দুই মেয়রকে আসনে বসিয়ে চাকা ঘুরল ঢাকার ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি যুগের’ সবুজ বাসের
অর্থনীতি ডেস্ক : দীর্ঘ আলোচনার পথ পেরিয়ে অবশেষে সড়কে নেমেছে ঢাকা নগর পরিবহনের বাস; কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর থেকে কাচপুর পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রুটে চলতে শুরু করেছে একক কোম্পানির ৫০ বাস। রোববার সবুজ রঙয়ের বাসগুলো যখন মোহাম্মদপুর বাসস্ট্যান্ডের বিআরটিসি ডিপো থেকে চলতে শুরু করলো ঢাকা সিটির দুই মেয়র যেন রাজধানীর সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোর ‘আশাকে’ সঙ্গী করে উঠে পড়লেন বাসে; শুরু হলো ‘ফ্র্যাঞ্চাইজি যুগের’।
খুশিতে কোলাকুলিও করলেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম।
এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। বাস ফ্র্যাঞ্চাইজির আওতায় পথ চলা শুরু হয় নবগঠিত ‘ঢাকা নগর পরিবহনের’ সবুজ রঙের বাসের।
শুরুতেই ঘাটারচর থেকে নগরীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে কাচপুর পর্যন্ত রুটে চলবে ৫০টি বাস; যেখানে রয়েছে বিআরটিসির ৩০টি ও ট্রান্সসিলভা পরিবহনের ২০টি বাস। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শিগগির আরও কয়েকজন পরিবহন মালিকের বাস যুক্ত হবে এ রুটে। ঢাকা নগর পরিবহন নামের কোম্পানি গঠনের মধ্যে দিয়ে শুরু এ কার্যক্রমে বর্তমানে এ রুটে চলাচলকারী অন্য কোম্পানির বাসও চলবে। তবে ৩১ জানুয়ারির পর অন্য বাস আর থাকবে না।
ঢাকা নগর পরিবহনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু বাস ফ্যাঞ্চাইজি যুগের; চলবে ঘাটারচর-কাচপুর রুটে। রোববার উদ্বোধনের পর একটি বাসে উঠে বসেন ঢাকা সিটির দুই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।ঢাকা নগর পরিবহনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু বাস ফ্যাঞ্চাইজি যুগের; চলবে ঘাটারচর-কাচপুর রুটে। রোববার উদ্বোধনের পর একটি বাসে উঠে বসেন ঢাকা সিটির দুই মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ও আতিকুল ইসলাম।সরকার নির্ধারিত হারে প্রতি কিলোমিটারের ভাড়া ধরা হয়েছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। ঘাটারচর থেকে কাচপুর ব্রিজ পর্যন্ত রুটে বাসের টিকেট কাটতে ২৫টি কাউন্টার থাকবে। সবাইকে টিকেট কেটেই বাসে উঠতে হবে।
রোববার সকালে হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েই ওবায়দুল কাদের সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ে যান। সেখান থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন।
দিনটি স্মরণীয় হয়ে থাকবে উল্লেখ করে তিনি স্মরণ করেন প্রয়াত মেয়র আনিসুল হককে, যিনি এ কার্যক্রম শুরু করেছিলেন।
তার মৃত্যুতে প্রথমে এ উদ্যাগে ভাটা পড়লেও ঢাকা সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণের দুই মেয়র এ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে কথা দিয়েছিলেন বলে জানান ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, আমাকে যে কথা দিয়েছিলেন, ঢাকাবাসীকে যে আশ্বাস দিয়েছিলেন, তারা আশ্বাস রেখেছেন। এটা অত্যন্ত দূরহ কাজ।
দুর্ঘটনা যেমন দুর্ভাবনা, তেমনি যানজটও দুশ্চিন্তার কারণ। এ দুটি মাথায় রেখেই সুশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থার জন্য দুই মেয়র যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার সফল্য কামনা করি। আগেই বলেছি, আমার তরফ থেকে সব ধরনের সহযোগীতা এই মন্ত্রণালয় থেকে করা হবে।
আরও আগেই কাজটি করার দরকার ছিল জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, আমাদের উন্নয়ন আর অর্জনের সঙ্গে এ নগরীর যে দুরাবস্থা, অপরিচ্ছিন্ন-অপরিকল্পিত একটি শহর, এটি মানায় না। ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনার যে বহুদিনের উত্তরাধিকার আমরা বহন করে চলছি এবং দূষনের দিক থেকেও রেকর্ড আছে।
এসব সমাধানে দুই মেয়র উঠে পড়ে লেগেছেন। তারা পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন, এটি অত্যন্ত শুভ দিক। আমাদের অনেক আগে যা হওয়া উচিত ছিলো তা হয়নি। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য।
সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, আমরা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক উন্নত করেছি। সমতল থেকে পাহাড় পর্যন্ত সড়কের নেটওয়ার্ক, আজকে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দৃশ্যমান হচ্ছে। আজকে ঢাকায় তরুণ প্রজন্মের স্বপ্নের প্রকল্প মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন সিক্স আগামী বছরই উদ্বোধন করতে পারবো।এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
উন্নয়নের সুফল বেশ কিছু সমস্যা ম্লান করে দেয় উল্লেখ করে কাদের বলেন, আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে আজ সড়কে শৃঙ্খলা, পরিবহনে শৃঙ্খলা। পরিবহন আর সড়কে শৃঙ্খলা না থাকলে জনগণ উন্নয়নের সুফল পাবে না।
কাজের প্রতি সবাইকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমি ১২ দিন হাসপাতালে ছিলাম। আমি সেখান থেকে সরাসরি বাসায় যায়নি, এখানে চলে এসেছি। এর মাধ্যমে এটিই বোঝাতে চাই, এই উদ্যোগকে আমি কতটা গুরুত্ব দিয়ে থাকি।
সড়কে শৃঙ্খলা আনার উদ্যোগে এমন ৪২টি রুটের পরিকল্পনা আছে জানিয়ে তিনি বলেন, লং ওয়ে টু গো। মাত্র শুরু হলো। এগুলো ঢাকা সিটি অ্যান্ড অ্যারাউন্ড মানে ডিটিসিএর যে এলাকাটা। এর মধ্যে নরসিংদী, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর আছে।