বিশ্বে মহামারিকালে অতিধনীদের সম্পদ বহুগুন বৃদ্ধি
অর্থনীতি ডেস্ক : বিশ্বব্যাংক-আইএমএফসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এমন গবেষণা তথ্য প্রায় প্রতিদিনই প্রকাশ করছে। কিন্তু মঙ্গলবার একটি ভিন্ন ধরনের গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা। সংস্থাটি বলছে, করোনা মহামারি অতিধনীদের সম্পদ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
সমাজবিজ্ঞানীদের একটি নেটওয়ার্কের তৈরি ওয়ার্ল্ড ইনইকুয়েলিটি রিপোর্ট বা বিশ্ব বৈষম্য প্রতিবেদনে (ডব্লিউআইআর) এমন কথা বলা হয়েছে। বার্তা সংসস্থা রয়টার্স এই গবেষণা রিপোর্টটিকে নিয়ে মঙ্গলবার একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
তাতে বলা হয়েছে, করোনা মহামারিকালে বিশ্বের অতিধনীদের সম্পদ রেকর্ড পরিমাণে বেড়েছে। চলতি বছর বৈশ্বিক বিলিয়নিয়ার তথা অতিধনীদের পারিবারিক সম্পদের সম্মিলিত পরিমাণ বেড়ে বৈশ্বিক সম্পদের ৩ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, যা ২০২০ সালের প্রথম দিকে করোনা সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আগে ছিল ২ শতাংশের সামান্য বেশি।
সমীক্ষা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক লুকাস চ্যান্সেল বলেন, ‘ধনী দেশগুলো কোভিড সংকটের কারণে বেড়ে যাওয়া দারিদ্র্য কমাতে ব্যাপকভাবে আর্থিক প্রণোদনা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও বিশ্বের সর্বত্র অতিধনী ও দরিদ্র মানুষের মধ্যে সম্পদের বৈষম্য যথেষ্ট বেড়ে গেছে।’
বিভিন্ন গবেষণা ও সরকারি তথ্য ব্যবহার করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। এটির ভূমিকা লিখেছেন ২০১৯ সালে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী তিন অর্থনীতিবিদের দুজন অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ও এস্থার দুফলো। তারা দুজন আবার সম্পর্কে স্বামী-স্ত্রী, যারা দারিদ্র্য নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতিস্বরূপ নোবেল পুরস্কার পান।
অভিজিৎ-দুফলো প্রতিবেদনের মুখবন্ধে লেখেন, ‘ক্রমবর্ধমান সম্পদ হলো ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক লাভ, ক্ষমতা ও প্রভাবের প্রধান উৎস। এগুলো বিশ্বে বৈষম্য আরও বাড়ায়। এতে অর্থনৈতিক ক্ষমতা অতিধনীদের হাতে কুক্ষিগত হয়ে যাচ্ছে।’
সমীক্ষা অনুযায়ী করোনা মহামারিকালে বিশ্বব্যাপী স্বাস্থ্য, সামাজিক, লৈঙ্গিক (নারী-পুরুষ) এবং জাতিগত বৈষম্যও বাড়িয়ে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্বস ম্যাগাজিনের তৈরি বিশ্বের বার্ষিক বিলিয়নিয়ার বা অতিধনী তালিকায় এই বছর রেকর্ডসংখ্যক ২ হাজার ৭৫৫ জন বিলিয়নিয়ারের নাম উঠে এসেছে, যাদের সম্পদের সম্মিলিত মূল্য ১৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন বা ১৩ লাখ ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। গত বছরে তাদের সমন্বিত সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮ ট্রিলিয়ন বা ৮ লাখ কোটি ডলারের কিছু বেশি।
নতুন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের মোট সম্পদের ১১ শতাংশ রয়েছে মাত্র ৫ লাখ ২০ হাজার ধনী লোকের কাছে, যা গত বছরে ছিল ১০ শতাংশ। অথচ এই মানুষগুলো বৈশ্বিক জনসংখ্যার মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ (০.০১%)।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, করোনা প্রতিরোধে বিধিনিষেধ চলাকালে বিশ্ব অর্থনীতিতে অতিধনীদের সম্পদ ফুলে–ফেঁপে উঠেছে, বিশেষ করে যারা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়িক কর্মকা-ে জড়িত। বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের গতি জোরদার হওয়ার সুবাদে আর্থিক বাজারগুলোয় চাঙাভাব দেখা দেওয়ার কারণে অন্যদের সম্পদ বেড়েছে।
সমীক্ষামতে, মহামারিকালে দেশে দেশে দারিদ্র্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এ রকম পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলো ব্যাপক সরকারি সহায়তার মাধ্যমে তা কিছুটা প্রশমিত করতে সক্ষম হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে সমীক্ষা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক লুকাস চ্যান্সেল বলেছেন, এখানে, দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামাজিক রাষ্ট্রগুলোর গুরু দায়িত্ব আছে সেটাই দেখা যাচ্ছে। গত জুলাই মাসে বিশ্বে ধনী-গরীবের বৈষম্য নিয়ে বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। তাতে বলা হয়েছিল, করোনাকালেও অতিধনীদের সংখ্যা কমা দূরে থাক, বরং বেড়েছে।
আরো ছয় হাজার মানুষ অতি-ধনী হয়েছেন। নতুন ধনীদের সংখ্যা সব চেয়ে বেশি অ্যামেরিকায়। তারপর চীন এবং তিন নম্বরে জার্মানি। সূত্র : রয়টার্স, নিউজবাংলা, টিবিএস বাংলা অনলাইন। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত