সালমা-রিতুর বিশ্বরেকর্ড জুটি আর নাহিদার বোলিং রেকর্ডে বাংলাদেশের জয়
অর্থনীতি ডেস্ক : টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৫০ রানেই নেই ৬ উইকেট! কেনিয়ার বিপক্ষে বিব্রতকর অবস্থায়ই পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। সেখান থেকে দলকে উদ্ধার করে সালমা খাতুন ও রিতু মনির বিশ্বরেকর্ড গড়া জুটি। পরে নাহিদা আক্তারের রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে ভেঙে পড়ে কেনিয়ার ব্য্যাটিং। বাংলাদেশ মাঠ ছাড়ে বড় জয় নিয়েই।
কুয়ালা লামপুরে কমনওয়েলথ গেমস মেয়েদের ক্রিকেট বাছাইয়ে কেনিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয় ৮০ রানে। আসরে এটি বাংলাদেশের টানা দ্বিতীয় জয়।
কিনরারা একাডেমি ওভাল মাঠে বুধবার ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১২৫ রান। রান তাড়ায় কেনিয়া গুটিয়ে যায় স্রেফ ৪৫ রানে। ৯ ওভার শেষে বাংলাদেশের রান ছিল ৬ উইকেটে ৫০। সপ্তম উইকেটে সালমা ও রিতু গড়েন ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।
মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে এটি সপ্তম উইকেটের রেকর্ড। আগের রেকর্ড ছিল তাঞ্জানিয়ার মনিকা পাসকাল ও নাসারা সাইদির। ২০১৯ সালে তারা উগান্ডার বিপক্ষে রুয়ান্ডায় সপ্তম জুটিতে তুলেছিলেন ৭২ রান। তবে সালমা বা রিতু নন, ম্যাচের সেরা বাংলাদেশের নাহিদা। ১২ রানে এই বাঁহাতি স্পিনারের শিকার ৫ উইকেট।
মেয়েদের টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সেরা বোলিং কীর্তি এটি। আগের সেরা ছিল ২০১৮ সালে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে পান্না ঘোষের ১৬ রানে ৫ উইকেট। স্পিন বোলিংয়ে ৫ উইকেট বাংলাদেশের এটিই প্রথম। ২০১২ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সালমা খাতুনের ৬ রানে ৪ উইকেট ছিল স্পিনে আগের সেরা।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামার পর এ দিন বাংলাদেশের শুরুটা খুব খারাপ ছিল না। মুর্শিদা খাতুনের সৌজন্যে প্রথম ২ ওভারেই আসে ২৪ রান।
তৃতীয় ওভারে বিদায় নেন ওপেনার শামিমা সুলতানা। আরেকপ্রান্তে মুর্শিদা রান তুলতে থাকায় তবু ৫ ওভারে ৪০ রান চলে আসে। এরপরই ছন্দপতন। কুইন্টর অ্যাবেল ও মার্সিলিন ওচিংয়ের বোলিংয়ে একের পর এক উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। অধিনায়ক নিগার সুলতানা, অভিজ্ঞ রুমানা আহমেদ, ফারজানা হকরা স্রেফ উইকেটে আসা যাওয়া করেন। ৮ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং।
সেই ধ্বংসস্তুপ থেকেই দারুণ লড়াইয়ে দলকে এগিয়ে নেন সালমা ও রিতু। একসময় দলের প্রধান ব্যাটার ছিলেন সালমা, ব্যাট করতে টপ ও মিডল অর্ডারে। সময়ের পরিক্রমায় ব্যাটিং ধার হারিয়ে এখন তিনি ব্যাট করে লোয়ার-মিডল অর্ডারে। অনেক দিন পর দলের প্রয়োজনে ব্যাট হাতে কার্যকর অবদান রাখতে পারেন তিনি।
আরেকপ্রান্তে অলরাউন্ডার রিতু মনি খেলেন তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। ৬৬ বলে ৭৫ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়েন দুজন।
বাংলাদেশের হয়ে সপ্তম উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটি ছিল মাত্র ৩৮ রানের। ২০১৯ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে লাহোরে ফারজানা হক ও লতা ম-ল গড়েছিলেন ওই জুটি।
৩ চারে ৩২ বলে ৩৩ রানে অপরাজিত থাকেন সালমা। ২০১৪ সালের মার্চের পর টি-টোয়েন্টিতে এটি তার সর্বোচ্চ ইনিংস। অবিশ্বাস্যভাবে ২০ ইনিংস পর তিনি ছুঁতে পারলেন দুই অঙ্ক।
৩ চারে ৩৪ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন রিতু। আগের ৩১ টি-টোয়েন্টিতে তার সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২৩ রানের। কেনিয়ার অফ স্পিনার কুইন্টর অ্যাবেল ১৪ রানে নেন ৩ উইকেট।
বাংলাদেশের বোলিংয়ের সামনে এরপর অনুমিতভাবেই দাঁড়াতে পারেনি কেনিয়া। নতুন বলে সালমা খাতুন উইকেট এনে দেন প্রথম ওভারেই। দুই চার মেরে বিপজ্জনক হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দেওয়া কুইন্টর অ্যাবেলকে বোল্ড করে দেন পেসার সুরাইয়া আজমিন।
মিডল অর্ডারে কিছুটা লড়াই করা শ্যারন জুমাকে (২০ বলে ২৪) থামান ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নামা সানজিদা আক্তার মেঘলা। আর কোনো ব্যাটার দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি।
কেনিয়ার মিডল ও লোয়ার অর্ডার ধসিয়ে দেন অভিজ্ঞ নাহিদা। তার ৫ উইকেটে লাগেনি কোনো ফিল্ডারের সহায়তা। বোল্ড করেন তিনজনকে, একজন এলবিডব্লিউ, একটি নিজের বলেই ক্যাচ। স্রেফ ১২.৪ ওভারেই শেষ হয় কেনিয়ার ইনিংস।
৫ দলের এই বাছাইপর্ব থেকে কেবল শীর্ষ দল যোগ্যতা অর্জন করবে মূল পর্বে খেলা। আগামী জুলাই-অগাস্টে বার্মিংহামে হবে কমনওয়েলথ গেমস। বাংলাদেশের মূল প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা, যাদের সঙ্গে লড়াই আগামী সোমবার। তার আগে রোববার ম্যাচ স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। সূত্র : বিডিনিউজ, বাংলানিউজ