
ফিমেল মাস্টারবেশন: মিথ, ট্যাবু অ্যান্ড রিয়েলিটি

ডা. অপূর্ব চৌধুরী
ফিমেল মাস্টারবেশন। ফিমেল এন্ড মাস্টারবেশন, দুটোই ট্যাবু ইস্যু। একে তো ফিমেল, তার ওপর সেক্স নিয়ে কথা। পুরুষ হিসেবে আমার জন্য যেন ‘ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস খাওয়া।’ কিন্তু যখন একটি অনুরোধ এলো চিকিৎসক হিসেবে এ নিয়ে লিখতে, শুরুতেই মনে পড়লো একটি কথা। ডড়সবহ নবপড়সব ঢ়ড়বিৎভঁষ যিবহ ঃযবু সধংঃঁৎনধঃব, সবহ নবপড়সব ঢ়ড়বিৎভঁষ যিবহ ঃযবু ঢ়বহবঃৎধঃব. মাস্টারবেশন। সহজ ভাষায় সেলফ সেক্স বা সেলফ প্লেজার বা নন পিনাট্রেটিভ সেক্স। এ নিয়ে সমাজ এবং ব্যক্তির ট্যাবুর শেষ নেই। নারীর মাস্টারবেশন, আরেক ডিগ্রি বেশি ট্যাবু। সেক্স শরীরের একটি ন্যাচারাল অনুভব। এই অনুভবের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ দু ভাবে: [এক] সেক্স উইথ এনাদার পারসন। [দুই] সেক্স উইথ সেলফ বা মাস্টারবেশন।
আজকের আলোচনা সেক্স উইথ সেলফ বা মাস্টারবেশন: নারী হোক, পুরুষ হোক, শরীরের জেনিটাল অর্গান হাত দিয়ে স্পর্শ করে অর্গাজম আনার প্রক্রিয়াটিকে বলে মাস্টারবেশন। পুরুষের ক্ষেত্রে শুধু পিনাসকে হাতে ধরে রাব করার মধ্যে দিয়ে অর্গাজম এবং এজাকুলেশ্যন পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। নারীর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একটু ভিন্ন। নারীর ভ্যাজাইনা বা যোনিপথে হাত বা আঙুল দিয়ে স্পর্শ করা থেকে রাব, কোনো বস্তু প্রবেশ করানো কিংবা সেক্স টয়েস ব্যবহারের মধ্য দিয়ে অর্গাজম এবং ইজাকুলেশন পাওয়ার চেষ্টা করা হয়। ফিমেল মাস্টারবেশন নিয়ে যেমন আছে মিথ, তেমন ট্যাবু। এ নিয়ে পুরুষদের ধারণা একেবারেই হামাগুড়ি। নারীর এ নিয়ে আছে সংকোচ, অজ্ঞানতা, সামাজিক ভুল প্রচারণা, প্রচলিত মিথকে রিয়েলিটি ভাবা এবং সর্বশেষে ব্যক্তিভেদে অভিজ্ঞতার কিছু ভিন্নতা। তাই ফিমেল মাস্টারবেশনের মতো ব্যাপারটিকে সহজ করে ব্যাখ্যা করতে, তার সুফল-কুফল, শারীরিক প্রভাবগুলো চিকিৎসা বিজ্ঞান, সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষা ও সচেতন এমন সব বৈশিষ্ট্যের আলোকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করবো।
ফিমেল মাস্টারবেশনের মূল লক্ষ্য কী? সহজ করে বললে, অর্গাজম। এই অর্গাজম তিনভাবে পাওয়া যায় : [এক] ক্লিটোরাল। [দুই] ভ্যাজাইনাল। [তিন] সারভাইক্যাল। অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, নারীর অর্গাজমের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আসে ক্লিটোরাল স্টিমুলেশন থেকে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ২০ থেকে ৩০ ভাগ নারীর ভ্যাজাইনাল স্টিমুলেশনে ক্লাইম্যাক্স বেশি হয়। ক্লিটোরাল অর্গাজমের সময় ভ্যাজাইনা ২০ ভাগের মতো অর্গাজম তৈরি করে, যদিও এ নিয়ে কিছু বিতর্ক আছে। অনেক নারী সার্ভিক্সের স্টিমুলেশনের মাধ্যমেও অর্গাজম পেতে পারে, যা কম নারীর ক্ষেত্রেই ঘটে। আবার ঘটলে সার্ভিক্সের স্টিমুলেশন তুলনামূলকভাবে লংগার অর্গাজম হয়। যারা অর্গাজমের সময়কালকে বাড়াতে চান, তাদের ক্ষেত্রে সার্ভিক্সের স্টিমুলেশন হেল্পফুল।
জেনিটাল অর্গানের বাইরেও নারীর অর্গাজম পাওয়ার পয়েন্ট আছে কিছু। [এক] নিপলস, [দুই] এনাল। [তিন] সেনসুয়াল বডি পার্ট। সেনসুয়াল বডি পার্টের মধ্যে আছে নেক, থাই, ব্যাক, হিপ, কান, এমনকি হাতের আঙুল এর বাইরে ভ্যাজাইনাতে এ এবং অ স্পট নিয়ে দুটো পয়েন্ট আছে বলে অনেক নারী মনে করেন, যা চিকিৎসা বিজ্ঞানের এনাটমিতে এ ধরনের কোনো স্বীকৃত আলাদা পার্টের অস্তিত্ব এখনো প্রমাণিত নয়। তাহলে ক্লাইম্যাক্স বা অর্গাজমের সেরা উপায় হলো যতো বেশি অংশগুলোর কম্বিনেশন ঘটবে ততো বেশি অর্গাজম হবে। নারীর অর্গাজমের স্থায়িত্বকাল ১৫ সেকেন্ড থেকে ১ মিনিট হয়, সেখানে পুরুষের সময় ১০ সেকেন্ড থেকে ৩০ সেকেন্ড মাত্র। অনেক পুরুষের তো চোখের পলক ফেলার আগেই ক্লাইম্যাক্স শেষ।
অর্গাজম আর কিছুই নয়। মস্তিষ্কের কিছু সিগন্যাল। এতে দুটো ব্যাপার ঘটে নারীর শরীরে। [এক] পুরুষের মতো নারীরও অর্গাজমের সময় ইজাকুলেশন হয়, ফ্লুয়িড সিক্রেট হয়। [দুই] অর্গাজম হলে রক্তের প্রেশার বেড়ে যায়, ক্লিটোরিস এবং ভ্যাজাইনা ফুলে ওঠে, তলপেট কাঁপতে থাকে, ঘন ঘন নিঃশ্বাস হয়, হার্ট বিট বেড়ে যায়। এক গবেষণায় দেখা গেছে, অর্গাজমে ক্লিটোরিস সবচেয়ে বেশি কাঁপে। ফিমেল মাস্টারবেশনের মধ্য দিয়ে অর্গাজমের তৃপ্তিটি সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায়। কারণ ক্লিটোরাল সেনসেশন ফিঙ্গার কিংবা রাবের মধ্যে দিয়ে একজন নারী যতোটা নিজেকে দিতে পারে, একজন পুরুষ কিংবা পুরুষের পেনিস সেটার ৩০ ভাগ মাত্র দিতে পারে। তার মানে পিনাট্রেটিভ পার্টনার সেক্স অর্গাজমের মাত্র ৩০ ভাগ। অনেক গবেষণায় এটা প্রমাণিত যে, ৬৪ শতাংশ নারী আসলে পিনাট্রেটিভ পার্টনার সেক্সে অর্গাজম পায় না। পক্ষান্তরে ৭৮ শতাংশ নারী অর্গাজমের আসল স্বাদ পায় মাস্টারবেশনে। সামাজিক মিথ যে নারীর সেক্সের সব স্বাদ ভ্যাজাইনাল। কিন্তু চিকিৎসা বিজ্ঞানের বাস্তবতা বলে যে নারীর সেক্সের অনুভবের বিশাল অংশই ক্লিটোরাল। অথচ সমাজ এবং পুরুষদের বিশাল অংশই মনে করে ভ্যাজাইনাতে পিনাট্রেট করাই সেক্স। এই ভুল ধারণাকে আরও পাকাপোক্ত করেছে পর্নো। পুরুষদের এবং বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ অংশের সেক্সের ধারণা শিক্ষা থেকে আসে না, মূল ধারণাগুলো আসে পর্নো থেকে। আর পর্নো মানেই ভ্যাজাইনাল পিনাট্রেশন। কিন্তু সত্যটি নারীরা ঠিকই জানে যে শুধু পিনাট্রেশন নারীর সেক্স ফিলিংসের আংশিক মাত্র। নারীর সেক্সের আসল আনন্দ ক্লিটোরিসে। ফিমেল মাস্টারবেশনের কিছু হেলথ বেনিফিট বলি। সঙ্গে এটাও যুক্ত করি ফিমেল মাস্টারবেশনের কোনো ক্ষতির দিক নেই। পুরোটাই যেমন স্বাস্থ্যকর এবং শারীরিক আনন্দের পরিপূরক। মাস্টারবেশনের মধ্য দিয়ে যে আনন্দ পাওয়া যায় তার একটি বড় ভাগ হচ্ছে স্ট্রেস রিলিফ। যতো বেশি অর্গাজম ততো বেশি এন্ডোরফিন নামক নিউরোট্রান্সমিটার সাবস্টেনসের নিঃসরণ। এন্ডোরফিনের কাজ মুড ভালো রাখা, বিষণ্নতা দূর করা, মানসিক উদ্বিগ্নতা কমিয়ে দেওয়া। বলা হয়, শারীরিকভাবে মাস্টারবেশনের চেয়ে আর এমন স্ট্রং এক্টিভিটি নেই, যেটায় ওই পরিমাণ এন্ডোরফিনের সিক্রেশন হয়। অনেকে বিভিন্ন কারণে সেক্স ডিজায়ার, ড্রাইভ কিংবা লিবিডো কম ফিল করেন। সেটা একদিকে যেমন মানসিক অস্থিরতা তৈরি করে, তেমনি দাম্পত্য জীবনে ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে। ফিমেল মাস্টারবেট সেক্স ড্রাইভ এবং লিবিডোকে চাঙ্গা করে। সঙ্গে পার্টনারের সঙ্গে সেক্স করতে আগ্রহী করে তোলে, যা সম্পর্ককে ইতিবাচক এবং হেলদি করে।
মাস্টারবেশন মিনি ওয়ার্ক আউটের মতো। ক্যালোরি বার্নিং থেকে কার্ডিয়াক এক্সারসাইজের কাজ করে। ব্যায়ামের বিকল্প না হলেও অনেক ক্ষেত্রে বিছানায় থেকেও ব্যায়ামের কিছু সুফল মেলে। বিশেষ করে হিপ, ব্যাক এবং পেলভিক ফ্লোরের এক্সারসাইজ নারীর রিপ্রোডাকটিভ এরিয়াকে সুস্থ রাখে, যা মাস্টারবেশন থেকে পেতে পারে নারী। কিছুটা এনার্জি কনজিউমিং বলে ঘুমের আগে মাস্টারবেশন ঘুম আনতে সাহায্য করে, স্ট্রেস রিলিফ করে, ঘুমের ডেপথ বাড়িয়ে দেয়, ঘুমের কোয়ালিটি ইম্প্রুভ করে। মেনোপজ অথবা প্রি-মেনোপজের আগে নারীর শরীর এবং মুডের কিছু পরিবর্তন হয় হরমোনাল চেঞ্জের কারণে। এই সময় মাস্টারবেশন এই সমস্যাগুলো অনেকটা কমিয়ে দেয়, মুড সুইং, হট ফ্ল্যাশের মতো অস্বস্তিকর অনুভবগুলোকে কমিয়ে আনে।
অনেক নিউরোসায়েন্টিস্টের মতে, মাস্টারবেশন ব্রেইনের ফোকাসিং পাওয়ার বাড়ানো থেকে কগনিটিভ ইম্প্রুভমেন্ট, সঙ্গে বয়স বাড়লে কগনিটিভ ডিক্লাইনিংয়ের এফেক্টগুলো কমিয়ে আনে। কগনিটিভ ডিক্লাইনিংয়ের সঙ্গে স্মৃতি ক্ষয় রোগের সম্পর্ক আছে। নিয়মিত মাস্টারবেশন মস্তিষ্কের এই মেমোরি ক্ষয় রোধেও পরোক্ষভাবে হেল্প করে। চিকিৎসকদের কারও কারও মতে ফিমেল মাস্টারবেশন ইমিউনিটি বাড়ায় শরীরে, যা শরীরকে রক্ষা করে জীবাণু থেকে এবং সুস্থ রাখে। মিনস্ট্রুয়াল পিরিয়ডের সময়ে মাস্টারবেশন নিয়ে ট্যাবু আছে। অথচ পিরিয়ডের আগে, পিরিয়ড চলাকালীন এবং পিরিয়ডের পরে নারীর সেক্স ড্রাইভ সবচেয়ে বেশি থাকে। পিরিয়ডের দু’একদিন আগে কিংবা পিরিয়ডের সময় মাস্টারবেশন পিরিয়ডের পেইনকে অনেকাংশে কমিয়ে দেয়।
মাস্টারবেশন যেমন শরীরকে রিলাক্স করে, তেমনি মাস্টারবেশন মাথাব্যথা কমিয়ে দেয় অনেকের। ব্রেইন হেলথ বেনিফিটস এ ফিমেল মাস্টারবেশন নারীকে যথেষ্ট হেল্প করে, সেলফ কনফিডেন্স বাড়ায়, নিজের শরীরের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং কেয়ারিং বাড়ে। নিয়মিত মাস্টারবেশন নারীর যোনিপথকে জীবাণুমুক্ত রাখে। সারভাইকেল ইনফেকশন এবং ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের মতো নিত্য সমস্যা থেকে শরীরকে রক্ষা করে। এ জন্য নিয়ম হলো- মাস্টারবেশনের আগে আঙুল পরিষ্কার রাখবেন, মাস্টারবেশনের পর পেশাব করে নেবেন এবং ভ্যাজাইনাল এরিয়া ধুয়ে ফেলবেন নিয়মিত। মাস্টারবেশন প্রতিদিন করলে ক্ষতি নেই কোনো। স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই কোনো। মাস্টারবেশনের সঙ্গে প্রেগনেন্সির কোনো সম্পর্ক নেই। বরং নিয়মিত মাস্টারবেশন হরমোনাল এক্টিভিটি ইনক্রিজ করে যা কনসিভ করতে আরও বেশি সাহায্য করে।
পুরো আলোচনাটি থেকে যে ভুলগুলো ভেঙে যাওয়া উচিত : [১] মিথ: ফিমেল সেক্সে ভ্যাজাইনাল স্টিমুলেশনকে বড় ভাবে বেশিরভাগ মানুষ। সঠিক: ফিমেল সেক্সের আসল প্লেজার থাকে ক্লিটোরিস স্টিমুলেশনে। [২] মিথ: অর্গাজম পেতে আরেকটি পুরুষের সঙ্গে সেক্স করাই বেস্ট উপায়। সঠিক: অর্গাজমের আসল কাজ করে ক্লিটোরিস, ভ্যাজাইনা নয়, কিন্তু পুরুষের পেনিস কেবল ভ্যাজাইনাকে স্টিমুলেট করে, যা খুব অল্পই অর্গাজম দেয়। [৩] মিথ: নারীর অর্গাজম নির্ভর করে সেক্স করার ওপর। সঠিক: নারীর অর্গাজম সেক্স বা ইন্টারকোর্সের ওপর মোটেও নির্ভর করে না। নারীর সেক্স নির্ভর করে ক্লিটোরিস টাচের ওপর, যা ইন্টারকোর্সে খুব কম পাওয়া যায়, যা কেবল মাস্টারবেশনের মাধ্যমে পূর্ণভাবে পাওয়া যায়। [৪] মিথ: মাস্টারবেশন নিয়মিত করলে সেক্স ড্রাইভ কমে যায়। সঠিক: মাস্টারবেশন নারীর সেক্স ড্রাইভ বাড়িয়ে দেয়, হেলদি করে এবং প্রেগনেন্সি থেকে ইমিউনিটিতে সাহায্য করে। [৫] মিথ: মাস্টারবেশন করলে পার্টনারের প্রতি আকর্ষণ কমে যায়। সঠিক: নিয়মিত মাস্টারবেশন পার্টনারের সঙ্গে হেলদি কানেকশন তৈরি করে, পার্টনারের সঙ্গে আরও বেশি সেক্স করতে আগ্রহী করে তোলে। তাহলে সামাজিক মিথ কী সেক্স নিয়ে? বিয়ে নিয়ে? নারী তাহলে বিয়ের জন্য এতো উতলা কেন, পুরুষশাসিত সমাজে বিয়েকে এতো গুরুত্বপূর্ণ করে তোলা কেন? কেন তাহলে পার্টনারশিপ সেক্সকে এতো আকর্ষণীয় করে তোলা হলো? ভার্জিনিটির মতো একটা অশ্রাব্য অত্যাচারের শব্দকে নারীর কাছে আকর্ষণীয় অলংকার করে তুললো? প্রত্যেকটাই কি এক একটি মিথ নয়? নারীরা নিজেরাই কি বোকার মতো পুরুষের যৌন অস্ত্র নয়? অজ্ঞানতাকে পুরস্কারের মালা মনে করে নারী হোক পুরুষ হোক, দুপক্ষই ঘুরছে।
অনেক গবেষকের দাবি, নারীর সেক্সের মূল স্বাদটি যেহেতু অর্গাজম, আর এই অর্গাজমের ষোলো আনার মধ্যে বারো আনা আসে ক্লিটোরিস থেকে, তাহলে নারীর সেক্স প্লেজার আসলে ক্লিটোরাল প্লেজার। এ নিয়ে বিবর্তনবাদেরও কিছু বিতর্ক আছে। সে নিয়ে অন্য সময় আলোচনা করবো। ক্লিটোরিসের যতো স্পর্শ, ততোই অর্গাজমের আনন্দ। আর এই অর্গাজমের চৌদ্দ আনাই মিলে মাস্টারবেশনে। পার্টনারশিপ পিনাট্রেটিভ সেক্সে পুরুষের পেনিস সে তুলনায় ক্লিটোরিসকে খুব কম স্পর্শ করে। কারণ ক্লিটোরিস থাকে নারীর যোনির ওপরের অংশে, মূত্র ছিদ্রের ওপরে একখণ্ড হুডির মতো চামড়ার ভাঁজের নিচে। পুরুষের পেন্সিল সাইজ সেই মঞ্জিলে যতোটা পৌঁছাতে পারে, সেটি আসলে সরাসরি ঘটে না। সেটি ঘটে ভ্যাজাইনাল ফোল্ড লেবিয়া মিনোরার চাপে অল্প যেটুকু আসে। বাকি যেটুকু ফিলিংস এবং অর্গাজম নারী পিনাট্রেশন পায়, সেটা আসে বেশিরভাগ ভ্যাজাইনাল স্টিমুলেশন থেকে।
আগেই বলেছি, নারীর অর্গাজমের দুই-তৃতীয়াংশই ক্লিটোরাল অর্গাজম, এক-তৃতীয়াংশ ভ্যাজাইনাল অর্গাজম। তাহলে হিসাবে বলে- পুরুষের অঙ্গ নারীকে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ অর্গাজমের সুখ দিতে পারে। সেখানে সেলফ টাচ বা মাস্টারবেশন নারীকে পূর্ণমাত্রায় সুখের নাগরদোলায় ভাসাতে পারে। গবেষকদের কারও কারও মতে, পুরুষের সঙ্গে নারীর সেক্সটি মূলত রিপ্রডাকটিভ এবং পুরুষ পার্টনারকে হ্যাপি করা। তার মানে নারীর শরীরের মধ্যে সেক্সের জন্য পুরুষ নির্ভরশীলতার কোনো প্রয়োজন নেই। পার্টনার নির্ভরশীল বা বিয়ে নির্ভরশীল সেক্সটি সামাজিক সৃষ্টি, ভালোবাসা নামক উনিশ শতকের ফিকশনের মধ্য দিয়ে ছড়ানো একটি সাইকোলজিক্যাল ডিপেন্ডেন্সি বানানোর চেষ্টা। পুরুষশাসিত সমাজ এতে সফল। নারীরাও বোকার মতো তার ফাঁদে। পুরুষ নারীকে অনিরাপদ করে তার ওপর নির্ভরতায় বাধ্য করে, ভার্জিনিটি নারীকে ভীত রাখার অস্ত্র, নারী যাতে তার শরীরকে নিজের মতো উপভোগ না করে যৌন দাসীর মতো পুরুষের যৌন অঙ্গের মনোরঞ্জন করে, তারই আরেক রূপ বিয়ে। বিয়ে করে নারী তার যৌন সুখ হারায়, আর পুরুষ তার যৌন গর্ত খুঁজে পায়। নারীর শরীরের মধ্যেই নিজেকে উপভোগ করার চৌদ্দ আনা রয়েছে, আর যে দুআনা নেই সেটা মানসিক। অথচ সমাজ, রাষ্ট্র, পৃথিবী এবং ধর্মগুলো তাদের স্বার্থে এই দুআনাকেই ষোলো আনা বানিয়ে ফেলেছে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, সিঙ্গেল থাকা অবস্থায় পুরুষের ৯৫ শতাংশ মাস্টারবেট করেন, নারী সেখানে ৮৪ শতাংশ। বিয়ের পর নারী এবং পুরুষ দুই পক্ষেরই ৭০ শতাংশ কখনো কখনো মাস্টারবেট করেন। কারণটি বোঝা সহজ। বিয়ে একটি সামাজিক ধর্ম। কিন্তু শরীরের ধর্ম হলো শরীর। যেখানে শরীর সর্বোচ্চ সুখ পায়, সেখানেই শরীর খুলে, শরীর শরীরকে পায়। সূত্র : উইমেন চ্যাপ্টার
