নতুন বছর হবে শেয়ারবাজারবান্ধব আশা বিনিয়োগকারীদের
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার মহামারি করোনা ভাইরাসের মধ্যে বেশ চাঙ্গা ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় দেখতে চায় বিনিয়োগকারীরা। আজ রোববার থেকে শুরু হচ্ছে নতুন বছরের লেনদেন। এদিকে দীর্ঘ এক দশক পর ২০২১ সাল শেয়ারবাজার ছিল গতিশীল। বিদায়ী বছরে বাজার মূলধন ও লেনদেনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেশের শেয়ারবাজার। করোনা অতিমারীর মধ্যেও দীর্ঘ এক দশক পর প্রতিদিনই নিত্য নতুন রেকর্ড গড়ে শেয়ারবাজার। নতুন বছরে শেয়ারবাজার বান্ধব আশা করেন বিনিয়োগকারীরা। বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা করছেন নতুন বছরে এক নতুন মাইলফলকে পৌঁছাবে দেশের শেয়ারবাজার। নতুন বছরের প্রত্যাশা নিয়ে বিনিয়োগকারী রাজ্জাক বলেন, ২০২১ সাল আমাদের জন্য বেশ ভালো ছিল। সেই ধারাবাহিকতায় দেখতে চাই
বাচ্চু নামের এক বিনিয়োগকারী বলেন, আশাকরি ২০২২ সালে আমাদের জন্য একটি সুন্দর বছর হিসেবে দেখা দিবে। শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টরা বাজার ভালো রাখতে প্রয়োজনী পদক্ষেপ নিবে বলে আমরা আশা করি। ২০১০ সালের ভয়াবহ ধসে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের যে ক্ষতি হয়েছিল তা এখনও কাটিয়ে ওঠা সম্ভাব হয়নি। আশা করি নতুন বছরে আমরা অতিতের সব হতাশা কাটিয়ে নতুন স্বপ্ন দেখার সুযোগ পাবো।
২০২১ সালের শেষ কার্যদিবসও সূচকের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়। বছরজুড়ে অধিকাংশ সময় শেয়ারবাজারে সূচক ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বছরের মাঝামাঝি সময়ে শেয়ার বাজারে সূচক বেড়ে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে। একই সঙ্গে বাজার মূলধন এবং লেনদেন বেড়েও নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। ২০২১ সালে ৩ জানুয়ারি প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ছিল চার লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৭ কোটি চার লাখ ১ হাজার ৮৩ টাকা আর বছরের শেষ কার্যদিবস ৩০ ডিসেম্বর এসে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪২ হাজার ২১৯ কোটি টাকা ৬৩ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা। বা বছর ব্যবধানে ডিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে ৫৫৮ কোটি ৯ লাখ ৭ হাজার ৮১ টাকা।
আগামীতে নতুন রেকর্ড গড়ার পূর্ব পর্যন্ত ২০২১ সাল শেয়ার বাজারে ইতিহাস হয়ে থাকবে। তবে সম্ভাবনাময় এ খাতে ভবিষ্যতে আরও নতুন রেকর্ড গড়বে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরাও বিনিয়োগকারীরা মনে করেন, বর্তমান শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত- উল- ইসলাম দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে গতি ফিরে এসেছে শেয়ারবাজারের। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরে এসেছে। গড়তে থাকে একের পর এক নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে আবার ভাঙছে। তবে বছরের শেষ দিকে বাজার কারেকশন বেশি হয় মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তারা মনে করেন, নতুন বছর ২০২২ সাল চাঙ্গা হবে।
নতুন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের পর কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে বৈশ্বিক মহামারির মধ্যেও অভাবনীয় ভালো অবস্থান ধরে রেখেছে দেশের পুঁজিবাজার। যুক্তরাষ্ট্রভিওিক বিশ্বের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান ব্লুমবার্গের তথ্যের ভিওিতে এশিয়া ফ্রন্টিয়ার ক্যাপিটালের এক প্রতিবেদনে পারফরম্যান্স বিবেচনায় বিশ্বে শীর্ষস্থান অর্জন করেছে দেশের পুঁজিবাজার। এর আগে গত বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বরেও ‘বিশ্বসেরা’ হয় দেশের পুঁজিবাজার।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারির সময় ২০২০ সালে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে বাজারের জন্য ইতিবাচক নানা পদক্ষেপ নিয়ে তা বাস্তবায়নে জোড় দিয়েছিল। যার ফলে অতীতে যেসব বিনিয়োগকারী বাজারের প্রতি আস্থা হারিয়েছিল তারা ফিরে এসেছে। পরবর্তীতে ধীরে ধীরে বাজারে বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করে। যা এক বছর পর ২০২১ সালে লেনদেনে, সূচক, বাজার মূলধনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। তাতে সব কিছুতে নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়। যদিও সেটা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। তবে গত এক বছরে বাজারে সূচক বেড়েছে ১ হাজার ১৩৮ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন বেড়েছে ৭৭ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে বাজার আরও নতুন ইতিহাস গড়বে।
তারা আরও জানান, বর্তমান কমিশন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের শেয়ার বাজার তথা অর্থনীতি নিয়ে রোড শো করে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। যদি এসব প্রচারণা ইতিবাচক হয়ে থাকে তাহলে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারীদের আগমন ঘটবে। তাতে বাজার আবারও নতুন রেকর্ড গড়তে পারবে। তবে প্রত্যেক বিনিয়োগকারীদেরই সচেতনতার সঙ্গে বিনিয়োগ করার পরামর্শ দেন তারা।
এবিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ২০২১ সাল শেয়ারবাজারে জন্য ভালো একটা বছর কেটেছে। নতুন বছর শেয়ারবাজার ভালো হবে। ডিএসইর তথ্যমতে, ২০২১ সালে ডিএসইএক্স অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়েছে। একই চিত্র ছিল বাজার মূলধন এবং লেনদেনেও। ডিএসইএক্স গত ১০ অক্টোবর বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৭ হাজার ৩৬৭ পয়েন্টে। যা ৮ হাজার পয়েন্টকে ছোঁয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পরবর্তীতে নানা কারণে সূচকের উত্থান ধারা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া গত ৯ সেপ্টেম্বর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছিল ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩১৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
অতীতে কোনো সময় বাজার মূলধন এই পরিমাণ বাড়েনি। সেই সঙ্গে লেনদেনে রেকর্ড গড়ে পরিমাণ দাঁড়িয়েছিল ৩ হাজার ২৪৯ কোটি ৫৭ লাখ টাকা।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২১ সালের শুরুতে দেশের প্রধান শেয়ার বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ছিল ৫ হাজার ৬১৮ পয়েন্ট। ওই সময় বাজার মূলধন ছিল ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪১ লাখ টাকা। ৩০ ডিসেম্বর তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৭৫৬ পয়েন্ট এবং বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৪২ হাজার ১৯৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।