একদিন পর আবারও শেয়ারবাজারে বড় উত্থান
মাসুদ মিয়া : দেশের শেয়ারবাজার এক কার্যদিবস দরপতনের পর সোমবার আবারও সূচকের বড় ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এদিন প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) মূল্যসূচকের বড় উত্থান হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে লেনদেনের পরিমাণ। সূচক ও লেনদেনের পাশাপাশি দুই বাজারেই লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে প্রায় এক ডজন কোম্পানির শেয়ার দিনের দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমা স্পর্শ করেছে। এমনকি একপর্যায়ে এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারের বিক্রেতাও উধাও হয়ে যায়।
এর আগে নতুন বছরের প্রথম পাঁচ কার্যদিবস শেয়ারবাজার টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকে। এতে বছরের প্রথম সপ্তাহেই প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রধান মূল্যসূচক ২৩০ পয়েন্ট বেড়ে যায়। আর বাজার মূলধন বাড়ে ১৫ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা। তবে চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার কিছুটা দরপতন হয়। ডিএসইর প্রধান সূচক ৫৪ পয়েন্ট কমে যায়।
এবিষয়ে বাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, নতুন বছরের ৭ কার্যদিবস লেনদেন হয়েছে এর মধ্যে ৬ কার্যদিবস শেয়ারবাজার সূচক ঊর্ধ্বমুখী থাকে। এটা শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক।
সংশ্লিষ্টরা আরও বলেন, ২০২১ সাল শেয়ারবাজারে জন্য ভালো একটা বছর কেটেছে। নতুন বছর সেই ধারবাহিকতায় রয়েছে। বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করার সময় কোন কোম্পানির শেয়ার কিনছে। তার অবস্থা কি, তার পিওরেশি অবস্থা কি, সবকিছু যাচাই বাছাই করে শেয়ার কিনতে হবে। আবেগ দিয়ে শেয়ার কিনা ঠিক হবে না। বর্তমান বাজার নিয়ে খুব একটা উদ্বেগের কারণ নেই। তবে আমি মনে করি, সার্বিকভাবে শেয়ারবাজার এখনো বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট উপযুক্ত সময় তারপরও দেখে শুনে বিনিয়োগ করা উচিত মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল ডিএসইতে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। ফলে ডিএসইতে লেনদেন শুরু হতেই প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স প্রায় ৩০ পয়েন্ট বেড়ে যায়।
তবে অল্প সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি বদলে যায়। একপর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১০ পয়েন্ট কমে যায়। এতে আবারও দরপতনের শঙ্কা পেয়ে বসে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। অবশ্য বেলা ১১টার পর থেকে আবার বদলাতে থাকে চিত্র। পতনের তালিকা থেকে বেরিয়ে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। যা অব্যাহত থাকে লেনদেনের শেষ পর্যন্ত।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় ৬১ পয়েন্ট কমে ৬ হাজার ৯৯৪ পয়েন্টে উঠে এসেছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক ২৭ পয়েন্ট বেড়ে ২ হাজার ৬০৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১২ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ৪৮০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
দিনভর ডিএসইতে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৮৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আগের দিন লেনদেন হয় ১ হাজার ৪৬১ কোটি ৮ লাখ টাকা। সেই হিসাবে লেনদেন বেড়েছে ২৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। বাজারটিতে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে ১৭৮টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ১৫৮টির। আর ৪১টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়লেও ১১টি কোম্পানি বড় দাপট দেখায়। এই ১১ কোম্পানির মধ্যে রয়েছে- পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, রংপুর ফাউন্ড্রি, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, ইনফরমেশন সার্ভিসেস, বসুন্ধরা পেপার, কপারটেক, ইস্টার্ন হাউজিং, একমি পেস্টিসাইড, পাওয়ার গ্রিড ও তিতাস গ্যাস।
এই ১১ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম দিনের লেনদেন শুরুর অল্প কয়েক মিনিটের মধ্যে সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায় এবং লেনদেনের শেষ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকে। ফলে লেনদেনের প্রায় সম্পূর্ণ সময় ধরেই এই কোম্পানিগুলোর বিক্রয় আদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকে। এদিকে সূচকের বড় উত্থানের বাজারে ডিএসইতে টাকার অংকে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে পাওয়ার গ্রিডের শেয়ার। কোম্পানিটির ১০১ কোটি ২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকোর ৯৪ কোটি ২৯ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ৬৫ কোটি ৫৮ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন।
লেনদেনের ভিত্তিতে (টাকায়) প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো- পাওয়ার গ্রীড, বেক্সিমকো লি., বিএসসি, বিএসসিসিএল, ফরচুন সুজ, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, তিতাস গ্যাস, জিপিএইচ ইস্পাত ও সাইফ পাওয়ার।
দর বৃদ্ধির শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো- পপুলার লাইফ ইন্স্যুরেন্স, ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্স, রংপুর ফাউন্ড্রী, বিএসসি, আইএসএন, বসুন্ধরা পেপার, কপারটেক, ইস্টার্ন হাউজিং, একমী পেসটিসাইড ও পাওয়ার গ্রীড।
অন্যদিকে দর কমার শীর্ষে প্রধান ১০টি কো¤পানি হলো- ঢাকা ডাইং, তৌফিকা ফুডস, কেডিএস এক্সেসরিজ, সোনালী পেপার, আইসিবি এএমসিএল সেকেন্ড মি. ফা., এসইএমএল আইবিবিএল শরিয়াহ ফান্ড, এসআইবিএল, এমটিবিএল, আরএন স্পিনিং ও মীর আকতার হোসেন। অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ১৬৬ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩০৫টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪০টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১২৭টির ও ৩৮টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।