টিকা না নেওয়া আট কোটি মানুষের ওপর চরম আঘাত আনতে পারে ওমিক্রন
শিমুল মাহমুদ: করোনা ভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনে দেশে এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত হলেন সাত জন। বুধবার সকালে করোনা ভাইরাসের জিনোমের উন্মুক্ত বৈশ্বিক তথ্যভা-ার জার্মানির গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডেটাতে (জিআইএসএআইডি) এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জিআইএসএআইডি তথ্য থেকে জানা যায়, নতুন সংক্রমিত ব্যক্তিরা বনানীর বাসিন্দা। তাদের মধ্যে দুজন নারী এবং একজন পুরুষ। সংক্রমিত দুই নারীর একজনের বয়স ৩০, আরেকজনের বয়স ৪৭ বছর। তাদের একজনের নমুনা নেওয়া হয়েছে ১৯ ডিসেম্বর এবং আরেকজনের ৮ ডিসেম্বর। নতুন করে ওমিক্রন ধরনে আক্রান্ত পুরুষের বয়স ৮৪ বছর। তার কাছ থেকে নমুনা নেওয়া হয় ১৯ ডিসেম্বর। ওমিক্রনে আক্রান্ত তিনজনই বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন। এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে, দেশে গত এক সপ্তাহে রোগী বেড়েছে প্রায় ১৮.৮৫ %। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে দেশে মোট ২ হাজার ১৫০ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছে, যা আগের সপ্তাহে ছিল ১ হাজার ৮০৯ জন।
আর গত সাত দিনে মারা গেছেন আরও ৯ জন, আগের সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১৩ জন। অর্থাৎ, এক সপ্তাহে কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৪ শতাংশ কমেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন বলেন, যদি কেউ আগে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে থাকেন এবং পরবর্তীতে ভ্যাকসিন নেন তাহলে তাদের সংক্রমণের সম্ভাবনা কম থাকবে। তবে যেহেতু এটি দ্রুত ছাড়ায় তাই আমরা যদি অসংখ্য রোগী পেয়ে যাই, সে ক্ষেত্রে অন্য রোগের কারণে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের জন্য ঝুঁকির কারণ হতে পারে। যুক্তরাজ্যে প্রতিদিন লাখ ছাড়াচ্ছে সংক্রমণের হার। সে জন্য তারা বুস্টার ডোজের মাধ্যমে সংক্রমণের হার কমানো যায় কি না সে চেষ্টা করছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, ওমিক্রন যেহেতু দেশে শনাক্ত হয়ে হয়েছে এখন এটি বাড়তে থাকবে। মার্চের মাঝামাঝি একটা বড় রকমের আঘাত আনতে পারে।
তিনি বলেন, ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে যারা আছেন তাদের অনেকেই এখনো টিকার প্রথম ডোজই পাননি। এটা আমাদের বিরাট একটা ঘাটতি। কিন্তু যাদের বুস্টারের সময় হয়েছে তাদের এটি দেওয়া হোক।
যুক্তরাজ্য শেফিল্ড ইউনিভার্সিটির সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ড. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, বাংলাদেশে গত সপ্তাহে যে ১৩ জন কোভিডে মারা গেছেন তার ১১ জন অর্থাৎ আক্রান্তের ৮৫ শতাংশই কোন ভ্যাকসিন নিয়েছিলেন না। তাদের সবাই ছিলেন ষাটোর্ধ এবং ৯০ শতাংশের ছিল উচ্চ রক্তচাপ এবং ৮০ শতাংশের ছিল ডায়াবেটিস।
যুক্তরাজ্যে এখন কোভিডে যারা মারা যাচ্ছেন তাদের ৮০ শতাংশই পূর্বে ভ্যাকসিন নেননি। এ থেকে বোঝা যায়, যুক্তরাজ্য বা বাংলাদেশ, যেখানেই হোক না কেন টিকা না নেয়া থাকলে কোভিডে মৃত্যুঝুঁকি অনেক বেশী।
তিনি বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২৯ ডিসেম্বরের রেকর্ড অনুযায়ী এখন পর্যন্ত দেশের মোট জনসংখ্যার মাত্র ২৮.৫ শতাংশ মানুষকে কোভিডের দুটি ভ্যাকসিন ডোজ দেয়া হয়েছে। সরকারের টর্গেট হচ্ছে মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার আওতায় আনা। গত ১০ মাসে অর্জিত হয়েছে টার্গেটের মাত্র ৩৫ শতাংশ। এই হারে টিকাদান চলতে থাকলে টার্গেটে পৌঁছুতে সময় লাগবে আরো ১৮ মাস। অর্থাৎ ২০২৩ এর জুনের আগে লক্ষমাত্রায় পোঁছানো সম্ভব না।
নিঃসন্দেহে দেশে টিকাদানে আরো গতি আনতে হবে। এর ভিতর শুরু হচ্ছে তৃতীয় বুস্টার ডোজের কার্যক্রম। এতে করে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার পূর্ণ দুটি ডোজ দেয়ার টার্গেটে পৌঁছুতে হয়ত আরো বিলম্ব হতে পারে।
ড. খোন্দকার মেহেদী বলেন, টিকার দুটি পূর্ণ ডোজ কোভিড থেকে মৃত্যু কমায় প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ। দেশে যত তারাতারি সবাইকে দুটো ডোজের আওতায় আনা সম্ভব হবে ভবিষ্যতে কোভিডের হাত থেকে মৃত্যু ততো বেশী কমানো সম্ভব হবে। সম্পাদনা: ভিকটর রোজারিও