দেশে মুদ্রাস্ফীতি নেই নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যও সহনীয় পর্যায়ে : অর্থমন্ত্রী
সোহেল রহমান : চলতি অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাস ধরে মুদ্রাস্ফীতির হার টানা বাড়লেও দেশে মুদ্রাস্ফীতি নেই বলে দাবি করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। একই সঙ্গে বর্তমানে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যও সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
ইংরেজী নববর্ষের প্রথম দিন শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব দাবি করেন। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ কর্তৃক এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে বাংলাদেশ-এর উত্তরণের সুপারিশ অনুমোদন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, মুদ্্রাস্ফীতি সারাবিশ্বেই আছে। বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি নেই। গত ১৫ বছরে মুদ্রাস্ফীতির হার গড়ে ৫ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে ওঠা-নামা করেছে। এ সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশে আরও বেশি মুদ্রাস্ফীতি ছিল। কাজেই আমি বলব, বাংলাদেশ একটি অসাধারণ দেশ। আমাদের এখানে মুদ্রাস্ফীতি নেই।
প্রসঙ্গত: বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর হিসাব মতে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট (মাসওয়ারি) ভিত্তিতে মুদ্রাস্ফীতির হার এখন প্রায় ৬ শতাংশ। গত ২৬ ডিসেম্বর এ হিসাব প্রকাশ করা হয়। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত নভেম্বরের শুরুতে দেশে লিটার প্রতি ডিজেলের দাম ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর চাপ পড়েছে দ্রব্যমূল্যে ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়। ডিজেলের দাম বাড়ানো ঠিক হয়েছে কি-নাÑ এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি সকল বিষয়ে হস্তক্ষেপ করি না। সব কিছু দেখি না। যারা এ বিষয়ে দেখেন তাদের কাছে প্রশ্ন করুন।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জানান, নতুন বছরে প্রবাসীদের জন্য একটি সুখবর রয়েছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর প্রণোদনার হার ২ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে আড়াই শতাংশ (২.৫%) নির্ধারণ করা হয়েছে। বর্ধিত এ হার চলতি ১ জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, এর ফলে আশা করছি, প্রবাসীরা বৈধ পথে অর্থাৎ ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে আরও উৎসাহিত হবেন। সামনে যে দুটি ঈদ আছে তখন রেমিট্যান্স বেশি আসবে। গতবছর ২ হাজার ৫০০ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স এসেছে। এ বছর রেমিট্যান্স আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ৬ বিলিয়ন ডলার। এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্যই প্রণোদনার হার বাড়ানো হয়েছে।
প্রসঙ্গক্রমে অর্থমন্ত্রী বলেন, বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসলে অর্থনীতি গতিশীল হয়। আমি যখন পরিকল্পনামন্ত্রী ছিলাম, তখন জরিপ করে দেখেছি যে, মোট রেমিট্যান্সের ৪৯ শতাংশ আসে অবৈধ পথে, তথা হুন্ডির মাধ্যমে। বৈধ পথে রেমিট্যান্স আসা উৎসাহিত করতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রথমবারের মতো রেমিট্যান্সের ওপর ২ শতাংশ প্রণোদনা দেয়া হয়। এরপর থেকেই রেমিট্যান্স প্রবাহ দ্রুত বাড়তে থাকে। আমি মনে করি ২ শতাংশ প্রণোদনা কাজে লেগেছে। কারণ রেমিট্যান্স পাঠাতে যে একটি খরচ করতে হয়, তারা সেটি কাভার করতে পারছেন।
অভিযোগ রয়েছে, রেমিট্যান্সের টাকা দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানোর মাধ্যমে টাকা পাচার করা হয়Ñ সাংবাদিকদের এমন এক প্রশ্নের সরাসরি কোনো জবাব না দিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার বাইরে কোনো কিছু করা যায় না। যারা টাকা পাচার করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমদানি বাড়া ভালো। আমদানি বাড়লে রপ্তানিও বাড়ে। রপ্তানি খাতে ইন্সেন্টিভ দেয়া হয়েছে। এজন্য রপ্তানি বাড়ছে। দেশের টাকা দেশের মধ্যেই থাকুক। এজন্য যা যা কিছু করা দরকার, তাই করা হবে।