বিশ্বের শীর্ষ ১০ ধনী থেকে ছিটকে পড়লেন জাকারবার্গ
রাশিদ রিয়াজ : দিনে ১০ লাখ ব্যবহারকারী হারাচ্ছে ফেসবুক। বৃহস্পতিবার শেয়ারবাজারে ফেসবুকের দরপতন ঘটে ২৬ শতাংশ। কোম্পানির জরুরি সভায় মার্ক জুকারবার্গকে রক্তবর্ণ চোখ নিয়ে হাজির হতে দেখা যায়। তিনি বলেও ফেলেন, ‘আমি কাঁদতে পারি’। ফেসবুকের সঙ্গে টিকটকের অপ্রত্যাশীত প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবেলায় ভিডিওর ওপর জোর দিতে পরামর্শ দেন জুকারবার্গ। ডেইলি মেইল
২০১২ সালে ওয়াল স্ট্রিটে ফেসবুক শেয়ার ছাড়ার পর এত বড় দরপতন এই প্রথম। কমপক্ষে ২শ বিলিয়ন বাজার মূলধন খোয়া গেছে ফেসবুকের যা গ্রিকের অর্থনীতির চেয়ে বেশি। মার্ক জুকারবার্গ তার মোট সম্পদ থেকে ২৯ বিলিয়ন ডলার হারিয়েছেন। টেক টাইটান হিসেবে পরিচিত জুকারবার্গ বিশে^ গত বুধবার পর্যন্ত সপ্তম ধনী হিসেবে ১১৩.১ বিলিয়ন ডলারের মালিক ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার শেয়ার ধসে তিনি বিশে^র শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকা থেকে নেমে যান ১২তম স্থানে। তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমান দাঁড়িয়েছে ৮৩.৪ বিলিয়ন ডলার।
ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা বুধবার লভ্যাংশের দ্রুত পতন সম্পর্কে নিরাশাজনক তথ্য প্রকাশ করার পর শেয়ারবাজারে লেনদেনের শুরুতেই ২২ ভাগ দরপতন ঘটে। দিনে ২শ কোটি ব্যবহারকারী ছিল ফেসবুকের। কোম্পানির সিএফও ডেভ ওয়েইনার বলেন প্রতিযোগিতামূলক সার্ভিসের কারণে তরুণ ব্যবহারকারীর সংখ্যা কমেছে। ফেসবুকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও অভিযোগও আরেক কারণ। ডেভ এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলক অ্যাপ টিকটকের কথা বার বার তুলে ধরেন। এমন আরও অ্যাপ আছে। এসব কারণে ফেসবুকের ব্যবহারকারী কমে থাকতে পারে। বিশ্লেষকরা প্রতিদিন ফেসবুকে ১৯৫ কোটি এক্টিভ ব্যবহারকারী থাকবেন বলে প্রত্যাশা করেন। কিন্তু মেটা এক্ষেত্রে রিপোর্ট করেছে ১৯৩ কোটি। আর্থিক দিক দিয়ে মেটা অর্জন করেছে ৩৩৬৭ কোটি ডলার টার্নওভার। গত বছর শেষ চতুর্ভাগে তারা নিট লাভ করেছিল ১০৩০ কোটি ডলার।
এই অংক গত বছরের তুলনায় শতকরা ৮ ভাগ কম। এমন হতাশাজনক পারফর্মেন্সের জন্য মেটা প্রতিযোগিতা, কাস্টমার ও বিজ্ঞাপনদাতাদের ধারাবাহিক জটিলতার কথা বিস্তারিত আলোচনা হয় ফেসবুকের অফিস আলোচনায়। মেটা বলেছে, গত বছর অ্যাপল বিজ্ঞাপনের যে নীতি আরোপ করে তাতে তাদের শেষ চতুর্ভাগে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
এদিকে ফেসবুকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করেছেন অস্ট্রেলিয়ার বিলিয়নিয়ার ব্যবসায়ী অ্যানড্রু ফরেস্ট। এতে তিনি দাবি করেছেন, তার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন বিজ্ঞাপন প্রচার বন্ধে ব্যর্থ হয়েছে ফেসবুক। এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি বলেছে, ক্রিপ্টোকারেন্সির বিস্তারের বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ার অর্থপাচার বিষয়ক আইন লঙ্ঘন করেছে ফেসবুক। এ নিয়ে বিশ্বে প্রথমবারের মতো ফৌজদারি মামলা হলো ফেসবুকের বিরুদ্ধে। ফেসবুকের মূল কোম্পানি মেটা এই মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে এটুকু বলেছে, যারা এভাবে ফেসবুক প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কেলেঙ্কারি ছড়িয়ে বেড়ায় তাদেরকে ফেসবুক থেকে দূরে রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তারা। অস্ট্রেলিয়ার খনি বিষয়ক কোম্পানি ফর্টেস্কু মেটালসের চেয়ারম্যান ড. ফরেস্ট। তিনি অভিযোগ করেছেন, অর্থপাচারের মতো অপরাধ বন্ধে অনীহা ফেসবুকের। ২০১৯ সালে ড. ফরেস্টকে ব্যবহার করে এমন বিজ্ঞাপন দেয়া হলেও তা বন্ধে যথেষ্ট করছে না ফেসবুক। তার বিরুদ্ধে যে প্রচারণা চালানো হয়েছে, তাতে ড. ফরেস্ট ও অন্য সেলিব্রেটিদের ছবি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে ভুয়া বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা হয়েছে। বিনিয়োগকারীদের ধনী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। যদিও ফেসবুক এমন বিজ্ঞাপন বন্ধ করেছে, তবু অনেক বিজ্ঞাপন এখনও ফেসবুক প্লাটফরমে দৃশ্যমান।
ড. ফরেস্ট বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বরে এ বিষয়ে আরও ব্যবস্থা নিতে ফেসবুকের প্রধান মার্ক জাকারবার্গের কাছে একটি খোলাচিঠি লিখেছেন তিনি। তার ভাষায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এভাবে ‘ক্লিকবাইট’ জাতীয় বিজ্ঞাপন দেয়ার মাধ্যমে নিরীহ অস্ট্রেলিয়ানদের বিরুদ্ধে কেলেঙ্কারি লেপন করা হচ্ছে। এতে আমি উদ্বিগ্ন। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়ানদের পক্ষে আমি ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু এই ঘটনা ঘটছে সারাবিশ্বে।
তার করা এই মামলা আগামী ২৮শে মার্চ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে শুনানি হবে। যদি এক্ষেত্রে তিনি সফল হন তাহলে ফেসবুককে জরিমানা করা হতে পারে অথবা বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক পরিবর্তন আনতে হবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে ফেসবুকের প্রধান কার্যালয় অবস্থিত। সেই ক্যালিফোর্নিয়ায় ফেসবুকের বিরুদ্ধে একটি সিভিল মামলাও করেছেন ড. ফরেস্ট। ক্যালিফোর্নিয়ার মামলায় ড. ফরেস্ট অভিযোগ করেছেন, বেআইনি বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে জেনেশুনে লভ্যাংশ আদায় করছে ফেসবুক। দ্য অস্ট্রেলিয়ান পত্রিকার রিপোর্টে আদালতের ডকুমেন্ট উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, ড. ফরেস্টকে ব্যবহার করে একটি ভুয়া এনডোর্সমেন্টের কারণে অস্ট্রেলিয়ার একজন ভিকটিমে পরিণত হয়েছেন।
এতে ৬ লাখ ৭০ হাজার ডলার হারিয়েছেন তিনি। মিডিয়ার কাছে দেয়া বিবৃতিতে সামাজিক যোগাযোগ বিষয়ক কোম্পানিটি বলেছে যে, কেলেঙ্কারি বা স্ক্যাম জাতীয় বিজ্ঞাপন তাদের নীতি লঙ্ঘন করে। মেটা’র এক প্রতিনিধি বলেছেন, এমন বিজ্ঞাপন বন্ধে আমরা বহুবিধ পদক্ষেপ নিয়েছি। আমরা শুধু এসব বিজ্ঞাপনকে শনাক্ত করি এমন নয়। একই সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করি। আমাদের সার্ভিসগুলো থেকে আসা বিজ্ঞাপনদাতাদের ব্লক করি। আমাদের নীতি যাতে বাস্তবায়ন হয় এ জন্য আদালতে অ্যাকশন নিই।