জন্য অপেক্ষা না করাই ভালো। তার থেকে বরং বুস্টার ডোজ নেওয়া জরুরি বিশেষ করে বয়োঃজেষ্ঠ্যদের।
তবে বিশ্বের অন্তত ১৫ জন টিকা বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, কোভিড টিকা নেওয়া থাকলেও বুস্টার ডোজ নিয়ে নেওয়া জরুরি। ওমিক্রন প্রতিরোধী টিকা যখন আসবে, তখন দেখা যাবে।
ডা. প্রবীর কুমার জানিয়েছেন, ইন্টারন্যাশনাল ভ্যাকসিন অ্যাকসেস সেন্টারের ডিরেক্টর লোইস প্রিভর ডামের মতে, বুস্টার ডোজ ওমিক্রন প্রজাতির সংক্রমণ পুরোপুরি হয়তো ঠেকাতে পারবে না। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। বর্তমানে সারা বিশ্বের ৯৯ শতাংশ নতুন রোগী এই ডেলটা ধরনে আক্রান্ত।
তিনি আরও বলেন, করোনার নতুন ধরন নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে আমাদের সব সময় প্রস্তুত এবং সতর্ক থাকতে হবে। কারণ গত বছরের চেয়ে আমাদের পরিস্থিতি ভিন্ন। দক্ষিণ আফ্রিকায় ওমিক্রন শনাক্ত হওয়ার পর দেশটিতে প্রতিদিনই রোগী দ্বিগুণ হচ্ছে। এই অঞ্চলেই প্রথম ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।
করোনার নতুন এই ধরনের সংক্রমণ ঠেকাতে বিশ্বের অনেক দেশেই আফ্রিকার অঞ্চলগুলোর ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তবে ওমিক্রনের বিরুদ্ধে বিশ্বের কোন ভ্যাকসিন কতটা কার্যকর তা এখন পরীক্ষা নীরিক্ষার পর্যায়ে রয়েছে। সেই আবহেই নোভাভ্যাক্সের তরফে জানান হয়েছে নতুন বছরে জানুয়ারি থেকেই এই প্রজাতির বিরুদ্ধে টিকা তৈরি শুরু করবে সংস্থাটি। সংস্থার তরফে বলা হয়েছে, নোভাভ্যাক্সের টিকা নিয়েছেন এমন ব্যক্তিদের দেহে তৈরি অ্যান্টিবডি এই প্রজাতিকে নিষ্ক্রিয় করতে পারছে কি না তা গবেষণা করে দেখা হচ্ছে।
ওমিক্রন উদ্বেগ নিয়ে বিশ্বব্যাপী জারি রয়েছে সতর্কতা। আপাতত পরিত্রাণের জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা ছাড়া উপায় নেই। মাস্ক পরা, নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা, স্যানিটাইজার ব্যবহার- এসবতো গত দুটো ঢেউ আমাদের ভালই শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছে। তবে তৃতীয় ঢেউ আসার আগে আমাদের দুর্গ তৈরি রাখাই ভাল। আর সেখানে সেনা হয়ে লড়বে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেছেন, করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনের প্রায় ৩০ বার বিয়োজন বা মিউটেশন ঘটেছে। তার পরই জন্ম হয়েছে এই ওমিক্রনের। তবে এই নতুন প্রজাতি কতটা সংক্রামক, এখনও জানা যায়নি। চলছে গবেষণা।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা দেখি যে অনেকেরই কোমরবিডিটি কন্ডিশন থাকে, এছাড়া বয়স্কদের ক্ষেত্রে যাদের চিকিৎসকের বুস্টার ডোজের ব্যাপারে সুপারিশ থাকে, তাদেরকে দেওয়া যেতে পারে। কোনো একজন লোকের দেখা গেল যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খুবই কমে গেছে, এক কথায় তার ক্লিনিক্যাল কন্ডিশনের কারণে যদি বুস্টার ডোজের প্রয়োজন হয়, শুধু তাকেই দেওয়া যেতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শে। কারণ করোনায় তাদের মৃত্যুহার অনেক বেশি। তবে দুইডোজ সম্পন্ন না হলে কোভিডে আক্রান্ত সংখ্যা ছড়িয়ে যেতে পারে? তাই দুইডোজ সম্পন্ন করার তাগিদ দিলেন এই বিশেষজ্ঞ।