কর রেয়াতে চলে যায় জিডিপির ২.২৮ শতাংশ
অর্থনীতি ডেস্ক : এনবিআরের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশেষ খাতগুলোকে স্বল্প কর হার সুবিধা, কর অব্যাহতি এবং কর অবকাশ সুবিধা দেয়ায় কর ভিত্তি সংকুচিত হয়েছে। যদি এসব খাতে সুবিধা বাতিল করা হয়, তা হলে কর আহরণ বর্তমানের চেয়ে বাড়বে।
কৃষি, শিল্প, সেবা, অবকাঠমোসহ বিভিন্ন খাতে কর সুবিধা দেয়ার ফলে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) কমপক্ষে ২ দশমিক ২৮ শতাংশ আয়কর কম আদায় হয়। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনটি জাতীয় আয়কর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সম্প্রতি উপস্থাপন করেন রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (আয়কর নীতি) সামসুদ্দীন আহমেদ। কম আহরণের কারণ হিসেবে করের ভিত্তি সংকুচিত হওয়াকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় প্রতিবেদনে।
রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, আয়কর বিভাগে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশন অভাব, কর ফাঁকি, জটিল আইন-কানুন ও অর্থনীতির বড় একটি অংশ হিসাবের বাহিরে থাকার কারণেও কাঙ্খিত কর আদায় হচ্ছে না।
এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্পায়ন, বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্টকরণ এবং জনগুরুত্বপূর্ণ বিশেষ খাতগুলোকে স্বল্প কর হার সুবিধা, কর অব্যাহতি এবং কর অবকাশ সুবিধা দেয়ায় কর ভিত্তি সংকুচিত হয়েছে। যদি এসব খাতে সুবিধা বাতিল করা হয়, তা হলে কর আহরণ বর্তমানের চেয়ে বাড়বে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, আয়কর আদয়ের পরিমাণ প্রায় ৮৫ হাজার কোটি টাকা। এটি এনবিআরের মাধ্যমে সংগৃহীত রাজস্বের শতকরা ৩৫ ভাগ। রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আমাদের অর্থনীতির যে আকার তার সঙ্গে কর আহরণের সামাঞ্জস্য নেই। এর মূল কারণ প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ আয়ের তথ্য গোপন করে কর ফাঁকি দেয়া হয়। জিডিপির হিসাবে বছরে কত পরিমাণ কর ফাঁকি হয়, তার কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য এনবিআরের কাছে নেই। তবে রাজস্ব বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, আদায়যোগ্য করের কমপক্ষে ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কম আদায় হয়।
এনবিআরের সাবেক সদস্য আমিনুর রহমান বলেন, দেশের মোট জনসংখ্যা, মাথাপিছু আয়, মোট দেশজ উৎপাদন ইত্যাদি বিবেচনা করলে করদাতার সংখ্যা এবং আদায় বর্তমানের চেয়ে কমপক্ষে দ্বিগুণ হওয়া উচিত। প্রতিবেদনে বলা হয়, আয়কর সংগ্রহে ধারাবাহিক প্রবৃদ্ধি অর্জিত হলেও আমাদের কর বনাম জিডিপি অনুপাত এখনও কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি।
এক দশক আগে ২০১১-১২ অর্থবছরে আয়কর আদায়ে প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১১ শতাংশ।
গত অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশের বেশি।
এনবিআর বলেছে, আয়কর আদায় বাড়লেও জিডিপি বনাম কর অনুপাত সেভাবে বাড়েনি। এক দশক আগে জিডিপির বিপরিতে কর সংগ্রহ ছিল ১০ শতাংশ। এক দশক পর গত অর্থবছরে তা সামান্য বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১২ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সাবেক কর্মকর্তা ও গবেষণা সংস্থা পিআরআই-এর নিবার্হী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাংলাদেশের কর ব্যবস্থার যথেষ্ঠ দুর্বলতা আছে। এখানে বড় ধরনের সংস্কার দরকার। এনবিআরকে ঢেলে সাজাতে হবে। এখন যে এনবিআর আছে, তা দিয়ে প্রত্যাশিত রাজস্ব আয় সম্ভব নয়। এর আমূল পরিবর্তন দরকার।
এনবিআরের প্রতিবেদন অনুযায়ী যেসব খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ভৌত অবকাঠামো, তথ্য প্রযুক্তি, রপ্তানিমুখী পোশাক ও বস্ত্র, হস্তজাত, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প ও কৃষি খাত।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও পরিবহনসহ সরকার এ পর্যন্ত ১৮টি ভৌত অবকাঠামো খাতে কর অব্যাহতি সুবিধা দিয়েছে। প্রোডাক্টশন শেয়ারিং কনট্রাক্ট বা পিএসসির আওতায় বিদেশি তেল গ্যাস কোম্পানিকে কর সুবিধা দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে যেসব বিদেশি পরামর্শক কাজ করছেন, তারা কর সুবিধা ভোগ করছেন।
জিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বর্তমানে ২২টি তথ্যপ্রযুক্তি খাত শতভাগ কর অব্যাহতি সুবিধা পাচ্ছে। বিশ্ব প্রতিযোগিতার সক্ষমতা অর্জনে তৈরি পোশাক খাতকে কম হারে (১২ শতাংশ) কর সুবিধা দেয়া হয়েছে।
হস্তজাত, কুটির শিল্প ও মাঝারি শিল্প যাদের বছরে লেনদেন বা টার্নওভার ৫০ লাখ টাকা, তাদের কর মওকুফ করে দেয়া হয়েছে। কম উন্নত এলাকায় শিল্প স্থাপন উৎসাহিত করতে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পকে কর রেয়াত দেয়া হয়েছে।
বর্তমানে পাটজাত দ্রব্য উৎপাদন করলে কম হারে কর আদায় করা হয়। কৃষিজাত উৎপাদন থেকে অর্জিত আয়ের ওপর ১০ বছর পর্যন্ত করমুক্ত সুবিধা ভোগ করা যায়। সূত্র : নিউজবাংলা