ওমিক্রনের আতঙ্ক নিয়ে বছর শুরু
শিমুল মাহমুদ : করোনা মহামারি মোকাবিলায় ২০২১ সাল ছিলো বাংলাদেশের সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বছর। ঘরবন্দি মানুষের আতঙ্ক, হতাশা আর হাসপাতালে ঠাঁয় না পাওয়া মানুষের বছর এটি। চ্যালেঞ্জ ছিলো মৃত্যু ঠেকানো । একই সঙ্গে ছিলো টিকা সংকট ও প্রাপ্তি নিয়ে প্রতিবন্ধকতা।
২০২১ সালের প্রথম দিন থেকে শেষ দিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কোভিড-১৯ বিষয়ক নিয়মিত বিজ্ঞপ্তি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ঐ বছর দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৮২ লাখ ৫১ হাজার ৭০৭ জন। আর শনাক্ত হয় ১০ লাখ ৭১ হাজার ৩৯ জন। এ সময়ে শনাক্তকৃত মধ্যে হাসপাতালে এবং বাসায় মারা যায় ২০ হাজার ৪৯৬ জন। সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান ১০ লাখ ৯০ হাজার ৪৪৫ জন।
গত বছরে ৫ ও ১০ আগস্ট করোনা আক্রান্ত হয়ে একদিনে সর্বোচ্চ ২৬৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। আর ২৮ জুলাই এক দিনে সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছিল।
২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে একজন নার্সকে টিকা দেওয়ার মধ্য দিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের টিকা কর্মসূচি শুরু হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি সরকার এখন ১২ বছর বা তার বেশি বয়সী শিশুদেরও টিকা দিচ্ছে এবং সীমিত পরিসরে বুস্টার ডোজ ক্যাম্পেইনও শুরু করেছে। শিগগির বুস্টার ডোজ আরও বড় পরিসরে শুরু হবে।
টিকার জন নিবন্ধন করেছেন ৭ কোটি ৫৭ লাখ ৬৭ লাখ ৪৩৩ জন। আর এখন পর্যন্ত প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৭ কোটি ৪১ লাখ ৬২২ জনকে এবং দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৫ কোটি ২৩ লাখ ৬৫ হাজার ৮৪৭ জন। অপেক্ষায় কত ১৬ লাখ ৬৬ হাজার ৫১১ জন। কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ব্যবস্থাপনা টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য ডা. মো. শামসুল হক বলেন, নিবন্ধন করে টিকার এসএমএসের জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করছেন; এমন প্রত্যেকে এখন থেকে এসএমএস ছাড়াই টিকা নিতে পারবেন।
তিিন বলনে, কেনা, উপহার, কোভ্যাক্স মিলে দেশে ২৪ কোটি টিকা আসছে। এর মধ্যে পাঁচ কোম্পানির টিকা রয়েছে।
এ পর্যন্ত সাড়ে ১২ কোটি টিকা প্রয়োগ করেছি। হাতে সাড়ে ১০ কোটি টিকা হাতে রয়েছে। কাজেই টিকার কোনো সঙ্কট হবে না বলে আমরা মনে করি। আগামী মার্চ-এপ্রিলের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া সম্পন্ন করা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনাকালের শুরু নানা ভুল থাকলে শেষটা আমাদের ভালো ছিলো। ডাক্তার, নার্সসহ স্বাস্থ্য পেশাদারদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর (ইপিআই) শক্তিশালী নেটওয়ার্কের কারণে এ সফলতা এসেছে।
যুক্তরাজ্য শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি’র সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট ডা. খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, আমরা এক অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে প্রবেশ করছি নতুন একটি বছরে। এযাবৎকালের সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। গোটা পৃথিবীতে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে এক দিনে। এখন সর্বাপেক্ষা আক্রান্ত অঞ্চল আমেরিকা এবং ইউরোপ। ওমিক্রন মারাত্মক না হলেও অত্যান্ত ছোঁয়াচে। এর প্রভাব কেমন হবে তা আমাদের অজানা।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, আগামী সপ্তাহের মধ্যেই প্যাটার্নটা বোঝা যাবে। তবে শনাক্ত ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এটা খুবই আশঙ্কাজনক। আমরা বুঝতে পারছি না, ওমিক্রন কোনদিক থেকে আসছে, এটাই ভয়ংকর। ঢাকায় এত রোগী কোথা থেকে এলো, সেটা আগে খুঁজে বের করা দরকার।
আইইডিসিআর-এর সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বর্তমান উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, এটা ওমিক্রনের প্রভাব। ওমিক্রনের ক্লাস্টার ট্রান্সমিশন হচ্ছে ঢাকায়। আগে ছিল স্পোরাডিক ট্রান্সমিশন (বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন সংক্রমণ)। এখন সেটা ক্লাস্টারে গিয়েছে। এরপর যাবে কমিউনিটিতে।
তিনি আরও বলেন, দেশে আইসোলেশন সবচেয়ে বেশি দরকার। আক্রান্তদের ঘরে রাখতে হবে। তাদের জন্য সহযোগিতামূলক ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক সমর্থন যদি তাদের না দেওয়া হয়, তবে রোগী হু হু করে বেড়ে যাবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক বে-নাজির আহমেদ জানান, বাংলাদেশ টিকাদান কার্যক্রমের শুরুটা ভালো করেছিল। মাঝে হোঁচট খেয়েছে। পরে আবার খুব ভালোভাবে সেখান থেকে উঠে আসতে পেরেছে। যাতে টিকা নিয়ে আশ্বস্ত হয় সেই ব্যবস্থা করতে হবে। আর দ্রুত টিকা না দিতে পারলে বিপদ আসন্ন।