শাবিপ্রবিতে ৪ টিলায় অগ্নিকান্ড উপাচার্যকে দায়ী করছেন শিক্ষার্থীরা
জহিরুল ইসলাম : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) অভ্যন্তরে ৪টি টিলায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। শনিবার ২৯ জানুয়ারি বিকালে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়।
এতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের টিলায় কে বা কারা আগুন দিয়ে গাছের চারা পুড়িয়ে দিয়েছে। আগুন লাগানোর বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছে। এভাবে আগুন ধরানোর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বনজ সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে।
তাছাড়া এ ধরণের আগুন থেকে বড় ধরণের অগ্নিকা- সংঘটিত হতে পারে এবং তা বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে। এতে বলা হয়, এবার ক্যাম্পাসে ৩০ হাজার চারা লাগানো হয়েছিল। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আভ্যন্তরীণ টিলায় আগুন জ্বালানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থেকে এর থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরস্থ বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল এবং শহীদ মিনার সংলগ্ন কয়েকটি টিলা, বঙ্গবন্ধু হল ও সৈয়দ মুজতবা আলী হল সংলগ্ন মোট ৪টি টিলায় আগুন লাগানো হয়েছে। এতে প্রায় ১ একর জায়গা পুড়ে গেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিলায় একাধিকবার আগুন লাগার ঘটনায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে দায়ী করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের এক বিজ্ঞপ্তিতে অভিযোগ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল ও শহীদ মিনার সংলগ্ন কয়েকটি টিলায় আগুন লাগিয়ে বন বিভাগের বনায়ন কর্মসূচির আওতায় লাগানো বেশকিছু গাছপালা ও বন উজাড় করা হয়েছে।
এছাড়া ওই এলাকা থেকে সিসিটিভি ক্যামেরা সরিয়ে ফেলার অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর মাধ্যমে চলমান আন্দোলন ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেন তারা।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অন্য বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ক্যাম্পাসের টিলাগুলোতে কে বা কারা আগুন দিয়ে গাছের চারা পুড়িয়ে দেয়। একদিকে আগুন নেভানোর পর অন্যদিকে আগুন দেয়া হয়।বিজ্ঞপ্তিতে টিলায় আগুন লাগার ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সজাগ থাকার অনুরোধ করা হয়েছে।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবি) ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা টং দোকান স্থাপন করেছেন। শনিবার প্রায় দুই সপ্তাহ চলা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসের একাডেমিক ভবন ‘ই’ ‘বি’ এবং ‘সি’ ভবনের পাশে তারা ‘চাষাভুষার টং’ নামে টং দোকান স্থাপন করেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তনের সময় কিছু টং দোকান এবং করোনার ছুটির সময় বাকি টং দোকানগুলো বন্ধ করে দিয়েছিল। এই দোকানগুলোতে শিক্ষার্থীরা স্বল্পমূল্যে খাবার খেতো এবং বন্ধুদের সঙ্গে টংয়ে বসে যুক্তি-তর্ক, আড্ডা, বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা আর সংস্কৃতি চর্চা করতো। এই টং দোকানগুলোই যেন সাংস্কৃতিক চর্চার প্রাণকেন্দ্র ছিলো। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সময় বন্ধ টং দোকান পুনরায় খোলার দাবি জানালেও প্রশাসন অনুমতি দেয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১৯ জানুয়ারি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নারী শিক্ষক ও শিক্ষকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছে এমন অভিযোগ এনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকে দাঁড়িয়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ জানান কিছু শিক্ষক। এ সময় অধ্যাপক ড. লায়লা আশরাফুন মন্তব্য করেছিলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষক। আমরা সম্মানটুকুর জন্য কাজ করি এবং সম্মানের জন্যই শিক্ষকতা পেশায় এসেছি। আমরা বুদ্ধিজীবী শ্রেণি ধারণ করি, আমরা কোনো চাষাভুষা নই যে আমাদের যা খুশি তাই বলবে।
তার ঐ মন্তব্যে চাষাভুষা মানুষকে ছোট করা হয়েছে এবং অসম্মানিত করা হয়েছে বলে দাবি করেছিলেন শিক্ষার্থীরা। ওই মন্তব্যের প্রতিবাদেই টং দোকানগুলোর নামকরণ চাষাভুষার টং করা হয়েছে বলে জানান আন্দোলনকারীরা।
এদিকে ক্যাম্পাসে খাবার দোকানগুলো বন্ধ করে দেওয়ায় শিক্ষার্থীরা নিজেরাই গোল চত্বরের পাশে একটি অস্থায়ী টং দোকান দেন। আন্দোলন চলাকালীন স্থাপন করা সেই দোকানের নামও চাষাভুষার টং রেখেছিলেন তারা। সেখানে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই দোকানি এবং ক্রেতাও শিক্ষার্থীরা।