নতুন বইয়ের ঘ্রাণ, আলাদা এক অনুভূতি : প্রধানমন্ত্রী
শরীফ শাওন : ছোট্ট সোনামনিরা নতুন বছরে নতুন বই পেতে যাচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নতুন বই হাতে পাওয়ার আনন্দটাই আলাদা। নতুন বইয়ের ঘ্রাণ পাওয়া, হাতে নেওয়া, মলাট লাগানো ও তাতে নাম লেখা, এটা অন্য রকম অনুভূতি।
বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের বই বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন এবং এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, করোনার কারণে বই উৎসব আমরা করতে পারছি না। কিন্তু আমরা বই বিতরণ করছি। গতবারও করোনার কারণে উৎসব করতে না পরলেও বই পৌঁছে দিয়েছি। তাছাড়া সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে আমরা শিক্ষাকার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি। ছেলেমেয়েদের ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা নিতে ব্যবস্থা নিয়েছি। তারা যেন পিছিয়ে না থাকে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যাতে পিছিয়ে না থাকে, তাদের উপযোগী করেও আমরা ব্রেইল পদ্ধতিতে বই তৈরি করে দিচ্ছি। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদেরও তাদের নিজেদের ভাষায় বই তৈরি করে দিচ্ছি। এ রকম ৫টি ভাষায় আমরা বই তৈরি করে দিয়েছি। যাতে তারা তাদের ভাষাটা ভুলে না যায়।
প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের নিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসিক অবস্থাটা বুঝে সেভাবে পাঠদানের ব্যবস্থা নিতেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সরকারপ্রধান। স্কুল পড়ুয়াদের বকাঝকা, গালমন্দ না করে শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে সচেতন থাকতে শিক্ষক, অভিভাবকসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সচেতন থাকার আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু ধমক দেয়া না, শুধু বকাঝকা না, তাদের অবস্থাটা বুঝে তাদের সঙ্গে সেইভাবে আচরণ করতে হবে। এটা বাবা, মা, গার্ডিয়ান, শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব সবাইকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে। শুধু পাঠ্যপুস্তক, একগাদা পড়ে যে শিক্ষা সে শিক্ষা না। শিক্ষাটা পরিবেশ সম্পর্কে, শিক্ষাটা মানসিকতা সম্পর্কে, শিক্ষাটা সবার সঙ্গে চলার। সেভাবে সবাইকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আমি অনুরোধ জানাচ্ছি।
অনেক সময় শিশুদের প্রতিবন্ধিতা আবিষ্কার করতে না পেরে উল্টো তাকে বকাঝকা করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে শিক্ষকদের আরও মনোযোগী হতে হবে। আমরা দুই লাখ শিক্ষককে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রত্যেকটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রাখা সম্ভব না। তবে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মানসিক বিশেষজ্ঞদের দিয়ে অন্তত একটি পরীক্ষা নেওয়া দরকার, যেখানে শিক্ষার্থীদের ভেতরে কী সমস্যা আছে তা চিহ্নিত করা যাবে।
আগে যৌথ পরিবার ছিল বলে শিশুরা সবার সঙ্গে হেসে-খেলে বড় হওয়ায় অনেক সমস্যা ঠিক হয়ে যেত বলে মনে করেন সরকারপ্রধান। বর্তমান অবস্থা ভিন্ন জানিয়ে তিনি বলেন, এখন হয়ে গেছে সবাই একক পরিবার। একটা পরিবারে একটা বাচ্চা বা দুইটা বাচ্চা। বাবা-মা দুজন ব্যস্ত। বাচ্চারা টিভি মোবাইল ফোন নিয়ে সময় কাটায়। শহরে এককভাবে থাকতে গিয়ে বাচ্চাদের চাহিদায় নজর দিতে পারে না। বাচ্চারা চায় তাদের সাথী, বাবা-মাকে সাথী হতে হবে। মানসিকভাবে বেড়ে ওঠার শিক্ষা দিতে হবে।
গ্রামে এসব সংকট কম থাকলেও শহুরে জীবনে এসব প্রভাব বাড়ছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাচ্চারা চায় তাদের সাথি। বাবা-মাকেও সেই সাথি হতে হবে। তাদের সবার সঙ্গে মেশার সুযোগ দিতে হবে, যাতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যটা ভালো হয়, উদার হয়, অন্যের সঙ্গে শেয়ার করতে শেখে।
কোন কাজকে ছোট করে দেখা যাবে না, শিক্ষাক্ষেত্রে এ বিষয়কে গুরুত্বারোপ করা প্রয়োজন জানিয়ে তিনি বলেন, কৃষকের ছেলে যখন বড় অফিসার হয়ে যায়, তখন বাবাকে তার নামের পরিচয় দিতে লজ্জা পায়। এটা সত্যিই খুব দুঃখজনক, লজ্জাকর ব্যাপার। বরং সেই বাবাকে আরও বেশি সম্মান দেয়া উচিত, যে বাবা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সন্তানকে বড় করেছেন। তিনি বলেন, নিজে দুই পাতা পড়ে, একটা ফুল প্যান্ট পরে আর মাঠে নামতে পারবে না, এই মানসিক দৈন্যতা বাংলাদেশের মানুষের থাকুক, সেটা আমরা দেখতে চাই না। এটা মানসিক দৈন্যতা, মানসিক দরিদ্রতা, অন্তত আমার কাছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গঠনের জন্য সোনার মানুষ হবে আজকের শিক্ষার্থীরা। তাদের সেভাবে গড়ে তুলতে অভিভাবক ও শিক্ষকদের নজর দেওয়ার তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, খালি পড়ালেই হবে না। শিক্ষার্থীদের পুষ্টি নিশ্চিতে অভিভাবকরা খেয়াল রাখবেন। শিক্ষকদেরও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মানসিক স্বাস্থ্য নিয়েও দুই লাখ শিক্ষকদের ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। অমনোযোগী হলেও মারধর নয়, কেয়ার করতে হবে। এটাও একধরনের প্রতিবন্ধিতা। এদিকে আরও বেশি নজর দিতে হবে।
সরকার প্রধান জানান, অনলাইনে শিক্ষাটা চালু রাখতে হবে। করোনা কখনও কমছে, কখনও বাড়ছে। শীতে করোনার প্রাদুর্ভাব বাড়লে যেনো অনলাইনে শিক্ষাটা চালু রাখা যায়। এর জন্য যা যা প্রয়োজন আমরা ব্যবস্থা করবো। সংসদটিভি সবসময় তারা ব্যবহার করতে পারবে। ‘আমার ঘরে আমার স্কুল’, এ কার্যক্রমে সবার সহযোগিতা করতে হবে। চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের উপযোগী নাগরিক তৈরি করতে হবে। প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। সমাজকে এমনভাবে গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা আমার, যাতে কেউ কাউকো কাজের জন্য হুকুম দিতে না পারে। নিজের কাজ নিজে করে।
শেখ হাসিনা আরও বলেন, মাদরাসা শিক্ষাকে স্বীকৃতি দিয়েছি। কারিগরি ভোকেশনাল ট্রেনিং দিচ্ছি। কোনো কাজকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। নিজের কাজ নিজে করা, সেই শিক্ষাটাও দিতে হবে। কৃষকের ছেলে বড় হয়ে তার বাবাকেই বেশি সম্মান দেওয়া উচিত। শিক্ষা নিয়ে বড় হয়েও বাবার সঙ্গে মাঠে নেমে কাজ করা উচিত।