লকডাউন না দিয়ে গণসচেতনতা তৈরির আহ্বান এফবিসিসিআই সভাপতির
মো. আখতারুজ্জামান : চলমান করোনা সংক্রমণ রোধ করতে লকডাউন নয়, গণসচেতনতা তৈরির আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন।
লকডাউন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণ এড়াতে লকডাউন কোনো সমাধান নয়। এতে নি¤œ আয়ের মানুষ চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে গণসচেতনতা তৈরি করতে হবে। পৃথিবীর কোনো দেশ লকডাউন দিয়ে সফল হয়নি। বাংলাদেশও এ পথে এগুবে না বলে বিশ্বাস করি।
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) আয়োজিত মিট দ্যা রিপোর্টার্স অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ডিআরইউ সভাপতি নজরুল ইসলাম মিঠু ও সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব।
এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, করোনা মহামারির প্রথম বছরে লকডাইনের কারণে ১৩ থেকে ১৪ দিন শিল্প কারখানা বন্ধ ছিল। ওই সময় যেসব শ্রমিক গ্রামে চলে গেছেন তাদের প্রায় ১০ শতাংশ শ্রমিক আর ফিরে আসেনি। ফলে উৎপাদন ও রপ্তানি ব্যাপক হারে কমে গেছে। আবারও লকডাউন দেওয়া হলে অর্থনীতি ও ব্যবসায় খাত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, এতদিন বিদেশী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা ছিলো পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব। কিন্তু এখন পদ্মাসেতু, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল এবং ১’শটি অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের ফলে দেশে বিনিয়োগ বান্ধব অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।
এসময় ব্যাংকগুলোকে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পখাতে আরও বেশি ঋণ দেয়ার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। ব্যাংকগুলোর মোট ঋণের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য বরাদ্দ রাখার বিধান করার পরামর্শ দেন তিনি।
এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী সময়ে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়বে বাংলদেশ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করা জরুরি। বিশ্ব বাণিজ্যের ৯০ শতাংশই হয় ছয়টি ব্লকের মধ্যে। তাই রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি), ইউরোপীয় ইকোনমিক ইউনিয়ন, ইউএসএ, ইইউ, ইউকে ও আফ্রিকান কন্টিনেন্টাল ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট -এই ছয়টি ব্লকের সঙ্গে এফটিএ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
এলডিসি উত্তর সময়ে দরকষাকষির জন্য বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর জোর দেন তিনি। বেসরকারি খাতের সক্ষমতা বাড়াতে এফবিসিসিআই ইনোভেশন সেন্টার প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বিভিন্ন খাতের গবেষণা ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। এফবিসিসিআই’র নিজস্ব গবেষণা সক্ষমতা বাড়াতে বিভিন্ন খাতের ১৮ জন বিশেষজ্ঞকে প্যানেল উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাদের বিশ্লেষণ ও মতামতের ভিত্তিতে বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে এফবিসিসিআই আরো কার্যকর ভূমিকা রাখবে। উন্নয়নশীলে দেশে রুপান্তর পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ সংগ্রহ ও ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণ, গ্লোবাল মার্কেট অ্যাক্সেস ২০২১-২০২৬, টেকসই অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগ ব্যবস্থা ও টেকসই রপ্তানি উন্নয়ন, ভর্তুকি ও প্রণোদনা শীর্ষক চারটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
সরকারের বিভিন্ন নীতি বাস্তবায়নের দায়িত্ব বেসরকারি খাতের। কিন্তু এসব নীতি প্রণয়নের আগে সংশ্লিষ্ট খাতের সঙ্গে আলোচনা করা হয়না। তাই বাস্তবায়নের সময় ব্যক্তিখাতের উদ্যোক্তাদের নানামুখী সমস্যায় পড়তে হয়। তাই নীতি প্রণয়নের আগে খাতসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করার ও নীতির প্রভাব মূল্যায়নের আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন।
তিনি আরও বলেন, যে দেশ যত বেশি লকডাউন দিয়েছে সেই দেশের অর্থনীতি তত বেশি ক্ষতি হয়েছে। অনেক দেশে ১০ শতাংশ পর্যন্ত নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি ভালো ছিল। করোনার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি ৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ হয়েছে।
সবাইকে দ্রুত টিকার আওতায় আনার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ব্যবসা, শিল্প-কারখানায় জড়িত সকল শ্রমিক ও কর্মচারীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিতে হবে। এই মূহুর্তে প্রচুর ক্রয়াদেশ আসছে। ব্যবসায়িক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয় এমন সিদ্ধান্ত থেকে বিরত থাকতে হবে।
ব্যবসা খাতে ক্ষতি হলে অর্থনৈতিকভাবে দেশ পিছিয়ে যাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, উন্নত দেশ হতে হলে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। চলমান রাখতে হবে অর্থনৈতিক কার্যক্রম।
সামনে কর্পোরেট ঋণে বড় ঝুঁকি দেখা দিতে পারে বলেও সভায় আশঙ্কা প্রকাশ করেন এফবিসিসিআই সভাপতি। এসময় দোকান মালিক ও অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের টিকা গ্রহণের ব্যাপারে উৎসাহীত করতে মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।