দক্ষ শ্রমিক সংকট গার্মেন্টস শিল্পের নতুন চ্যালেঞ্জ
ওয়ালিউল্লাহ সিরাজ : দেশের প্রায় সব পোশাক কারখানায়, বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি আকারের কারখানায় দক্ষ শ্রমিকের তীব্র ঘাটতি রয়েছে। ২০২০ সালে কোভিড ছড়িয়ে পড়লে কারখানাগুলোর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তখন শ্রমিকরা বাড়ি চলে যান। এরপর অনেক শ্রমিকই আর কাজে ফিরে আসেননি। এই সময়ে তারা নিজেদের মত করে অটোরিকশা চালানো, ছোট দোকান চালানো বা টেইলারিং দোকান চালানোর মত পেশা বেছে নিয়েছেন। অবশ্য বড় বড় কোম্পানির বিষয় কিছুটা ভিন্ন। তারা শ্রমিকদের বেতনের বাইরে বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে ধরে রাখছে।
কোভিডের সময় গার্মেন্টস শিল্প অনেকটাই মুখ থুবড়ে পড়েছিলো। অনেক বিদেশি ক্রেতা ক্রয় আদেশ দিয়েও প্রত্যাহার করে নিয়েছিলো। যার ফলে এই শিল্পের উদ্দ্যোক্তাদের কষ্ট আরো বেড়ে গিয়েছিলো। তবে এ সময় গার্মেন্টস শিল্পের নারী শ্রমিকরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
আগে এই শিল্পে নারী শ্রমিক ছিলো প্রায় ৮০ শতাংশ। বর্তমানে সেটা কমে এসেছে ৫৭ শতাংশে।
ফকির অ্যাপারেলস লিমিটেড গত বছরের তুলনায় এ বছর ২৫ শতাংশ বেশি কাজের অর্ডার পেয়েছে। কারখানাটি তিন মাস প্রশিক্ষণের পর গত মাসে ৪শ জন নতুন কর্মী নিয়োগ করেছে। সর্বোত্তম উৎপাদন নিশ্চিত করতে এখনো ১০ শতাংশেরও বেশি শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে কারখানাটির।
বেস ফ্যাশনস লিমিটেড, নতুন ১ হাজার কর্মী নিয়োগ করেছে। এখন প্রায় ১০ শতাংশ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে কারখানাটির। গার্মেন্টস থেকে চাকরি ছেড়ে অন্য পেশায় কাজ করছেন এমন তিনজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। রকিবুল আলম নামের একজন বলেন, গার্মন্টেসে আমি ১২ বছর কাজ করেছি। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত কাজ করতাম। বেতন পেতাম মাত্র ১৫ হাজার টাকা। এখন ১ লাখ টাকা দিয়ে চারটি রিকশা কিনে একটা নিজে চালাই আর তিনটা ভাড়া দিই। মাসে আমার ৪০ হাজারের বেশি ইনকাম থাকে। তাছাড়া আমি এখন স্বাধীন। ইচ্ছা হলে কাজ করি, ইচ্ছা না হলে করি না।
রনি নামের যুবক বলেন, ৭-৮ বছর গার্মন্টেসে কাজ করেছি। বেতন পেতাম মাত্র ১১ হাজার টাকা। মালিকরা নিজেদের ইচ্ছামত কাজের সময় বাড়িয়ে দিতেন। আবার বেতন দেওয়ার সময় টালবাহানা করতেন। চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এখন অনেক ভালো আছি। নিজের ইচ্ছামত অটো চালাই। মাসে কম করে হলেও ২০ হাজার টাকা থাকে। একটা অটোরিকশা কিনেছি। আগামী ২দুই মাসের মধ্যে আরো একটা অটোরিকশা কিনবো।
রুমা আক্তার বলেন, চাকরি ছেড়ে আমি টেইলার্সের দোকান দিয়েছি। প্রথমে আমি নিজেই কাজ করতাম। এখন আরো দুইজন আমার সঙ্গে কাজ করে। আশেপাশের সকল নারীরা আমাদের কাছে এসেছে কাপড় বানিয়ে নেন। আমার ইচ্ছা দোকানটাকে আরো বড় বানাবো।
ঢাকা ট্রিবিউনের প্রতিবেদনে স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শোভন ইসলাম বলেন, কোভিড মহামারির আগে বিজিএমইএ-এর তথ্যানুসারে ৪.৪ মিলিয়ন কর্মী ছিলো। এখন সেটা নেমে এসেছিলো ৩.৩ মিলিয়নে। অবশ্য পোশাক শিল্পে অনেক নতুন কর্মী যোগ দিয়েছেন। সেই সংখ্যা দাঁড়াবে ৪.৫ মিলিয়ন। এই তথ্য বিজিএমইএ যুক্ত করা হবে। তিনি আরো বলেন, আগের অপারেটরদের দক্ষতা গড়ে ৭০-৭৫ শতাংশ ছিলো। এই দক্ষতা এখন নেমে এসেছে ৬৫ শতাংশে। পোশাক খাতে দক্ষ শ্রমিক কমে যাচ্ছে। মাত্র ১০ হাজার কর্মী আমাদের কারখানায় কাজ করে। তাদের ৫ শতাংশ দক্ষতা কমে যাওয়া আমাদের সামগ্রিক উৎপাদন ও রপ্তানির উপর বড় ধাক্কা দেয়।
ডেইলি স্টারের প্রতিবেদনে হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ কে আজাদ বলেন, কারখানায় ৬৫ হাজার শ্রমিক কাজ করছে। তবুও প্রায় ৮ শতাংশ শ্রমিকের ঘাটতি রয়েছে।
বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি তৌহিদুর রহমান এবং সম্মিলিত গার্মেন্ট শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার একমত পোষণ করে বলেন, কারখানাগুলোতে শ্রমিকের ঘাটতি ১৫ শতাংশ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক খোন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, বৈশ্বিক সাপ্লাই চেইন পুনরুদ্ধারের সাথে রপ্তানি অর্ডার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে পোশাক শিল্পে স্বল্পমেয়াদী দক্ষ শ্রমিকের সংকট তৈরি হয়েছে। সম্পাদনা : রাশিদ