২০২৫ সালের মধ্যে বিজ্ঞাপনের বাজার দাঁড়াবে ১ লাখ কোটি ডলারে
অর্থনীতি ডেস্ক : ২০২৫ সালের মধ্যে বিশ্বের বিজ্ঞাপন রাজস্বের অর্ধেকেরও বেশি যাবে তিন কোম্পানির ঘরে- অ্যালফাবেট, মেটা ও আমাজন। তখন বৈশ্বিক বিজ্ঞাপন বাণিজ্যের আকার দাঁড়াবে এক লাখ কোটি ডলারের বেশি। বর্তমানে বিজ্ঞাপনী রাজস্বের প্রায় ৪৬ শতাংশ পাচ্ছে এই তিন কোম্পানি। ২০১৩ সালে যা ছিল মাত্র ১০ শতাংশ। এক গবেষণা প্রতিবেদনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।
সামাজিক মাধ্যমের বাড়বাড়ন্ত হলেও চলতি বছর মূলধারার পত্রিকার (ছাপা/অনলাইন) রাজস্ব আয় কমেছে ৪ শতাংশ। এমনকি আগামী দুই বছরও সংবাদ ব্র্যান্ডের রাজস্ব সংকোচন হবে বলে প্রতিবেদনে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
গত কয়েক বছরে মূলধারার গণমাধ্যমে এরা সামনের কাতারে চলে এসেছে। অথচ সামাজিক মাধ্যমগুলো মূলধারার গণমাধ্যমের কনটেন্ট বা আধেয় ব্যবহার করে ব্যবসা করছে। এ নিয়ে সারা পৃথিবীতে সামাজিকমাধ্যমের সঙ্গে মূলধারার গণমাধ্যমের বাহাস চলছে। তবে অস্ট্রেলিয়া সরকার সম্প্রতি ফেসবুককে সে দেশের গণমাধ্যমের সঙ্গে বিজ্ঞাপনের রাজস্ব ভাগাভাগি করতে বাধ্য করে।
‘ডব্লিউএআরসির বৈশ্বিক বিজ্ঞাপন ধারা: কোথায় যাচ্ছে টাকা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে সামাজিকমাধ্যমের এই জয়জয়কারের তথ্য-উপাত্ত প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২০ সালে বিজ্ঞাপনের জগতে ধস নামলেও ২০২১ সালে তা অনেকটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ বছর বিজ্ঞাপন ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। সব মিলিয়ে চলতি বছর ৭৭ দশমিক ১ বিলিয়ন বা ৭ হাজার ৭১০ কোটি ডলারের বিজ্ঞাপন বাণিজ্য হয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বিজ্ঞাপনের বাজার দাঁড়াবে এক লাখ কোটি ডলারে।
কত টাকার বিজ্ঞাপন দেওয়া হচ্ছে বা কোন কোন কোম্পানিকে বিজ্ঞাপনদাতারা বিজ্ঞাপন দিচ্ছেন, সেই তথ্যও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে। ১ হাজার ৫০০ বিজ্ঞাপনদাতা বলেন, আগামী বছর তাঁরা টিকটক ও আমাজনে বেশি বিজ্ঞাপন দেবেন; আর ৬১ শতাংশ ইউটিউব, ৬০ শতাংশ ইনস্টাগ্রাম ও ৬১ শতাংশ বলেন গুগলের কথা।বাংলাদেশের বিজ্ঞাপন জগতে এখনো ছাপা পত্রিকার প্রাধান্য থাকলেও বৈশ্বিক পরিস্থিতি একেবারেই ভিন্ন। বলা যায়, ছাপা পত্রিকার বিপদ আসন্ন। বিজ্ঞাপনদাতারা আগামী বছর বিজ্ঞাপনে কত ব্যয় করবেন, প্রতিবেদনে সেই তালিকা দেওয়া হয়েছে। দেখা যায়, মাত্র ৫ শতাংশ বিজ্ঞাপনদাতা বলেছেন, আগামী বছর ছাপা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে। তার চেয়েও বড় শঙ্কার কারণ হলো, ৫৫ শতাংশ বিজ্ঞাপনদাতা ২০২২ সালে ছাপা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন ব্যয় হ্রাস করবেন বলে জানান। এমনকি রেডিও বিজ্ঞাপনে ব্যয় বাড়াবেন ১৪ শতাংশ বিজ্ঞাপনদাতা।
এ ছাড়া ৭৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান আগামী বছর অনলাইন ভিডিও কনটেন্টে ব্যয় বাড়াবে। সামাজিকমাধ্যম, মোবাইল, অনলাইন সার্চ, পডকাস্ট ও অনলাইন ডিসপ্লেতে বিজ্ঞাপনে ব্যয় বাড়াবে যথাক্রমে ৬৮, ৬৬, ৬১, ৫৪ ও ৪৭ শতাংশ বিজ্ঞাপনদাতা।
চলতি বছর সামাজিক মাধ্যম ও ওটিটি মাধ্যমের বিজ্ঞাপন আয় বেড়েছে যথাক্রমে ৪১ দশমিক ৯ ও ৪১ দশমিক ৬ শতাংশ। সার্চ ইঞ্জিন ও ই-কমার্সের আয় বেড়েছে ৩৯ দশমিক ৪ ও ৩৬ শতাংশ। কিন্তু অনলাইন অডিও ও বেতারের আয় বাড়লেও ম্যাগাজিন ও সংবাদ ব্র্যান্ডের আয় কমেছে। শুধু তাই নয়, আগামী দুই বছর তাদের বিজ্ঞাপন আয় সংকুচিত হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। অর্থাৎ সার্চ ও সামাজিক মাধ্যমের প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি।
গত বছর মহামারির শুরুতে চলচ্চিত্রের পর্দা গুটিয়ে নেওয়া হয়। নতুন সিনেমা নির্মাণ একরকম বন্ধ হয়ে যায়। তবে ধীরে ধীরে স্বাভাবিকতা ফিরে আসায় চলতি বছর চলচ্চিত্রের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সবচেয়ে বেশি।
গত বছর মন্দাভাবের পর এ বছর চল্লিশ বছরের মধ্যে সামগ্রিকভাবে বিজ্ঞাপনের রাজস্ব বৃদ্ধির হার ছিল সর্বোচ্চ ২৩ দশমিক ৮ শতাংশ। তবে গত বছর বিজ্ঞাপন বাণিজ্য অত্যন্ত কমে যাওয়ার কারণে এবার প্রবৃদ্ধির হার অনেকটাই বেশি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
প্রতিবেদনের তথ্যানুসারে, ই-কমার্স খাত ভবিষ্যতে ডিজিটাল বিজ্ঞাপনের সিংহভাগ রাজস্ব পাবে। বিজ্ঞাপনদাতাদের দুই-তৃতীয়াংশ ই-কমার্সে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর সামাজিকমাধ্যমের মধ্যে ইনস্টাগ্রাম সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
যোগাযোগ ও পর্যটন খাত ছাড়া বাকি সব খাতের বিজ্ঞাপন ব্যয় প্রাক-কোভিড পর্যায়ে ফেরত গেছে। আর টেলিকম ও পরিষেবা খাত ৩ হাজার ৫০০ কোটি ডলার বেশি ব্যয় করেছে। সূত্র : জাগোনিউজ, আরটিভি অনলাইন। গ্রন্থনা : শোভন দত্ত