চীনে রেজিম চেঞ্জ চান জর্জ সরোস
রাশিদ রিয়াজ : চীনের বর্তমান পরিস্থিতিকে ১৯৩৬ সালের জার্মানির সঙ্গে তুলনা করে জর্জ সরোস বলেন, প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশে^র মুক্ত সমাজের জন্যে সবচেয়ে বড় হুমকি। ১৯৩৬ সালে জার্মানির অলিম্পিকের সঙ্গে এবছরে বেইজিং শীতকালীন অলিম্পিকের তুলনা করেন সরোস। আরটি
চীনকে বিশে^র সবচেয়ে শক্তিশালী কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করে সরোস বলেন, বেইজিং অলিম্পিক গেমসকে দেশটির সরকার তার কঠোর নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রচারের জন্যে ব্যবহার করতে চায়। সিএনএন
একই সঙ্গে সরোস চীনের রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় ধস, বড় আর্থিক সঙ্কটের কারণে চীন সরকারকে দায়ী করে বলেন, গত বছর রিয়েল এস্টেট ব্যবসা একটি ভাল সময় অতিবাহিত করলেও এ খাতে শেষপর্যন্ত বড় আঘাত লেগেছে। সোমবার তিনি স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির হুভার ইনস্টিটিউশনে বক্তব্য রাখছিলেন। সরোস বলেন, রিয়েল এস্টেট শিল্পে প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আর আস্থা ফেরাতে সক্ষম হবেন বলে মনে হয় না।
ডেভেলপারদের ধারাবাহিক খেলাপি হওয়া, জমি ও এপার্টমেন্টের মূল্য পতনের পর মারাত্মক আঘাত লেগেছে এই খাতে। সিএনএন’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জর্জ সরোস আরো বলেছেন, চীনে রিয়েল এস্টেট ব্যবসা ফুলেফেঁপে উঠেছিল অস্থিতিশীল এক মডেলের ওপর ভিত্তি করে। এতে সুবিধা ভোগ করেছে স্থানীয় সরকারগুলো। পক্ষান্তরে প্রপার্টি খাতে নিজেদের জমানো সবটুকু সম্পদ বিনিয়োগ করতে উৎসাহী করা হয়েছে জনগণকে। এই শিল্পের এমন বিকাশ রোধ করতে নীতি ডিজাইন করে সরকার। যার ফলে এভারগ্রান্ডে’র মতো রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলো তাদের ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে মারাত্মক জটিল অবস্থায় পড়ে।
সব মিলিয়ে ডেভেলপারদের কমপক্ষে ৩০ হাজার কোটি ডলারের দায়বদ্ধতা কাঁধে এখন। এর মধ্যে রয়েছে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসেট ম্যানেজারদের কাছে ধার করা অফসোরে ১৯শ কোটি ডলার। তাদের মক্কেলের পক্ষে ঋণ আছে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর। ঋণদাতাদের অর্থ পরিশোধ করার জন্য কয়েক মাস ধরে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এভারগ্রান্ডে।
সরোস বলেন, পুনর্গঠন তদারকি করতে সরকারি কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়েছে কোম্পানিতে। তাতে কি ফল হয়েছে সে বিষয়ে পরিষ্কার কোনো তথ্য নেই বললেই চলে। এভারগ্রান্ডে আরও সময় চেয়ে আবেদন করেছে। কিন্তু বেশ কিছু ঋণদাতা আর অপেক্ষা করতে রাজি নয়। রোববার কোম্পানিটি বলেছে, হংকংয়ে একটি জমির প্লটের বিষয়ে রিসিভার নিয়োগ করা হয়েছে। এর বিপরীতে গত বছর ৫২ কোটি ডলার ঋণ দাবি করা হয়। জর্জ সরোস বলেন, এই সঙ্কট কর্তৃপক্ষ কিভাবে মোকাবিলা করে তা এখন দেখার পালা। চীনে কিভাবে ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে তা নিয়ে প্যানেল আলোচনা এবং তার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র কি সাড়া দেয় তা নিয়ে কথা বলেন তিনি। বলেন, এ কাজ তারা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থগিত করতে পারে। কারণ, জনগণের আস্থার ভিত নড়ে গেছে।
কয়েক বছর ধরেই চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এবং চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কড়া সমালোচক হয়ে উঠেছেন জর্জ সরোস। তাকে বলা হয় বিনিয়োগ বিষয়ক একজন কিংবদন্তি। এ ছাড়া তিনি ওপেন সোসাইটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যানও। সেপ্টেম্বরে তিনি বলেছেন, চীনে আরো ব্যবসা করে একটি ‘ট্রাজিক ভুল’ করতে অ্যাসেট বিষয়ক ম্যানেজার ব্লাকরক।
বেইজিংয়ের সার্ভিলেন্স পলিসি এবং বেসরকারি ব্যবসার বিরুদ্ধে দমনপীড়নের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করেছেন জর্জ সরোস। তার মতে, প্রপার্টি মার্কেট থেকে বড় রকম ঝুঁকির মুখোমুখি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। বেইজিংয়ে শীতকালীন অলিম্পিক শুরুর মাত্র চারদিন আগে এক বক্তব্যে এসব মন্তব্য করেন জর্জ সরোস। বলেন, রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় জীবনের সবটুকু সঞ্চয় বিনিয়োগ করেছেন অনেক মানুষ। কিন্তু মূল্য পতনের কারণে তারাই অবস্থান নেবেন শি জিনপিংয়ের বিরুদ্ধে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা কোনো প্রতিশ্রুতির মুখ দেখাচ্ছে না। আস্থা ফেরানোর জন্য অনেক রকম হাতিয়ার আছে জিনপিংয়ের হাতে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, তিনি কি তা যথাযথভাবে ব্যবহার করবেন?
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্লেষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন যে, এভারগ্রান্ডের পতন হলে তাতে চীনের প্রপার্টি মার্কেটে বড় রকম ঝুঁকি সৃষ্টি করবে। এতে বাড়ির মালিকদের স্বার্থে আঘাত লাগবে। আঘাত লাগবে বিস্তৃত আর্থিক ব্যবস্থায়। চীনে অর্থনীতিতে জাতীয় প্রবৃদ্ধির শতকরা প্রায় ৩০ ভাগ আসে রিয়েল এস্টেট ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শিল্প থেকে। গত বছর দেশটির অর্থনীতি সম্প্রসারিত হয়েছে শতকরা ৮.১ ভাগ। সরকারের নিজের যে টার্গেট ছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি এই হার। কিন্তু ২০২১ সালের শেষের মাসগুলোতে প্রবৃদ্ধি দুর্বল হয়েছে। এর কারণ রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় সঙ্কট, নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ, ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে আনতে কঠোর বিধিনিষেধ। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল আইএমএফ বলছে, ২০২২ সালে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নাটকীয়ভাবে ধীরগতির হয়ে শতকরা ৪.৮ ভাগে নামতে পারে।