২০২৫ সালের মধ্যে অনলাইন স্ট্রিমিংয়ের বাজার দাঁড়াবে ১২৪.৬ বিলিয়ন ডলারে
ইমরুল শাহেদ: করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর সিনেমা হলের বিকল্প হিসেবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য বেছে নেওয়া হয় ‘ওভার-দ্যা-টপ’ বা ওটিটি প্ল্যাটফর্মকে। দর্শক ঘরে বসে বিনোদন উপভোগের জন্য এই মাধ্যমটিকে লুফে নেয়। সেই সুবাদে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম যথেষ্ট জনপ্রিয়তা পায়। এই প্ল্যাটফর্মটি বিশ্ব সাংস্কৃতিক মেল বন্ধনের জন্যও হয়ে উঠে অন্যতম সেতু। কিন্তু মহামারি এখনো থাকলেও অনেকটা ফিকে হয়ে গেছে। ডেল্টা বা ওমিক্রণ ভাইরাস অনেক বেশি মারাত্মক হলেও মানুষ এখন আতঙ্কগ্রস্ত হয় কম। কারণ ভাইরাস মোকাবিলায় মানুষ অভ্যস্ত হয়ে উঠেছে। আগে মানুষ ইন্টারনেটের উপর নির্ভর করত সংবাদ, বিনোদন, শিক্ষা এবং অন্যান্য বিষয়ের জন্য। এসময়টাতে ওটিটি ভিডিওর জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে।
তখন ধরা হয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে অনলাইন স্ট্রিমিং মার্কেট গিয়ে দাঁড়াবে ১২৪.৬ বিলিয়ন ডলারে। এটাকে কেন্দ্র করেই ব্যবসা বাণিজ্যও বাড়তে থাকে। কিন্তু মহামারির ব্যাপারে মানুষ বেপরোয়া হয়ে উঠার পর বিনোদন আবারও সিনেমা হল কেন্দ্রিক হয়ে উঠতে শুরু করে। সর্বশেষ ‘স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম’ ছবিটি প্রমাণ করে দিল চলচ্চিত্র বিনোদন উপভোগের জন্য সিনেমা হলই হলো প্রকৃত স্থান, হাতের এনড্রয়েড বা ঘরের জায়ান্ট পর্দা নয়। এই ছবিটির কোনো স্ট্রিমিং সুবিধা নেই। ছবিটির পরিবেশক সনি কর্পোরেশন বলেছে, ‘স্পাইডার-ম্যান: নো ওয়ে হোম’ এক সপ্তাহে ব্যবসায়ের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করে ২৬০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে। এই আয় শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার বাজার থেকেই।
হলিউড, বলিউডও যদি এ ধারায় চলচ্চিত্র নির্মাণ শুরু করে তাহলে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকা থাকবে না। অন্যান্য কনটেন্টস থেকে ওটিটিকে উজ্জীবিত থাকতে হবে। উল্লেখ করার বিষয় হলো, ঢাকা কেন্দ্রিক বিনোদন জগতের জন্য ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম সক্রিয় রয়েছে। সেগুলোকে নিজেদের মতো করে কনটেন্টস খুঁজে নিতে হচ্ছে। কিছু ওটিটি প্ল্যাটফর্ম বাইরের চলচ্চিত্র কিনছে। কিন্তু ন্যায্য দাম দিতে পারছে না। ঘরের বা বাইরের দর্শক পছন্দের কনটেন্টস না হলে সেটা প্রত্যাখান হবেই। তাই তাদের পক্ষে ন্যায্য দাম দেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এমনি দোলাচলে চলছে দেশিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম।
পক্ষান্তরে বিদেশে ওটিটি প্ল্যাটফর্ম ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত না হলেও জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলো ক্রমশই নেটওয়ার্কের আওতা বাড়াচ্ছে। নেটফ্লিক্সের বাজার আছে বিশ্বের ১৯০টি দেশে। আমাজন প্রাইম ভিডিওর আওতা বেড়েছে দুশোরও বেশি দেশ ও অঞ্চলে। ডিজনির আওতা ৬০টির মতো দেশ হলেও এর পরিচিতি আছে বিশ্বময়। হলিউডের পর বলিউড বা ভারতের বিনোদন জগতকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে নেটফ্লিক্স ও আমাজন প্রাইম ভিডিওকে। ভারতের বাজারে নেটফ্লিক্স আর ডিজনির সঙ্গে পাল্লা দিতে ‘জি এন্টারটেইনমেন্ট’ এর সঙ্গে একীভূত হচ্ছে সনি পিকচার্সের ভারতীয় ইউনিট, যার মধ্য দিয়ে গঠিত হচ্ছে বিরাট এক টিভি নেটওয়ার্ক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, জি এন্টারটেইনমেন্টের পরিচালনা পর্ষদ এই মার্জার চুক্তিতে চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। ভারতের স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে তারা বিষয়টি জানিয়েও দিয়েছে। এই চুক্তির ফলে এতদিনের প্রতিদ্বন্দ্বি দুই কোম্পানির নেটওয়ার্ক, টেলিভিশন চ্যানেল, ফিল্ম অ্যাসেট, স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, প্রোডাকশন অপারেশন্স এবং প্রোগ্রামের সংগ্রহশালা একীভূত হয়ে যাবে। তাতে ভারতের অন্যতম বৃহৎ বিনোদন নেটওয়ার্কে পরিণত হবে এই একীভূত কোম্পানি।
এই কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত হবে একীভূত কোম্পানি হিসেবে। জি এন্টারটেইনমেন্টের প্রধান পুনিত গোয়েঙ্কাই কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার পদে থাকবেন বলে রয়টার্সের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে। ভারতের বাজারে এখনও কেবল টিভির প্রাধান্য থাকলেও নেটফ্লিক্স, অ্যামাজনের প্রাইম ভিডিও এবং ডিজনির হটস্টার আসার পর গত কয়েক বছরে স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মগুলোর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা তৈরি হয়েছে।
একীভূত হওয়ার ফলে সনি-জি জোটের হাতে থাকবে সংবাদ, বিনোদন, খেলা, সিনেমা মিলিয়ে প্রায় ৭৫টি টিভি চ্যানেল আর জি ফাইভ ও সনি লাইভের মত স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম। তাতে ডিজনির স্টার নেটওয়ার্কের পর ভারতের বিনোদন বাজারে সবচেয়ে বড় খেলোয়াড় হয়ে উঠবে এই জোট। চুক্তি শেষে সনি পিকচার্সের হাতে যাবে নগদ ১.৫ বিলিয়ন ডলার। রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুনিত গোয়েঙ্কাকে জি এন্টারটেইনমেন্টের প্রধান নির্বাহী পরিচালনা পর্ষদ থেকে সরিয়ে ব্যবস্থাপনায় রদবদলের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন শীর্ষ বিনিয়োগকারীরা। এখন সেই জটিলতা কাটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।