বছরে ৪০০ কোটি টাকা আয় করতে পারেন ফুল বিক্রেতারা
আফরোজা সুলতানা : ফুলের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বলা যেতে পারে সৃষ্টির জন্মলগ্ন থেকে। এক সময় ফুল ছিল অনেকটা সহজলভ্য। চলার পথে যে কোনো গাছ বা ঝোপঝাঁর থেকে ফুল ছিঁড়ে নিতে পারতেন পথচারীরা। কিন্তু সময়ের বিবর্তনে এ ফুল-ই এখন হয়ে ওঠেছে বাণিজ্যিক পণ্য, বহু মানুষের জীবিকা নির্ধারণ হয় এর মাধ্যমে। শুধু অভ্যন্তরীণ বাজারে বিক্রিই নয়, ফুল এখন রপ্তানি হয় বিদেশেও।
বাংলাদেশের ফুল মালিক সমিতি’র তথ্যমতে, উপযুক্ত পরিবেশ পেলে স্থানীয় পর্যায়ে বাণিজ্য ও বিদেশে রপ্তানি করে বছরে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা পর্যন্ত আয় করা সম্ভব?বর্তমানে প্রতি বছর ফুল বিক্রেতারা প্রায় ২০০ কোটি টাকার মতো আয় করছেন? বিভিন্ন উৎসব-পার্বন ও মৌসুম ভেদে ফুলের পাইকারি বাজারে প্রতিদিন ৮ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়।
ফুল ব্যবসায়ীরা বলেন, বাঙালি উৎসব প্রিয় জাতি। বাঙালির প্রত্যেক উৎসব, পার্বণ ও আয়োজনের প্রধান আকর্ষণ হলো নানান রঙ-বেরঙের সুগন্ধি বাহারি ফুলের কারুকাজ ও এর ব্যবহার। জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানগুলোর মধ্যে ১ বৈশাখ, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২৬ মার্চ, ১৬ ডিসেম্বর এসব দিবসে এবং ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসেও ফুলের চাহিদা থাকে অধিক। এছাড়া গায়ে হলুদ, বিবাহ বার্ষিকী, জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী এবং ভ্যালেন্টাইন্স ডে-তে ফুলের দোকানে ভিড় লেগেই থাকে।
আগারগাঁও এলাকার ফুল মালিক সমিতি’র সভাপতি নূর মোহাম্মদ ‘আমাদের অর্থনীতি’-কে বলেন, চলমান করোনা পরিস্থিতি এবং অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আবহাওয়ার বৈরী ভাবের কারণে ২০১৯ সাল থেকে ফুলের উৎপাদন ও চাহিদা আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। ২০১৮ সালে ফুলের বাণিজ্যিক লাভ ছিল ৩০ কোটি। এখন আরও কমে গেছে। তবে এখন ফুলের দাম বেড়েছে।
তিনি বলেন, গত বছর বিজয়ের মাসে রাজধানীর ফুলের বাজারে ৩০ লাখ থেকে ৩৫ লাখ গোলাপ এসেছিলো, এবার ২০ লাখের বেশি হবে না। অন্যদিকে রজনীগন্ধার স্টীক ২০/২১ লাখ ছাড়াবে না। তার মতে, ফুল ব্যবসায়ীদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে তাদের কোনো স্থায়ী দোকান নেই। তারা ভাসমান। যে কোনো সময়ে তারা উচ্ছেদ হতে পারেন। সাভারের হেমায়েতপুরে সরকার ফুল বিক্রেতাদের জন্য ২ বিঘা জমি দিলেও সেটির নির্মাণ কাজ এখনো শেষ হয়নি।
জানা যায়, দেশে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ফুলের চাষ শুরু হয় ১৯৮৩ সালে। রাজধানীর সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার হচ্ছে শাহবাগে। এরপরেই আগারগাঁও। শাহবাগে ফুলের বাণিজ্যিক বিপণন শুরু হয় ১৯৮৯ সাল থেকে। প্রয়াত জনৈক মজনু মিয়া সর্বপ্রথ? বাণিজ্যিকভাবে ফুলের বিপণন শুরু করেন। শাহবাগ শিশু পার্কের উত্তরপাশে ঢাকা ক্লাবের গেট সংলগ্ন (পশ্চিম পাশের্^) ‘মালঞ্চ’ ফুলের দোকানের মাধ্যমে।
এ ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালে শিশুপার্কের পশ্চিম কর্নারে সিটি কর্পোরেশনের জমিতে ফুলের প্রথম বাণিজ্যিক পাইকারি মার্কেট গড়ে ওঠে। সম্পাদনা : সোহেল রহমান