ওমিক্রন ঠেকাতে নানা উদ্যোগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের
শিমুল মাহমুদ : মহামারির শুরু থেকেই জিনের গঠনগত পরিবর্তন ঘটিয়ে ক্রমাগত রূপ পাল্টাচ্ছে করোনা ভাইরাস। রূপান্তরিত এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট আরও বেশি সংক্রামক। একইসঙ্গে বর্তমানে যেসব করোনার টিকা আছে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টটি সেগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতাও হয়তো অতিক্রম করতে পারে। তবে এ নিয়ে এখনো বিস্তর গবেষণা চলছে।
যুক্তরাজ্য শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, ওমিক্রনকে এত হাল্কাভাবে নেয়ার কোন অবকাশ নেই। করোনাভাইরাসের যতগুলো ভ্যারিয়েন্ট এ পর্যন্ত শনাক্ত হয়েছে ওমিক্রন তার ভেতরে সবচেয়ে বেশি সংক্রামক। যুক্তরাজ্যে ওমিক্রন সংক্রমণের ডাবলিং টাইম প্রায় ২.৫ দিন। অর্থাৎ প্রতি আড়াই দিনে ওমিক্রনের সংখ্যা দ্বিগুন হচ্ছে।
তিনি বলেন, ওমিক্রনে আক্রান্ত হলে কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয় না এই ধারণা ভুল। যুক্তরাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে এরই মধ্যে কয়েকজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ধারনা করা হচ্ছে, কোন প্রকার মিটিগেশন ব্যবস্থা না নেয়া হলে যুক্তরাজ্যে ওমিক্রনে সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালের ভর্তির সংখ্যা সপ্তাহে ১০ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
ড. খোন্দকার মেহেদী বলেন, থ্রি-জিন আরটি-পিসিআরের মাধ্যমে সহজেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত করা যায়। যেহেতু বাংলাদেশে এখন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট ডোমিনেন্ট তাই ওমিক্রন শনাক্তে থ্রি-জিন পিসিআর হতে পারে একটি কার্যকরী এবং সহজ পদ্ধতি। থ্রি-জিন পিসিআর টেস্টে এস-জিন ড্রপ আউট বা নেগেটিভ হলেই বোঝা যায় ভাইরাসটি ডেল্টা নয়, এটা ওমিক্রন। এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যাবহৃত হচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা এবং যুক্তরাজ্যে। আর ওমিক্রনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ঝুঁকিপূর্ণ সকলকেই ভ্যাকসিনের তৃতীয় বুস্টার ডোজ দেয়া অতি জরুরী।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, ওমিক্রন টেকাতে আমাদের বর্ডার গুলো সীল করে দশ লাখ এন্টিজেন পাঠিয়ে দিয়েছি। আনঅফিসিয়াল বর্ডার গুলো লোকাল অর্থরিটির সঙ্গে কথা বলেছি, যারাই ঢুকবে কোভিড টেস্ট রিপোর্ট নেগেটিভ না থাকলে দেওয়া যাবে না। পন্যবাহী হোক বা লোকাল হোক।
দ্বিতীয় হলো জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মধ্যে ভ্যাকসিন কমপ্লিট করে ফেলতে হবে। এখন প্রতিদিন দশ লাখ লোককে টিকা দেওয়া হচ্ছে। এ ধারবাহিকতা চলতে থাকলে এক মাসে ৩ কোটি লোককে টিকা দেওয়া যাবে। ইতিমধ্যে ঝুকিপুর্ণ ৫০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই মাসে যদি ৬ কোটি লোককে টিকা দেওয়া যায় তবে কিছুটা হলেও সামাল দেওয়া যাবে।
বুস্টার ডোজ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা ৬ মাস আগে টিকা নিয়েছেন তাদের এন্টিবডি টাইটার কমতে শুরু করেছে। সুতরাং তাদের থার্ড ওয়েব সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। এ জন্য আমাদের বুস্টার ডোজ যেটি দ্রুত দিয়ে দিতে হবে।
বিএসএমএমইউ ফার্মাকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান বলেন, আমরা যদি ১২ কোটি মানুষকে টাগের্ট করি তাহলে সময় লাগবে চার মাস। এর মধ্যে বুষ্টার টিকা পেরালাল চলবে। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন যদি ২৫ লাখ মানুষকে দেওয়া না যায়, অর্থাৎ ২০ প্রথম ডোজ এবং, ৫ লাখ বুস্টার দেওয়া না গেলে এ লক্ষ অর্জিত হবে না।
এখন পর্যন্ত ৫ কোটি মানুষ নিবন্ধনের বাইরে থাকছে। এ যে এ ধরণের উদাসীনতা ও আগ্রহের অভাব এটাকে কমিনিকেশনের মাধ্যমে এমনকি গরীব মানুষদের ইনসেনটিভ দেওয়ার দরকার। একই সঙ্গে ভ্যাকসিনের সুবিধা গুলো মানুষকে জানানো।