মিরসরাইয়ে বেসরকারি খাতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ
সোহেল রহমান : চট্রগ্রামের মিরসরাইয়ে বেসরকারি খাতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাস/আরএলএনজি ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ‘বিল্ড-ওন-অপারেট’ (বিওও) ভিত্তিতে ‘ইন্ডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার’ (আইপিপি) হিসেবে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মাণ করবে কনসোর্টিয়াম অব ‘কনফিডেন্স পাওয়ার হোল্ডিংস লিমিটেড’, ‘জি ই ক্যাপটিাল ইউএস হোল্ডিং ইনকর্পোরেশন’, ‘কনফিডেন্স পাওয়ার লিমিটেড’ ও ‘ইলেক্ট্রাপ্যাক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড’। ‘সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র আগামী বৈঠকে এ-সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে।
বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রস্তাবিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে ২২ বছর মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে সরকার। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হলে ২২ বছরে ৩৭ হাজার ৪৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা; আর আরএলএনজি মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলে ৬৯ হাজার ১৫২ কোটি ১৬ লাখ টাকা পরিশোধ করতে হবে সরকারকে। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুতের ট্যারিফ হারের বিষয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্যাস ভিত্তিক প্রতি মেগাওয়াট/ঘন্টা লেভেলাইজড ট্যারিফ চার্জ ৩.৬৭৯ মার্কিন সেন্ট সমতুল্য বাংলাদেশী মুদ্রায় ২.৯৪৩২ টাকা এবং আরএলএনজি ভিত্তিক প্রতি মেগাওয়াট/ঘন্টা লেভেলাইজড ট্যারিফ চার্জ ৬.৭৯৬ মার্কিন সেন্ট সমতুল্য বাংলাদেশী মুদ্রায় ৫.৪৩৬৮ টাকা। প্রকল্পের কমার্শিয়াল অপারেশন ডেট চুক্তি কার্যকর হওয়ার তারিখ থেকে বাস্তবায়ন সময়কাল ৪ বছর ৯ মাস প্রস্তাব করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, ‘প্রাইভেট সেক্টর পাওয়ার জেনারেশন পলিসি অব বাংলাদেশ ১৯৯৬’-এর আওতায় বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য গঠিত কনসোর্টিয়াম-এর পক্ষ থেকে স্ব-উদ্যোগে ২০১৮ সালে প্রস্তাব দাখিল করা হয়। প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পাওয়ার ইভ্যাকুয়েশনের জন্য স্পন্সর নিজ খরচে ও নিজ উদ্যোগে প্রয়োজনীয় ট্রান্সমিশন লাইন, সাব-স্টেশন নির্মাণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্পে গ্যাস/আর-এলএনজি সরবরাহের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া সাপেক্ষে সঞ্চালন পাইপলাইনের অপটেক থেকে আলোচ্য বিদ্যুৎ কেদ্র পর্যন্ত সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইন ও আরএমএস নির্মাণসহ সম্পূর্ণ প্রকল্প ব্যয় নির্বাহ করার কথা প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়।
প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস সরবরাহ বিষয়ে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ তাদের মতামতে জানায় যে, প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে ১০০ এমএমএসসিএএফডি গ্যাস সরবরাহের জন্য ২০ ইঞ্চি ব্যাসের প্রায় ৭ কিলোমিটার বিতরণ পাইপলাইন নির্মাণ, ১২০ এমএমসিএফডি ক্ষমতার আরএমএস/ডিআরএস স্থাপন এবং আনুষঙ্গিক পূর্ত কাজ গ্রাহকের নিজস্ব অর্থায়নে ডিপোজিট ওয়ার্ক হিসেবে ‘কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড’ কেজিডিসিএল)-এর তত্ত্বাবধানে প্রস্তাবিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গ্যাস/আরএলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাব মতে, দেশে প্রতি বছর বিদ্যুতের চাহিদা ১০ থেকে ১৪ শতাংশ হারে বাড়ছে। বর্ধিত চাহিদা মেটানোর জন্য সরকার স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। ২০৪১ সালের মধ্যে সমৃদ্ধশালী উন্নত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় বাস্তবায়নে বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আওতায় ২০৩০ সালের সালের মধ্যে ৪০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
জানা যায়, বর্তমানে দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ক্যাপটিভ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ ২৫ হাজার ২৩৫ মেগাওয়াট। অপরদিকে ‘বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড’-এর রিটায়ারমেন্ট শিডিউল অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৬ হাজার ৪২৪ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ কেন্দ্র অবসরে যাবে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের মহাপরিকল্পনার আওতায় নির্ধারিত বিদ্যুৎ চাহিদা, রিটায়ারমেন্ট শিডিউল এবং দেশব্যাপী প্রায় শতভাগ বিদ্যুতায়নের ফলে বর্ধিত চাহিদা পূরণে বছরভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন।