ফুটপাতে রাত কাটাচ্ছেন হাজারো পর্যটক তিল ধারণের ঠাঁই নেই পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে
শরীফ শাওন : ডিসেম্বর মাসকে বলা হয় পর্যটন মৌসুম। এসময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটন এলাকাগুলোতে জনসমাগত বাড়তে থাকে। এরই মধ্যে ১৬ ডিসেম্বরসহ সরকারি চাকুরিজীবিদের শুক্র ও শনিবারের ছুটি যোগ হয়েছে। তিন দিনের ছুটিতে পর্যটন এলাকাগুলোতে চাপ বেড়েছে কয়েকগুণ বেশি।
কক্সবাজারের সাগড়পাড়ে প্রায় ৫০০ হোটেল-মোটেল ও কটেজে একসঙ্গে ২ লাখের বেশি পর্যটক থাকতে পারে। তবে তিন দিনের ছুটিতে সকল রুম আগেই বুকিং হয়েছে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, প্রথম দিনেই প্রায় ৩ লাখ পর্যটক এখানে এসেছেন। বর্তমানে প্রায় ৫ লাখ পর্যটক এখানে অবস্থান করছেন।
তারকা হোটেল হোয়াইট অর্কিডের মহাব্যবস্থাপক রিয়াদ ইফতেকার বলেন, তিনদিনের ছুটিতে সাড়ে চার শতাধিক হোটেল-মোটেল ও রিসোর্ট আগাম বুকিং হয়েছে। এ খাতে তিনদিনে প্রায় ৫০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হতে পারে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটরের (টুয়াক) সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথম দিনেই তিন লক্ষাধিক পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। রুম না থাকায় বাকিদের কষ্টে রাত অতিবাহিত করতে হচ্ছে।
ভোগান্তি : রুম না পেয়ে অনেকেই চড়া দামেও রুম না পাওয়ায় রাত কাটাতে হচ্ছে সড়কে, যানবাহনে নতুবা সৈকতের পর্যটন ছাতায়। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের সমাগম থাকায় এক শ্রেণির দালাল চক্র নিজেদের নামে হোটেল রুম বুকিং দিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। এক হাজার টাকার হোটেল কক্ষ থেকে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০ হাজার টাকা।
পরিবহন-খাবার হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতেও বাড়তি দাম রাখছে। সাধারণ একটি রেস্টুরেন্টে শুধু ডাল-ভাতের দাম রাখা হচ্ছে ৪০০ টাকা। এক প্লেট ভাত ও আলুভর্তার দাম রাখা হচ্ছে ৩০০ টাকা। শহরের কলাতলী মোড় থেকে সুগন্ধা পয়েন্ট পর্যন্ত ইজিবাইক ও রিক্সা ভাড়া জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা। পুরো ইজিবাইক ভাড়া নিতে খরচ হতো ৩০ থেকে ৪০ টাকা। এসময় ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা।
এছাড়াও কক্সবাজার শহরের অলিগলি ও হোটেল মোটেল জোনে চলছে পার্কিংয়ের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। শুধু মালামাল ওঠানো-নামানোর ক্ষেত্রে টোল আদায়ের জন্য বাসস্ট্যান্ড-সংলগ্ন যানবাহন ও কুলি স্ট্যান্ড ইজারা নেওয়া হলেও এভাবেই পার্কিংয়ের নামে চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। পাশাপাশি সড়কের উন্নয়ন কাজ চলমান থাকায় যানজটসহ নানা দুর্ভোগের স্বিকার হচ্ছেন পর্যটকরা।
টুরিস্ট পুলিশের এক পরিদর্শক জানান, পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টুরিস্ট পুলিশের ১২টি ইউনিট কাজ করছে। সার্বিক নিরাপত্তা জোরদারে অভিযোগ কেন্দ্র চালুর পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
পর্যটকে মুখর হয়ে উঠেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটা। সূর্যোদয় ও সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করেতে ভোর থেকে মানুষের ভিড় জমে সেখানে। তবে অগ্রিম বুকিংয়ের কারণে হোটেল-মোটেলগুলোর কক্ষ ফাঁকা না থাকায় অনেকেই এসে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন।
খাগড়াছড়ি পর্যটন মোটেলের ইউনিট ব্যবস্থাপক এ কে এম রফিকুল ইসলাম জানান, এখানে ৩০টি আবাসিক হোটেলে থাকলেও এই তিনদিনের জন্য কোন রুম খালি নেই। অগ্রিম বুকিং হওয়ায় অনেকেই এসে বিপত্তিতে পড়ছেন। প্রতিদিন অন্তত ৮ হাজার পর্যটক খাগড়াছড়ি ও সাজেক ভ্রমণ করছেন। আলুটিলা, রিছাংঝরনা, জেলা পরিষদ র্পাকসহ খাগড়াছড়ির বিভিন্ন পর্যটন স্পট পর্যটকে পরিপূর্ণ রয়েছে।
একই অবস্থা রাঙামাটির সাজেকেও। রাঙামাটির আবাসিক হোটেল-মোটেল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি শহরে ৫৩টি হোটেল ও মোটেল রয়েছে। প্রতিদিন অন্তত চার হাজার অতিথি সেখানে থাকতে পারেন। তবে লাখো পর্যটকে মুখরিত রয়েছে ঝুলন্ত সেতু, সুবলং ঝর্ণা, সাজেক ভ্যালি, পলওয়েল পার্ক ও কাপ্তাই হ্রদ। কাপ্তাই হ্রদ ছাড়াও হ্রদের পাড়ের বার্গি, চাংপাং, গাঙ সাবারাং, পেদা টিংটিং, জুমঘর, বড়গাঙ, ইজোর, রাজবাড়ি ও রাজবন বিহারে ঘুরছেন ভ্রমণপ্রেমীরা। প্রতি বছর পর্যটন মৌসুমে জেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পটে সমাগম ঘটে পাঁচ লাখেরও বেশি পর্যটকের।
সাজেক পর্যটনকেন্দ্রের রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেবর্বমন জানান, ১২৫টি রিসোর্ট ও কটেজের সব কক্ষ দেড় মাস আগে ভাড়া হয়ে গেছে। এসব রিসোর্ট ও কটেজে প্রায় সাড়ে তিন হাজার অতিথি থাকতে পারবেন। এই মধ্যে লাখো পর্যটকের আগমন ঘটেছে রাঙামাটিতে।
তিনদিনের ছুটিকে কেন্দ্র করে ১৬ ডিসেম্বর সকল পর্যটন কেন্দ্র উন্মুক্ত করার পাশাপাশি জেলার পর্যটন স্পটগুলো দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণীয় করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে জেলা প্রশাসন। জেলায় পর্যটকদের জন্য রয়েছে শতাধিক হোটেল মোটেল রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস। তবে বিপুল সংখ্যক পর্যটকদের রুম দিতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। আগে থেকে রুম বুকিং হয়ে যাওয়ায় অনেক পর্যটককে রুম দিতে পারছে না ব্যবসায়ীরা।
এদিকে মেঘালয়, নীলাচল, শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগিরি, নীল দিগন্ত, রেমাক্রী, নাফাকুম, দেবতাখুমসহ জেলার সবগুলো দর্শনীয় স্থানে এখন পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়।
সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের শোয়েব জানান, এক সপ্তাহ আগে থেকে সিলেটের অধিকাংশ আবাসিক হোটেল বুকিং দিয়ে রাখেন পর্যটকরা। অতিরিক্ত পর্যটক আসায় তাদের জায়গা দিতে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে।
সিলেটের হযরত শাহজালাল (রহ)-এর মাজার, শাহপরান (রহ.)-এর মাজার, জাফলং, পাংতুমাই ঝর্ণা, সংগ্রামপুঞ্জি ঝর্ণা, রাতারগুল সোয়াম ফরেস্ট, কুলুম ছড়া, মালনীছড়া চা বাগান, খাদিম জাতীয় উদ্যান, ডিবির হাওর, উৎমাছড়া ঝর্ণা, লোভাছড়া, লালাখাল, বিছানাকান্দিও ভোলাগঞ্জ সাদা পাথরসহ সুনমাগঞ্জ ও মৌলভীবাবাজারের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের উবচে পড়া ভিড়। বিশেষ করে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও শাহপরান (রহ.) এর মাজারে ভক্তদের ভিড় বেড়েছে কয়েকগুণ।
শাহজালাল (রহ.) এর মাজার গেটের হোটেল স্টার প্যাসিফিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফালাহ উদ্দিন আলী আহমদ জানান, সিলেটে প্রথম থেকে নি¤œ সারির সব শ্রেণির হোটেল এখন টুইটুম্বুর।