বৈষম্য নিরসন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চার দফা সুপারিশ ‘করোনা মহামারিতে কেউ কেউ কল্পনাতীত ধনী হয়েছেন’
সোহেল রহমান : করোনা মহামারি দেশের শ্রেণিকাঠামো পাল্টে দিয়েছে। এ সময়ে কেউ কেউ কল্পনাতীত ধনী হয়েছেন। একই সময়ে দেশে আয় বৈষম্য ও সম্পদ বৈষম্য বিপদসীমা অতিক্রম করেছে। অন্যদিকে করোনার কারণে দেশের ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। করোনার আগে দেশে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ছিল ৩ কোটি ৪০ লাখ। গত বছরের ২৬ মার্চ থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ৬৬ দিনের টানা বিধি-নিষেধের সময় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে ৬ কোটি ৮০ লাখে দাঁড়িয়েছে।
‘শোভন সমাজের লক্ষ্যে একটি শোভন অর্থনীতি ব্যবস্থা’ গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি’র দু’দিনব্যাপী ২১তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের সমাপনী দিবসে (শনিবার) ‘কোভিড-১৯ থেকে শোভন সমাজ’ শীর্ষক মূল প্রবন্ধে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও সমিতি’র সভাপতি ড. আবুল বারকাত এসব তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেন।
করোনা পরিস্থিতিতে উদ্ভুত বৈষম্য নিরসন ও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে চার দফা সুপারিশ তুলে ধরেন তিনি। এগুলো হচ্ছেÑ ধনীদের সম্পদ গরিবের মধ্যে পুনর্বণ্টনের ব্যবস্থা করা; বেকারত্ব দূরীকরণ ও কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রয়োজনে টাকা ছাপানো; করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি বৈশ্বিক সম্পদ তহবিল গড়ে তোলা এবং কালোটাকা ও অর্থ পাচার বন্ধ করা।
সুপারিশগুলোর বিষয়ে ড. বারকাত বলেন, ধনীদের সম্পদ গরিবের মধ্যে পুনর্বণ্টন করা গেলে একদিকে আয় বৈষম্য ও সম্পদ বৈষম্য কমবে, অন্যদিকে অর্থনীতিতে প্রবাহ বাড়বে। অনেকের কাছে প্রস্তাবটি বাস্তবতা বিবর্জিত মনে হলেও এটি কোনো অবাস্তব কিংবা অসম্ভব কিছু নয়।
করোনার ক্ষতি পোষাতে প্রয়োজনে টাকা ছাপানোর পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, টাকা ছাপানোর কথা বললেই অনেকে বুঝে না বুঝে আঁতকে ওঠেন। মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেন। কিন্তু আমরা বলছি, প্রয়োজনীয় টাকা ছাপাতে। আমরা বলছি না ‘অতিরিক্ত’ টাকা ছাপাতে হবে। প্রয়োজনমতো টাকা ছাপিয়ে সে টাকা দিয়ে যদি বিপুলসংখ্যক মানুষকে বেকারত্ব থেকে মুক্তি দেয়া যায় কিংবা কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যায়, সেটি হবে বেশি জনহিতকর। তাতে উৎপাদনশীলতা বাড়বে। গ্রাম ও শহর দুই এলাকাতেই ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে।
ড. বারকাত বলেন, করোনা থেকে উত্তরণে একটি বৈশ্বিক সম্পদ তহবিল গড়ে তোলা প্রয়োজন। কারণ করোনা একক কোনো দেশের বিষয় নয়। এটি বৈশ্বিক। করোনার ফলে বৈশ্বিক মহামন্দা বিশ্বের সব দেশকেই বিপর্যস্ত করেছে। সেখান থেকে পরিত্রাণ পেতে বৈশ্বিক পর্যায়ে একটি সম্পদ তহবিল করতে হবে। এ সম্পদ তহবিলের উৎস হবে বিশ্বব্যাপী এক বছরে যেসব আর্থিক লেনদেন হয়, তার ওপর শূন্য দশমিক শূন্য ১ শতাংশ হারে করারোপ করা।
এছাড়া কালোটাকা ও অর্থ পাচার বন্ধ করার পাশাপাশি বাজারে বন্ড ছেড়ে অর্থ আহরণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
এদিকে শোভন সমাজের লক্ষ্যে একটি শোভন অর্থনীতি ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে ‘বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির দুদিনব্যাপী ২১তম দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন ও কার্যনির্বাহক কমিটির নির্বাচনে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত পুনরায় সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন তিনি।
রোববার সমিতি’র এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, কার্যনির্বাহক কমিটির নির্বাচনে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত ও অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম-এর ‘শোভন সমাজের লক্ষ্যে অর্থনীতি’ প্যানেল সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ২৯টি পদের মধ্যে ২৮টি পদে নিরঙ্কুশ জয় লাভ করেছে। নতুন কমিটি আগামী দুুই বছরের (২০২২-২০২৩) জন্য দায়িত্ব পালন করবে। কার্যনির্বাহক কমিটির নির্বাচনে সভাপতি পদে অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত, সাধারণ সম্পাদক পদে অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম এবং কোষাধ্যক্ষ পদে এ জেড এম সালেহ্ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
অন্যান্য পদে নির্বাচিতরা হলেন- সহ-সভাপতি পাঁচজন যথাক্রমে অধ্যাপক হান্নানা বেগম, ড. মোঃ আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া, অধ্যাপক ড. মো. মোয়াজ্জেম হোসেন খান, মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান সরদার এবং ড. মো. সাইদুর রহমান। যুগ্ম-সম্পাদক দুই জন যথাক্রমে বদরুল মুনির ও শেখ আলী আহমেদ টুটুল।
সহ-সম্পাদক পাঁচজন পার্থ সারথী ঘোষ, মনছুর এম. ওয়াই. চৌধুরী, মো. জাহাঙ্গীর আলম, সৈয়দ এসরারুল হক সোপেন ও মো. হাবিবুল ইসলাম।
১৪ জন সদস্য হলেন ড. মো. লিয়াকত হোসেন মোড়ল, ড. জামালউদ্দিন আহমেদ এফসিএ, অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলাম সিকদার, ড. মো. সাদেকুন্নবী চৌধুরী, অধ্যাপক শাহানারা বেগম, ড. মো. মোরশেদ হোসেন, অধ্যাপক ড. মো. শামিমুল ইসলাম, মো. মোজাম্মেল হক, শাহেদ আহমেদ, মেহেরুননেছা, খোরশেদুল আলম কাদেরী, নেছার আহমেদ, মোহাম্মদ আকবর কবীর এবং মো. আখতারুজ্জামান খান।