বাঁশখালীর পুঁইছুড়িতে দিনে ও রাতে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন হচ্ছে
কল্যাণ বড়ুয়া: চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার পুঁইছুড়ি ইউনিয়নের নাপোড়া ছড়া সরকারি ভাবে বালি উত্তোলনের জন্য লিজ দেওয়া হলেও এ এলাকার আরো ২০/২৫ পয়েন্টে ও ছড়া থেকে অবৈভাবে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। পাহাড়ের পাদদেশে বেয়ে আসা ছড়া হতে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে যেমন বিনষ্ট হচ্ছে পরিবেশ, অন্যদিকে পাহাড় ধ্বসে বিশাল ক্ষতি সম্মুখীন হচ্ছে বনভূমি। যার কারনে ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে রাস্তা ঘাট। বালু ব্যবসায়ীরা রাতভর বালু উত্তোলন করে ট্রাক যোগে চড়া দামে বালি বিক্রি করতে পারায় নতুন নতুন সদস্য যোগ হচ্ছে এ কাজে । বাঁশখালী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দু একবার অভিযান ও মালামাল জব্দ করলে তা রোধ করা যাচেছ না কিছুতেই । অনেকে নিজের জায়গা থেকে বালি তুলছি অজুহাতে এ কাজ করে যাচ্ছে দেদারচ্ছে। এই শুষ্ক মৌসুমে এলাকায় প্রবাসী ও ব্যবসায়ীরা পাঁকা ভবন তৈরির কার্যক্রম শুরু করায় বালুর চাহিদা বেড়ে গেছে। পাহাড়ের পাশের এ ছড়া থেকে বালু কেটে পাচার করায় বর্তমানে নদীর রূপ নিচ্ছে। যার ফলে ফরেস্ট অফিস সংলগ্ন কয়েক বছর পূর্বে নির্মিত ব্রীজটির পাশ থেকে অতিরিক্ত বালি উত্তোলনের কারণে পিলারের গোড়ার মাটি সরে গিয়ে ব্রীজ ভেংগে পড়েছে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এসব কর্মকান্ডে বাধা না দিয়ে নীরব ভুমিকা পালন করছে। গাছ পাচার, পাহাড় ও ছড়া কাটার ক্ষেত্রে কেউই বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করছে না। পাহাড় কেটে ও ছড়া থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ভারসম্য নষ্ট হচ্ছে। বিলীন হয়ে যাচ্ছে বির্স্তৃন পাহাড় ও সবুজ বনভূমি, বর্তমানে এই বনভূমি চুনতি অভয়ারন্য হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। ফলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দিন দিন মরভুমিতে পরিণত হচ্ছে। সরজমিনে বাঁশখালী উপজেলার পুইছড়ি ইউনিয়ন ছাড়াও বাঁশখালী দৃর্গম পাহাড়ী এলাকা পূর্ব চাম্বলের হরিনাঘোনা, বড়ডেপা, চরার ঘাট,পাতলা মার্কেটও পুঁইছড়ি ইউনিয়নের পূর্ব পুঁইছড়ি, দক্ষিণ পুঁইছুড়ি সাইরপাড়া ছড়া, নাপোড়া ছাড়া, বৈলছড়ী আজিজিয়া মিল্লিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন ছড়া, কালীপুরে ছড়া,পূর্ব বৈলছড়ি ছড়া, পূর্ব চেচুরিয়া, পূর্ব কোকদন্ডি ছড়া,সাধনপুর সাহেবের হাট সংলগ্ন সাধনপুর ইউপি কার্যালয়ের পাশের ছড়া, খানখানাবাদ ইশ্বর বাবুর হাটে ও পুকুরিয়া সাঙ্গু নদী থেকে স্থানীয় প্রভাবশালী ক্ষতিপয় রাজনৈতিক নেতা জনপ্রতিনিধি সকলে এই অবৈধ ব্যবসায় লিপ্ত রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে সরকারী অনুমোদন বিহীন অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে রাস্তা-ঘাট ও শত শত বছরের পাহাড় গুলো ধ্বংস হয়ে বনায়নের ব্যাপত ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে।
যেভাবে টিলা, ছড়া, পাহাড় কেটে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে তা খুবই বিপর্যয়। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ চরমভাবে হুমকির মুখে পড়বে। এদিকে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বালু উত্তোলনের খবর পেয়ে গত মঙ্গলবার উপজেলার পুঁইছুড়ি ইউপি’র পূর্ব পুঁইছুড়ি এলাকায় ছড়া হতে অবৈধ ভাবে বিপুল পরিমাণ বালু উত্তোলনের দৃশ্য দেখা যায়। ভুক্তভোগীরা এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
ইউপি সদস্য মো. ফজলুল কবির ফজু বলেন, বালু-খেকোদের উৎপাতে গ্রামবাসী অতিষ্ঠ। আমি অনেকবার বারণ করার পর ও তারা অবাধে বালু উত্তোলন করছে। প্রশাসনিকভাবে বালু তোলা বন্ধ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। বালু তোলার কারণে ছড়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে একটি ব্রীজ ভেঙ্গে পড়েছে। ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে রাস্তাঘাট।
পুঁইছুড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সোলতানুল গনী চৌধুরী জানান, পূর্ব পুঁইছুড়ি এলাকা থেকে বালু উত্তোলনের ফলে একদিকে রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যদিকে এলাকার সাধারন মানুষের বাড়িঘর থেকে শুরু করে ফসলী জমি বিলিন হয়ে পড়ছে। অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের ফলে রাস্তা-ঘাট ও শত শত বছরের পাহাড় গুলো ধ্বংস হয়ে বনায়নের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হচ্ছে। সাধারণ জনগণের কথা বিবেচনা করে এর প্রতিকার চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, অবৈধভাবে বালু উত্তোলন কারিদের বিরোদ্ধে অভিযান ও জরিমানা করা হচ্ছে । বৈলছড়িতে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকা অবৈলবালি নিলাম করা হয়েছে । তার পরেও যারা এ কাজে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে থানা পুলিশ ও ভূমি অফিসকে প্রয়োজনীয় দির্ক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে নাপোড়া এলাকায় পাহাড় কেটে মাঠি বিক্রি কারীদের কে জরিমান করা হয়েছে কোন অবস্থায় অবৈধ বালি ব্যবসায়ীদের ছাড় দেওয়া হবেনা বলে তিনি জানান । সম্পাদনা: সঞ্চয় বিশ্বাস