বিশ^ব্যাংকের কাছে আরো ২০০ কোটি ডলার আইডিএ ঋণ চায় বাংলাদেশ
সোহেল রহমান : চলমান করোনায় দেশের ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমবাজার, আর্থিক ও সামাজিক খাত সচল রাখতে বিশ্বব্যাংকের ‘প্রোগ্রামেটিক রিকভারি অ্যান্ড রেজিলিয়েন্স ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ (ডিপিসি) শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় প্রদেয় ৫০ কোটি ডলার ঋণ চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রদান এবং বিশ^ব্যাংকের আইডিএ-১৯ ও আইডিএ-২০-এর আওতায় কোর আইডিএ থেকে আরো ২০০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
রোববার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁও-এ বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধি দলের সঙ্গে এক দ্বি-পাক্ষিক বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ আহবান জানানো হয়। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং বিশ^ব্যাংক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের ভাইস প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শ্যেফার।
বৈঠকে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রকল্পের বিপরীতে প্রদেয় ঋণ বাজেট সহায়তা হিসেবে প্রদানের জন্য বিশ^ব্যাংকের প্রতি আহবান জানিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রচলিত নিয়মে প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ দিলে অনেক সময় দেখা যায় যে, প্রকল্প প্রস্তুত থাকে না এবং সেগুলো প্রস্তুত করতে অনেক কালক্ষেপন হয়ে মন্থর গতি তৈরি হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে বাজেট সহায়তা আকারে প্রকল্প ঋণ দেয়া হলে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেসব প্রকল্প প্রস্তুত আছে সেসব প্রকল্পের জন্য অর্থছাড় করা সম্ভব হবে এবং প্রকল্পের গতি ত্বরান্বিত হবে।
এছাড়া ঋণ সহায়তা প্রদানের ক্ষেত্রে আইডিএভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে জনসংখ্যাধিক্যের দিক থেকে ৩য় অবস্থানে থাকা বাংলাদেশের জন্য জনসংখ্যার ভিত্তিতে নায্যতার সঙ্গে দ্রুত ঋণ মঞ্জুরের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূরীরণের ক্ষেত্রে সরকার ও বিশ্বব্যাংকের ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার উপরও গুরুত্বরোপ করেন তিনি। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিব আবদুল রউফ তালুকদার ডিপিসি প্রকল্পের আওতায় ৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা হিসাবে দ্রুত ছাড় করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ডিপিসি’র জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলীর অধিকাংশই ইতোমধ্যে পূরণ করা হয়েছে।
অবশিষ্ট শর্তাবলীও সহসাই পূরণ করা হবে।
বৈঠকে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ-এর সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, করোনা পরিস্থিতিতেও চলমান অনেক প্রকল্পে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আইডিএ-১৮ এর আওতায় বাংলাদেশ কোর আইডিএ থেকে ৫০০ কোটি ডলার এবং ‘স্কেল-আপ ফ্যাসিলিটি’ (সাফ) থেকে আরো ২০০ কোটি ডলার ব্যয়ে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সক্ষমতা প্রদর্শন করেছে, যা আইডিএভূক্ত দেশগুলোর মধ্যে একক সর্বোচ্চ পরিমাণ। চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে আইডিএ-১৯ সংক্ষিপ্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সক্ষমতা প্রদর্শন করায়, বাংলাদেশকে বিগত বছরগুলোর তুলনায় আইডিএ-১৯ ও আইডিএ-২০-এর আওতায় কোর আইডিএ থেকে আরো ২০০ কোটি ডলার ঋণ প্রদানের অনুরোধ জানান তিনি।
বৈঠকে বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস-প্রেসিডেন্ট হার্টউইগ শ্যেফার কোভিড-১৯ থেকে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সফলতার উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি অন্যান্য অনেক দেশের তুলনায় ভাল করছে এবং কোভিড মোকাবিলা করে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, প্রকল্প ডিজাইন, প্রসেসিং, অনুমোদন ও বাস্তবায়নের প্রতিটি ক্ষেত্রে আরো গতিশীলতা আনয়নে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও বিশ্বব্যাংকের সমন্বয়ে যথাসময়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ-এর বার্ষিক সভায় ঢাকা মহানগরীকে অধিকতর নান্দনিক শহরের পাশাপাশি যোগাযোগ সহজীকরণের লক্ষ্যে একটি ‘ফ্ল্যাগশিপ প্রজেক্ট’ গ্রহণের জন্য বিশ^ব্যাংকের প্রতি আহবান জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। প্রস্তাবিত এ প্রকল্পের অগ্রগতির বিষয়ে হিার্টউইগ শ্যেফার বলেন, প্রকল্পের আশানুরূপ অগ্রগতি রয়েছে এবং অচিরেই এ বিষয়ে সুখবর পাওয়া যাবে।