সাধারণ সর্দি কাশিতে রূপান্তরিত হচ্ছে করোনা, বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দাপট কমেছে ওমিক্রনের
শিমুল মাহমুদ : দেশে গত ২৪ জানুয়ারি থেকে টানা ১০ দিনে ১২ হাজারের বেশি করোনা রোগী শনাক্ত হলেও গত বুধবার থেকে তা কিছুটা কমে এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ি শুক্রবার নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৯ হাজার ৫২ জন। শনাক্তের হার ২২.৯৫। এক সপ্তাহ আগেও শনাক্তের হার ছিলো ৩৩.৩৭।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতিগত নিয়মে প্রতিটি মহামারির এক সময় নিয়ন্ত্রিত হয়ে যায়। একইভাবে নভেল করোনা ভাইরাস এখন ওমিক্রনে ঠেকেছে। আক্রান্তদের সর্দি-জ¦র- কাশি এটা বেশি হচ্ছে। শ^াসকষ্ট হচ্ছে না। গবেষকরা মনে করছেন, ভাইরাসের নিজস্ব পরিবর্তনের ফলে এর তীব্রতা কমে এসেছে। এর সঙ্গে অধিক সংখ্যাক সংক্রমিত হওয়া এবং টিকা গ্রহণের ফলে মানুষের শরীরে এক ধরণের ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। ফলে করোনা ভাইরাস একটা সাধারণ সর্দি কাশিতে পরিনত হতে যাচ্ছে।
যুক্তরাজ্য শেফিল্ড ইউনিভার্সিটি সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েটস ড.খোন্দকার মেহেদী আকরাম বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে এই ভাইরাসটা হলো আরএনএ ভাইরাস। এর অনবরত মিউটেশন হয়। ফলে কমিউনিটিতে বা সামাজিকভাবে এর সংক্রমণ ছড়িয়ে পরে।
তিনি বলেন, আশার বানী হচ্ছে নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আসছে আর মৃত্যুর হ্রা কিন্তু কমছে। ধীরে ধীরে এটা আরো নমনীয় হয়ে যাবে। বাংলাদেশে গত জুন -জুলাইয়ে প্রভাব ছিলো ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট, দ্বিতীয় পর্যায়ে এখন ওমিক্রন বিস্তার লাভ করছে।
চীনের উহান ভাইরাস বা আদি ভাইরাসে বৈশিক মৃত্যুর হার ছিলো ১০ শতাংশ। পরবর্তিতে সেটা কমে গিয়ে ৪ শতাংশে এসেছিলো মূল ভ্যারিয়েন্ট দিয়ে। এরপর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যু হার কমে আসে ৩ শতাংশে। তখন সেটা বাংলাদেশে আরো কম। সর্বশেষ ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টে মৃত্যু কম পয়েন্ট ১ শতাংশ।
অণুজীববিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বলেন, শুরুতে আলফা, বিটা, গামা, ডেল্টা আর এখন ওমিক্রন। করোনাভাইরাস রূপ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের দেহের সাথে অনেকটা খাপ খাইয়ে নিয়েছে। শুরুর দিকে করোনা মানেই কাশি আর শ্বাসকষ্ট। কিন্তু এখন উপসর্গ দেখাচ্ছে, ঠান্ডা লাগার যে কিছু উপসর্গ হয়, অনেকটা সেরকমই। যে কারণে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছে। আসলেই এটি ওমিক্রন নাকি সাধারণ ঠান্ডা, যা আমরা শীতকালে দেখে থাকি!
তিনি আরও বলেন, যখন কোনো দেশে কোনো একটি রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি ঘটে, অর্থাৎ এটি যখন মহামারি আকারে চলে যায়, তখন যদি ওই রোগের সঙ্গে অন্য কোনো রোগের উপসর্গ মিলেও যায়, তখন ধরা হয় যে মহামারি আকারে ছড়িয়ে যাওয়া রোগই হয়েছে। কারণ, এ ভাইরাসটিই এখন সারা দেশে, সারা পৃথিবীতে ছড়াচ্ছে। ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও ঠিক তেমনই, এর সঙ্গে এ মুহূর্তে অন্য কোনো রোগের উপসর্গ মিল থাকলেও ধরে নিতে হবে এটি ওমিক্রন।
করোনা সংক্রান্ত জনস্বাস্থ্য উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ডা. ফয়সাল বলেন, ‘ভাইরাসটির সংক্রমণ এখন দেশের বিভিন্ন জেলায় বাড়তে থাকবে। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন বন্ধ করা যাবে না। আমাদের এখন রোগী ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দেয়া উচিত। গ্রামীণ এলাকার অধিকাংশ মানুষ টিকা না নেয়ায় করোনা রোগীদের চিকিৎসার জন্য জেলা হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখা উচিত।’
তিনি বলেন, অনেক আক্রান্ত মানুষই পরীক্ষা করান না। তাই সরকারি হিসাবে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিফলিত হয় না। সরকারি হিসাবে করোনা আক্রান্তের খুব ক্ষুদ্র অংশ রেকর্ড করা হচ্ছে। প্রতিদিন কমপক্ষে এক বা দুই লাখ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন।
যারা এখনো টিকার এক ডোজও নেয়নি তারা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। তাই তাদের খুব সতর্ক থাকা উচিত। এছাড়া বয়স্ক মানুষ ও যাদের একাধিক রোগ রয়েছে তাদের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া উচিত। কেননা তাদের মধ্যে মৃত্যু হার বেশি।