করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত এভিয়েশন খাত
অর্থনীতি ডেস্ক : করোনাকালে সব সেক্টারের ব্যবসা বাণিজ্যে আঘাত লেগেছে তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এভিয়েশন খাত। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রমতে, এককভাবে দেশে এই খাতে ক্ষতির আশংকা করা হয়েছে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে সরকারি সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্সও বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ে বলে জানা গেছে।
দেশের সবচেয়ে বড় বেসরকারি এয়ারলাইন্স এইএস বাংলার ক্ষতির পরিমান প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। নভো এয়ার এবং রিজেন্ট মিলে আরও প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এরমধ্যে রিজেন্ট এয়ার বলতে গেলে বন্ধই হয়ে গেছে এই এয়ার লাইন্সটি আর আদৌ অপারেশনে আসতে পারবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
সূত্রমতে, বাংলাদেশের এভিয়েশন খাতে প্রথম করোনার ধাক্কা লাগে ২০২০ সালের জুন মাসে। ঐ বছর পয়লা জুন থেকেই দেশের সব ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ হয়ে যায়। একই বছর ডিসেম্বরের দিকে স্বল্প পরিসরে ফ্লাইট পরিচালনা শুরু হলেও চলতি বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মে-জুন করোনার দ্বিতীয় ধাক্কার সময় আবারও সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সরকারের একটি বিশেষ সিদ্ধান্তের কারণে এয়ারলাইন্সগুলোর ক্ষতি কিছুটা কম হয়েছে। আর তা হচ্ছে- করোনার সময় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রচুর বাংলাদেশি আটকে পড়েন। তখন বাংলাদেশ বিমান এবং ইউএসবাংলা ঐসব বাংলাদেশিদের দেশে ফিরিয়ে আনতে চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ পায়। এরমধ্যে চেন্নাই, কলতকাতা, দিল্লী, করাচি, সারজা, মালে, দুবাইসহ ইউরোপের অনেক দেশেই এরা ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ পায়। এছাড়া ঢাক-গুয়াঞ্জু ফ্লাইট করোনাকালে চালু থাকায় এই রুটের এয়ারলাইন্সগুলো যেমন সুবিধা পেয়েছে তেমনই দেশের মানুষের জন্য করোনার ওষুধসহ মেডিকেল নিরাপত্তা সামগ্রী পরিবহন করে এয়ারলাইন্সগুলো জাতীয় দায়িত্ব পালনে সক্ষম হয়েছে।
সূত্র জানায়, করোনাকালে কার্গো বিমান চালু থাকায় এয়ারলাইন্সগুলো আরও কিছুটা স্বস্তি পায়। ঐ সময় সিঙ্গাপুর, কুয়ালালামপুর, ব্যাংকক, দুবাই, কাতারসহ কয়েকটি দেশে কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ পায় বিমান ও ইউএস বাংলা। এটিও এই এয়ারলাইন্সের জন্য টিকে থাকার পক্ষে সহায়ক হয়েছে। অন্যথায় এভিয়েশন খাতের ক্ষতি দশ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। যদিও কার্গো এবং চার্টার্ড ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ার লাইন্সগুলো বড় ভূমিকা পালন করেছে।
এ প্রসঙ্গে ইউএস বাংলার মহাব্যবস্থাপক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, করোনাকালে এভিয়েশন খাতে যে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে তা আমরা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। এক্ষেত্রে ডমেস্টিক ও আন্তর্জাকিত ক্ষেত্রে রুট বৃদ্ধিসহ নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফুয়েল প্রাইজ। কারণ গত ১৩ মাসে ফুয়েলে দাম ৬৭ ভাগ বেড়েছে যা এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য একটা বড় বোঝা। ফুয়েলের এত মূল্যবৃদ্ধি টিকেটের দাম বাড়িয়েও পোষানো সম্ভব নয়।
তিনি দাবি করেন, কোভিডের সময় ফ্লাইট পরিচালনা করলেও বিমানে ভ্রমণ করার কারণে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এমন নজির নেই। এয়ারলাইন্সগুলো এত বেশি পরিমান সেফটি মেজার নিয়ে থাকে যা অন্য কোথাও নেয়া হয় না। তাই আবার কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হলেও ফ্লাইট বন্ধ করার আগে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের গভীরভাবে চিন্তা করে দেখা উচিৎ।