দেশজুড়ে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে
শিমুল মাহমুদ : গত এক সপ্তাহ যাবত দেশজুড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ঢাকায় শীতভাব ততটা অনুভূত না হলেও, গ্রামীণ অঞ্চলগুলোতে এখন বেশ ঠা-া। দেশের হাসপাতালগুলোতে বেড়েছে ঠা-াজনিত রোগীদের চাপ।
সংশ্লিস্টরা জানান, শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি করোনা আতঙ্ক থাকায় রোগীদের ভীড় বেড়েছে হাসপাতালগুলোতে। জ্বর-ঠা-া, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুরা।
ঢাকা শিশু হাসপাতালে শ্বাসতন্ত্রের রোগ, ডায়রিয়ায়সহ শীতকালীন নানা রোগে আক্রান্ত ভর্তি রোগী সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালটির শিশু খাদ্য পুষ্টি ও প্ররিপাক-তন্ত্র বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. সাফি আহমেদ জানান, হাসপাতালের বহির্বিভাগে প্রতিদিন রোগী বাড়ছে। অনেক বাবা-মা জ্বর, সর্দি-কাশি, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়েরিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে হাসপাতালে আসছেন।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে বেড সংখ্যা মাত্র ২৬টি। অথচ মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলো প্রায় শতাধিক। বেশিরভাগ রোগীর ঠাঁই হয়েছে বারান্দার মেঝেতে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল: কয়েক এক সপ্তাহে রোগী বেড়ে কয়েক গুণ। শয্যা ফাঁকা না থাকায় নতুন রোগীদের পুরোনো রোগীর সঙ্গে একই বেডে দেওয়া হচ্ছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রতিদিন ২৫ থেকে ৩০ জন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগে শীতজনিত রোগের চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ রোগী।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবজাতক বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সহিদুল্লা বলেন, শীতকালে শুকনো আবহাওয়ায় সাধারণত বায়ুবাহিত ও ফুসফুসের রোগ বেশি হয়। আমাদের দেশে প্রতি বছর এ সময় সর্দি-কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহজনিত অ্যালার্জিক রোগ, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। সাধারণত বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসথ যেমন ইনফ্লুয়েঞ্জা ও প্যারাইনফ্লুয়েঞ্জার মাধ্যমে এ রোগের সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে শিশুদের এ রোগ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
সাধারণত আমাদের দেশের অপুষ্টিতে ভোগা কম ওজনের শিশুরাই এ ধরনের রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। আর দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা সুষম খাদ্য এবং যতেœর অভাবে পুষ্টিহীনতায় ভোগে। তাদের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম থাকে।
শিশু অসুস্থ হলে মায়ের বুকের দুধ দিতে হবে। সেইসঙ্গে নিয়মিত খাবার খাওয়াতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন তার ঠা-া না লাগে। তাদের ধুলাবালি থেকেও দূরে রাখতে হবে। শিশু একটানা তিন দিনের বেশি অসুস্থ থাকলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ বলেন, বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় অল্প ঠা-ায়ও তাদের নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্ট জাতীয় সমস্যা প্রকট, তাদের উচিত সব সময় গরম কাপড় পরিধান করা, গরম পানি পান ও ব্যবহার করা। বিশেষ প্রয়োজনে বাইরে গেলে অবশ্যই কানটুপি, মাফলার, জুতা-মোজা, হাতমোজাও ব্যবহার করা উচিত। যাদের অ্যাজমা আছে, তারা সব সময় ইনহেলার প্রস্তুত রাখুন এবং প্রয়োজন হলেই ব্যবহার করুন।
যাদের আগে থেকেই রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস, অস্টিও-আর্থ্রাইটিস এবং অন্যান্য অস্থিসন্ধি, অ্যানকাইলোজিং স্পন্ডিওলাইটিস, স্পন্ডাইলো আর্থ্রাইটিস, রি-অ্যাকটিভ আর্থ্রাইটিস ইত্যাদি সমস্যাও বাড়ে। এসবের মূল কারণ অবশ্য শীত নয়, বরং শীতকালে কাজকর্ম, শারীরিক পরিশ্রম বা নড়াচড়া কম হয় বলে এই সমস্যাগুলো বাড়ে।
প্রবল শীতে মানুষ অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে, নানা মানসিক রোগ দেখা দেয়। ট্রমা ও বিষণœতায় ভোগা এসব মানুষের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখতে হবে। এ সময় পরিবারের অন্য সদস্যদের তাঁদের সঙ্গে বেশি সময় দেওয়া উচিত। শীত এলেই কিছু চর্মরোগ নতুন করে আবির্ভূত হয়, যা গরমকালে খুব একটা দেখা যায় না। বিশেষ করে চামড়ার শুষ্কতা, চুলকানি, হাত-পা ফেটে যাওয়া, মুখে-জিহ্বায় ঘা ছাড়াও নানা ধরনের চর্মরোগ বা খোস-পাঁচড়া বেশি দেখা দেয়।
এ সময় বয়স্কদের বিশেষ যতœ নিতে হবে, কেননা এসব রোগের প্রবণতা তাদের বেশি থাকে। তাই তাদের বিছানা বা পরনের কাপড় যথেষ্ট পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখুন। এক বিছানায় গাদাগাদি করে যেন না ঘুমায়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।