জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, রাজস্ব ঘাটতি ও রেমিট্যান্সের নি¤œ গতিতে উদ্বিগ্ন সরকার
সোহেল রহমান : চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে দেশের অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের উঠা-নামার প্রেক্ষিতে আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের খসড়া রূপরেখা প্রণয়নে কিছুটা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন সরকারের নীতি-নির্ধারকরা। বিশেষত: লক্ষ্যমাত্রায় তুলনায় রাজস্ব ঘাটতি ও রেমিট্যান্সের নি¤œ গতি সরকারকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। অন্যদিকে রপ্তানি আয় বাড়লেও আমদানি ব্যয় বেড়েছে আরও বেশি। ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক্রমশ: কমছে। বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য নেতিবাচক অবস্থায় রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আজ আর্থিক, মুদ্রা, ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ দুই নীতি-নির্ধারণী বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল-এর সভায় আমদানি-রপ্তানি, মূল্যস্ফীতি, রেমিট্যান্সসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে এবং বাজেট ব্যবস্থাপনা ও সম্পদ কমিটি’র বৈঠকে চলতি অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়ন পরিস্থিতি, সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি), রাজস্ব আদায় ও জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করা হবে।
সূত্রমতে, অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে দেখা যাচ্ছে যে, দেশের অর্থনৈতিক খাতে বেশ কয়েকটি ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে। এর সঙ্গে করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ‘অমিক্রম’ এখন প্রায় মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো যদি আবার লকডাউনে চলে যায় তাহলে তৈরি পোশাকসহ দেশের সার্বিক রপ্তানি মারাত্মক ব্যহত হবে। এসব কারণে চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি (৭.২) লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী অর্জন করা যাবে কি নাÑ তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে বলে সম্প্রতি এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)-এর এক পূর্বাভাসে বলা হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের মাঝামাঝি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে অর্থনৈতিক সূচকগুলো পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর প্রাথমিক তথ্যমতে, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও রাজস্ব আদায় গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
অন্যদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ১ হাজার ৯৭৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ দশমিক ২৯ শতাংশ বেশি। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) ২ হাজার ৫৮৩ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছে। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫১ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি।
এদিকে ধাক্কা লেগেছে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত প্রবাসী আয়ে। ১৮ মাসের মধ্যে গত নভেম্বরে সর্বনি¤œ প্রবাসী আয় এসেছে। গত নভেম্বরে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৫ কোটি ৩৭ লাখ ডলার। এর আগে ২০২০ সালের মে মাসে ১৫০ কোটি ৪৬ লাখ ডলার আয় এসেছিল। এর মাঝের মাসগুলোতে সব সময় প্রবাসী আয় বেশি ছিল। ২০২০ সালের জুলাইয়ে প্রবাসী আয় ২৫৯ কোটি ডলার ছাড়িয়েছিল।