ফাইভজি যুগে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ
অর্থনীতি ডেস্ক : বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের ১২ তারিখ দেশে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে পঞ্চম প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা ফাইভজি। সচিবালয়ে শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব আহমেদ ওয়াজেদ জয় ভার্চুয়ালি এ সেবা উদ্বোধন করবেন। মোস্তাফা জব্বার জানান, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটক ১২ ডিসেম্বর ফাইভজি চালু করবে। প্রাথমিকভাবে রাজধানীসহ দেশের কয়েকটি এলাকায় এ সেবা চালু হবে।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ঢাকার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, ধানমন্ডি ৩২, বাংলাদেশ সচিবালয়, মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ এবং ঢাকার বাহিরে সাভার ও টুঙ্গিপাড়াকে এর কাভারের আওতায় আনা হবে। পরবর্তী সময়ে টেলিটক ঢাকার ২০০টি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এ প্রযুক্তি সেবা চালু করবে।
‘আগামী বছরের মার্চে বেতার তরঙ্গ বরাদ্দ নিলামে দেয়ার পর বেসরকারি তিনটি মোবাইল অপারেটর এ প্রযুক্তি চালু করবে। ২০২২ সালের পর টেলিটক ও বিটিসিএল দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল, বিশেষ করে স্পেশাল ইকোনোমিক জোনগুলোতে এ সেবা চালুর প্রস্তুতির কাজ করছে।’ ফাইভজি চালু হলে বেশ কিছু সুবিধা পাওয়া যাবে দেশে।
ফাইভজিতে প্রতি সেকেন্ডে ডাউনলোড স্পিড ১০ থেকে ৫০ গিগাবাইট। ফোরজিতে এই গতি ১০ থেকে ২০ মেগাবাইট। অর্থাৎ ফোরজির চেয়ে ফাইভজির গতি ১০০ থেকে ২৫০ পর্যন্ত গুণ বেশি। এ গতিতে নেটফ্লিক্সে ৮কে রেজুলেশনের ৪০০ সিনেমা একবারে দেখা যাবে।
তথ্য আদান-প্রদানে সময়ের ব্যবধানই ল্যাটেন্সি। ফাইভজিতে এই ল্যাটেন্সি রেট অনেক কম। ফোরজি তথ্য পাঠায় ১০০ থেকে ২০০ মিলিসেকেন্ডের ভেতর। ফাইভজি এই সময় কমিয়ে আনবে ১ মিলিসেকেন্ডে। ফলে কাঙ্ক্ষিত তথ্য মিলবে রিয়েল টাইমে।
স্বয়ংক্রিয় গাড়ি ফাইভজি ব্যবহার করে, ট্রাফিক সিগন্যাল ও রোড সেন্সরের সঙ্গে সমন্বয় করবে। রাস্তার অন্য গাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারবে। একটি ঘটনায় মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখাতে সময় লাগে ২০০ মিলিসেকেন্ড। ফাইভজি নেটওয়ার্কে প্রতিক্রিয়া দেখাতে স্বয়ংক্রিয় গাড়ির সময় লাগবে ১ মিলিসেকেন্ড। এতে সড়ক দুর্ঘটনা কমে আসবে।
আগামী দিনে স্বয়ংক্রিয় বা দূর নিয়ন্ত্রিত ট্রেন, ডেলিভারি ট্রাক ও প্লেন চালাতেও ফাইভজি একই সুবিধা দেবে।
শুধু যানবাহন নয়, বিশ্বের অন্য প্রান্ত থেকেও রোবোটিক ডিভাইস দিয়ে অস্ত্রোপচার সম্ভব হবে। বিশেষজ্ঞ সার্জনরা রোবট দিয়েই জরুরি অবস্থায় সময় ও দূরত্ব কমাতে পারবেন।
ফাইভজির কারণে ফ্যাক্টরিতে রোবটের সংখ্যাও বাড়বে। তারা একে অন্যকে নিজেদের কাজ ও স্থান সম্পর্কে জানাতে পারবে। এতে তাদের সক্ষমতা আরও বাড়বে।
ড্রোনের বহর দিয়ে কৃষিকাজও হবে। দূর নিয়ন্ত্রিত ড্রোন দিয়ে ফসল বাছাই করে তোলা যাবে। সার ও পানি দেয়াও সম্ভব হবে।
ভিআর হেডসেট পরে রিয়েলটাই্মে খেলা যাবে জনপ্রিয় গেম ফোর্ট নাইট, ব্যাটেল রয়েল ও পাবজি। ল্যাগের কারণে কোনো বাধাও আসবে না। ফাইভজি ব্যবহারে পিসি ও গেমিং কনসোল থেকে সফটওয়্যার সরিয়ে ক্লাউডে রাখা যাবে। ক্লাউড সেবা নিলে দিতে হবে সাবস্ক্রিপশন ফি। এতে গেমারদের আর দামি ডিভাইস কিনতে হবে না।
অগমেন্টেড রিয়েলিটি প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে। ফলে ভার্চুয়াল অনেক কিছু আমরা আমাদের আশপাশেই দেখতে পারব।
ই-কমার্স ও কুরিয়ার কোম্পানিগুলো ড্রোন দিয়েই পণ্য ডেলিভারি দেবে। আগামী দিনে বাড়ির দরজায় পণ্য নিয়ে হাজির হবে ড্রোন।
স্মার্টহোমে ব্যবহৃত ইন্টারনেট অব থিংস (আইওটি) ডিভাইসগুলো সর্বক্ষণ ফাইভজিতে যুক্ত থাকবে। ল্যাটেন্সি রেট কম বলে এতদিন ফোরজি দিয়ে রিয়েলটাইমে আইওটি ডিভাইসের নিয়ন্ত্রণ সম্ভব ছিল না। এই সমস্যা এড়ানো যাবে ফাইভজিতে। সব আইওটি ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা যাবে রিয়েল টাইমে। সূত্র : নিউজবাংলা, টিবিএস, জাগোনিউজ। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত