মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫০ শতাংশ
নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। ক্রমবর্ধমান হারে বেড়েই চলছে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা। দেশে ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছে ৫০ দশমিক ৪৭ শতাংশ। একইভাবে ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালেও মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বেড়েছিল ১৫ শতাংশ। অথচ গত দুই বছর সড়কে অন্যান্য দুর্ঘটনা প্রায় সমান ছিল। ফলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে এখনই মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ করা উচিৎ। বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশের সড়কেও মোটরসাইকেলের সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে।
শনিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনার বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করে মোটরসাইকেল কমিয়ে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ আই মাহবুব উদ্দিন আহমেদ। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হামিদুজ্জামান, রোড সেফটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকীসহ আরও অনেকে।
দেশের ৭টি জাতীয় দৈনিক, ৫টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক সংবাদমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। লিখিত বক্তব্যে সংগঠনটি জানায়, ২০২১ সালে সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫৩৭১টি। এর মধ্যে নিহত হয়েছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন এবং আহত ৭ হাজার ৪৬৮ জন। নিহতদের মধ্যে ৯২৭ জন নারী ও ৭৩৪ জন শিশু। আর ২০৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহতের সংখ্যা ২২১৪, যা মোট নিহতের ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। আর মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৫২৩ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৪ দশমিক ২৩ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৯৮ জন, অর্থাৎ ১২ দশমিক ৬৯ শতাংশ।
এ সময়ে ৭৬টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৫৯ জন নিহত, ১৯২ আহত এবং ৪৭ জন নিখোঁজ রয়েছে। ঝালকাঠির সুগন্ধ্যা নদীতে ১টি লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকা-ের ঘটনায় ৫১ জন নিহত, ২৩ জন চিকিৎসাধীন এবং অজ্ঞাত সংখ্যক নিখোঁজ রয়েছে। এছাড়ার ঈদে ঘরমুখো যাত্রায় শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ফেরি ঘাটে তাড়াহুড়া করে নামার সময় ৬ জন নিহত এবং ৩১ জন আহত হয়েছে। ১২৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ১৪৭ জন নিহত এবং ৩৯ জন আহত হয়েছে।
প্রতিবেদেন আরও বলা হয়, দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়— মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ২২১৪ জন (৩৫.২৩ শতাংশ), বাস যাত্রী ৩৮৯ জন (৬.১৯শতাংশ), ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-ট্রাক্টর-ট্রলির যাত্রী ৪৫৭ জন (৭.২৭ শতাংশ), মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার-এ্যাম্বুলেন্স-জিপের যাত্রী ২৭৬ জন (৪.৩৯ শতাংশ), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক, সিএনজি, অটোরিকশা, অটোভ্যান, মিক, টেম্পু ও লেগুনা) ৯৩৪ জন (১৪.৮৬ শতাংশ), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন,ভটভটি, আলমসাধু, পাখিভ্যান, চান্দের গাড়ি, বোরাক, মাহিন্দ্র ও টমটম) ৩৫৯ জন (৫.৭১ শতাংশ) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা রিকশাভ্যান-ঠ্যালাগাড়ি আরোহী ১৩২ জন (২.১০ শতাংশ) নিহত হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২০১৪টি (৩৮.৪৯ শতাংশ) জাতীয় মহাসড়কে, ১৬৭০টি (৩১.০৯ শতাংশ) আঞ্চলিক সড়কে ৯৫৪ টি (১৭.৭৬ শতাংশ) গ্রামীণ সড়কে, ৬৬৫টি (১২.৩৮ শতাংশ) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৬৮টি (১.২৬ শতাংশ) সংঘটিত হয়েছে। দুর্ঘটনাসমূহের ১০৫৭টি (১৯.৬৭ শতাংশ) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৮১৩টি (৩৩.৭৫ শতাংশ) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৫৬৬টি (২৯.১৫ শতাংশ) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়া, ৮২২টি (১৫.৩০ শতাংশ) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১১৩টি (২.১০ শতাংশ) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।
সংগঠনটি জানায়, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২০ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে দশমিক ৮৯ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ৪ দশমিক ২২ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ৩ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আবার ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে দুর্ঘটনা বেড়েছে ১৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ, প্রাণহানি বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭০ শতাংশ এবং আহত বেড়েছে ১ দশমিক ২০ শতাংশ। এরপর পৃষ্ঠা ৭, সারি ৩