এবার বিয়ার তৈরির চিন্তা করছে কেরু এন্ড কোং
অর্থনীতি ডেস্ক : বাংলাদেশে অ্যালকোহলের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বিয়ার তিরির কথা ভাবছে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ডিস্টিলারি কেরু অ্যান্ড কোং (বাংলাদেশ) লিমিটেড। ক্রমবর্ধমান চাহিদার বরাত দিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি শনিবার বলেছিলেন, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা চিনিকলের উৎপাদন ক্ষমতা দ্বিগুণ করার জন্য দর্শনার বর্তমান স্থানে নতুন একটি ইউনিট স্থাপন করা হবে।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের (বিএসএফআইসি) একাধিক উচ্চপদস্থ সূত্র জানায়, দ্বিতীয় ইউনিটটি স্থাপনের লক্ষ্য হলো বিয়ার তৈরি এবং ইতোমধ্যে কিছু বিদেশি প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে তাদের আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে বিয়ার উৎপাদনের সিদ্ধান্ত এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে থাকার কারণে কর্মকর্তারা বিনিয়োগে রাজি নন।
একটি সূত্র জানায়, “এ মুহূর্তে আমরা প্ল্যান্টে বিনিয়োগ করার অবস্থানে নেই, তবে যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এটি আলোর মুখ দেখতে পারে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, “দ্বিতীয় ইউনিটের উদ্দেশ্য বিয়ার তৈরি। কারণ ইতোমধ্যেই কেরুর একটি নিজস্ব লাভজনক ইউনিট রয়েছে। বাংলাদেশি বিয়ার ‘হান্টার’-ও দেশীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করছে।” এছাড়াও, বিএসএফআইসি ইতোমধ্যেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মদ উৎপাদনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করেছে।
কেরুর যেসব ব্র্যান্ডের বিদেশি মদ রয়েছে, সেগুলো হলো- ইয়েলো লেভেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, শেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, সারিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।
কেরু অ্যান্ড কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেনের যোগাযোগ করা হলে বুধবার তিনি জানান, উৎপাদন বাড়ানোর জন্য অটোমেশন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে।
কেয়ারুর ডিস্টিলারি ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার মোহাদ্দাদ ফিদা হোসেন বাদশা বলেন, “কেরু অ্যান্ড কোং এ মুহূর্তে প্রতিদিন ম্যানুয়ালি গড়ে ৭ হাজার লিটার মদ উৎপাদন করছে। ১৯৩৮ সালে এ প্রক্রিয়াটি শুরু হয়েছিল। যখন অটোমেশন শুরু হবে, তখন উৎপাদন তিনগুণ বাড়বে।”
এদিকে, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো (বিএটি) কোম্পানি এ বছর ৩৫ একর জমিতে আখ উৎপাদনের জন্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি করেছে। কর্মকর্তারা জানান, এর মাধ্যমে প্রতি একরে ৪০ টন আখ উৎপাদন করা সম্ভব, যা কেরু এবং অন্যান্য চিনিকলের চাহিদা মেটাতে সহায়তা করবে।
সাধারণত প্রতি মাসে কেরু অ্যান্ড কোংয়ের মদ প্রায় সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার কেস বিক্রি হলেও এ বছরের অক্টোবরে এ সংখ্যা ১৮ হাজার ৫৭৯ কেস এবং নভেম্বরে ১৯ হাজার ৪৪৬ কেসে দাঁড়িয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে রাজস্ব বাড়াতে সরকার দেশে বিক্রয় কেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানোসহ বিপণন পরিকল্পনা প্রবর্তনের দিকে নজর রাখছে।
বর্তমানে দেশে কেরুর ১৩টি গুদাম ও তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। শিগগিরই কক্সবাজার ও কুয়াকাটায় দুটি নতুন বিক্রয়কেন্দ্র চালু করা হবে।
রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশের একমাত্র লাভজনক চিনিকল হলেও প্রতি বছর প্রতিষ্ঠানটিটি লোকসানের সম্মুখীন হয়। ডিস্টিলারি ইউনিটের লাভ দিয়ে এ লোকসান মেটানো হয়।
২০২০-২১ অর্থবছরে শুধুমাত্র মদ থেকেই ১৯৫ কোটি টাকা আয় করেছে কেরু অ্যান্ড কোং। গত কয়েক বছর ধরে মদের বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ার ফলে প্রতিষ্ঠার পর এ বছরে প্রতিষ্ঠানটি প্রথমবারের মতো লাভের মুখ দেখেছে। এখন কেরুর মদের চাহিদা আরও বেড়ে যাওয়ায় ভবিষ্যতে আরও লাভের আশা করছে তারা। সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন।