লাখের কমে কর্মী যাবে মালয়েশিয়া থাকবে না সিন্ডিকেট : প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী
অর্থনীতি ডেস্ক : মালয়েশিয়াতে কর্মী পাঠাতে লাখেরও কম টাকা ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। তিনি বলেছেন, জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর ডাটাবেজ থেকেই কর্মী পাঠানো হবে। এছাড়া আগের মতো কোনো সিন্ডিকেট থাকবে না। সকল বৈধ রিক্রুটিং এজেন্সিই কর্মী পাঠাতে পারবে। মঙ্গলবার প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, আগে কর্মী পাঠাতে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করা ছিল, এবার আরও কম হবে। মালয়েশিয়া এবং বাংলাদেশের দুই দেশের এজেন্সি যৌথভাবে কাজ করবে। আর বাংলাদেশ ভাগের এজেন্সি চার্জ থেকে শুরু করে সব ধরনের খরচ বহন করবেন শ্রমিক। আর মালয়েশিয়া অংশের সকল চার্জ বহন করবেন নিয়োগকর্তা।
মন্ত্রী জানান, যে সিন্ডিকেটের কারণে তিন বছর আগে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, সেই সিন্ডিকেট এবার থাকছে না। এবার কর্মী পাঠাতে কোনো ধরনের সিন্ডিকেট কিংবা গ্রুপিং করার সুযোগ থাকবে না। তবে এবার কর্মি নিয়োগে মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্সি জড়িত থাকছে, যা আগে ছিল না।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, শ্রমিকের স্বার্থ সংরক্ষণ করাই হচ্ছে মূল লক্ষ্য। শুধুমাত্র বৈধ রিক্রুটমেন্ট লাইসেন্সধারীরা কর্মী পাঠাতে পারবেন।
তিনি বলেন, কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি। কোনো কর্মী যেন টাকা পয়সার লেনদেন না করেন। যখন কর্মী পাঠানো শুরু হবে তখন সেটা সরকার জানাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, দুই দেশের মধ্যে যে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে এর ফলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং প্রত্যাবাসনের আদর্শ কাঠামো প্রতিষ্ঠার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের শ্রমিকদের কর্মসংস্থান একটি অন্যতম সহযোগিতার ক্ষেত্র এবং পারস্পরিকভাবে উপকারী বলে দুই দেশ বিশ্বাস করে। বাংলাদেশের কর্মীরা যেমন মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে অবদান রাখছে, তেমনি বাংলাদেশের উন্নয়নেও অবদান রেখে যাচ্ছে যা দুই দেশই স্বীকার করে।
দুই দেশের আইন, বিধি, প্রবিধান, জাতীয় নীতি এবং নির্দেশাবলীর আলোকে এই সমঝোতা স্মারকে কর্মীদের অধিকার ও মর্যাদাকে অধিকতর সুরক্ষিত করা হয়েছে।
এই সমঝোতা স্মারকের আওতায় বাংলাদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রান্তের সকল খরচ নিয়োগকর্তা বহন করবেন। যেমন- রিক্রুটমেন্ট এজেন্সি নিয়োগ, মালয়েশিয়ায় আনয়ন, আবাসন, কর্মে নিয়োজন এবং কর্মীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর খরচ বহন করবেন। নিয়োগকর্তা নিজ খরচে মালয়েশিয়ান রিক্রুটিং এজেন্ট নিযুক্ত করতে পারবেন। মালয়েশিয়ায় আসার পর বাংলাদেশি কর্মীর ইমিগ্রেশন ফি, ভিসা ফি, স্বাস্থ্য পরীক্ষার খরচ, ইনস্যুরেন্স সংক্রান্ত খরচ, করোনা পরীক্ষার খরচ, কোয়ারেন্টাইন সংক্রান্ত খরচসহ সকল ব্যয় মালয়েশিয়ার নিয়োগকর্তা/ কোম্পানি বহন করবেন।
নিয়োগকর্তা কর্মীর মানসম্মত আবাসন, বীমা, চিকিৎসা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করবে। ফলে আশা করা যায় কর্মীর অভিবাসন খরচ অনেক কমে যাবে।
প্রত্যেক কর্মীকে মালয়েশিয়ার এমপ্লয়িজ সোশ্যাল সিকিউরিটি এক্ট ১৯৬৯’র আওতায় কর্মকালীন দূর্ঘটনা বা কাজের কারণে শারীরিক সমস্যা হলে চিকিৎসা, পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণ পাবে।
ফলে কর্মী ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা, অস্থায়ী অক্ষমতার সুবিধা, স্থায়ী অক্ষমতার সুবিধা, নিরবচ্ছিন্ন উপস্থিতি ভাতা, ডিপেন্ডেন্ট বেনিফিট, পুনর্বাসন সুবিধাসহ মালয়েশিয়ার আইনানুযায়ী প্রাপ্য সুবিধাদি পাবেন।
এই সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে পাঠানো বৈধ রিক্রুটমেন্ট এজেন্সিগুলোর তালিকা থেকে নিয়োগকারী মালয়েশীয় সরকারের বিধি অনুযায়ী বাংলাদেশী এজেন্ট বেছে নিবেন। এ বিষয়ে মালয়েশীয় সরকার স্বচ্ছতা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করবে বলে সমঝোতা স্মারকে উল্লেখ করা হয়েছে।
এই সমঝোতা স্মারক সইয়ের ফলে পরবর্তী প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনপূর্বক অচিরেই বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় নতুন কর্মী নিয়োগ শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
উল্লেখ্য, কর্মী পাঠাতে সিন্ডিকেট আর অনিয়মের অভিযোগে মালয়েশিয়া সরকার ২০১৮ সালের অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগে স্থগিতাদেশ আরোপ করে। এরপর আবারও কর্মী পাঠাতে উভয় দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। যার ফলশ্রুতিতে চলতি বছরের ১৯ ডিসেম্বর সমঝোতা স্বারকে সই করে দুই দেশ।
মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগের জন্য মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে সমঝোতা স্মারক সই করেন বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব ইমরান আহমদ, এমপি এবং মালয়েশিয়া সরকারের মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী দাতুক সেরি এম সারাভানান।