ই-কমার্স ও ফেসবুক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সনদ প্রদান শুরু ডিবিআইডি কার্যক্রম সম্পন্ন করা গেলে ই-কমার্স ব্যবসায় প্রতারণা দূর হবে : বাণিজ্যমন্ত্রী
সোহেল রহমান : বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্শি বলেছেন, ‘ডিজিটাল বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন’ (ডিবিআইডি) কার্যক্রম সম্পন্ন করা গেলে ই-কমার্স ব্যবসায় প্রতারণা দূর হবে। ভোক্তারা সুরক্ষিত হবে, প্রতারণায় জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করা যাবে এবং বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হবে।
ই-কমার্স ব্যবসার সুষ্ঠু পরিচালনা ও অংশীজনদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে রোববার সচিবালয়ে দেশের ডিজিটাল কমার্স ও ফেসবুক ভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ডিবিআইডি সনদ প্রদান উদ্বোধনকালে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ১১ প্রতিষ্ঠানকে ডিবিআইডি সনদ দেয়া হয়। এর আগে দেশের ডিজিটাল কমার্স ব্যবসার সার্বিক পর্যালোচনা সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সভাপতিত্ব করেন তিনি।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ই-ক্যাব-এর তালিকাভুক্ত ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৬০৯টি। ডিজিটাল কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আড়াই হাজার। যার মধ্যে প্রথম হিসেবে এগুলোকে নিবন্ধন দেয়া হয়েছে। ডিবিআইডি দিয়ে আমরা শুরু করলাম। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া এবং এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের ডিবিআইডি নিবন্ধন শেষ না হওয়া পর্যন্ত এটি অব্যাহত থাকবে। পর্যায়ক্রমে ই-কমার্স খাতের জন্য আরও বিভিন্ন পদ্ধতি চালু করা হবে।
তিনি বলেন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে যারা ব্যবসা করছে, এটা আপাতত তাদেরকে এক ধরনের স্বীকৃতি হিসাবে এই সনদ দেয়া হচ্ছে। এই সনদ দিতে গিয়ে হয়তো অনেক ভুল-ত্রুটি দেখা দেবে। ধীরে ধীরে আমরা সেগুলোর সমাধান করবো। এটা পাইলটিং ভিত্তিতে শুরু হলো। যারা এই নিবন্ধনের আওতায় আসবে না, ভবিষ্যতে সরকার তাদের দায়-দায়িত্ব নেবে না।
গ্রাহকদের আটকে পড়া টাকা ফেরত প্রদান প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, যে টাকা আটকে আছে, সে টাকা দেয়া শুরু করেছি। এরমধ্যেও অনেক আইনি জটিলতা আছে। আমি ঠিক বলতে পারি না অমুক তারিখে এটি দেয়া শেষ হবে। আমরা শুরু করেছি, যেসব লেনদেনদের ক্ষেত্রে আইনি জটিলতা আছে, সেগুলোর মধ্যে যেটাই আইনি জটিলতা থেকে বেরিয়ে আসবে, সাথে-সাথে টাকা ফেরত দেয়া হবে।
সভায় ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা কারাগারে আছেন, তাদের ব্যাপারে কোনো নীতি আলোচনা হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, আলোচনা করেছি। কীভাবে সমাধানের পথ বের করা যায়, সে চেষ্টা করছি। তবে আইনের ওপরই আমাদের নির্ভরশীল থাকতে হবে।
সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, ই-কমার্সের সৃষ্ট সংকট দূর করতে তিন মাস আগে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, আজ ডিভিআিড চালুর মাধ্যমে তার একধাপ অগ্রগতি হলো। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য পদক্ষেপগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ‘ই-কমার্স ব্যবসায় যে ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে, তা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ চারটি পদক্ষেপ সরকারের চলমান রয়েছে। ডিবিআইডি তার একটি কার্যকর প্রথম পদক্ষেপ।
‘২০২৫ সালের মধ্যে ই-কমার্স খাতে ৫ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সম্ভব’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ই-কমার্স খাতকে ভবিষ্যতের জন্য নির্ভরযোগ্য করতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে আরও নতুন দুটি পদ্ধতি চালু করা হবে। এ খাতের অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য সেন্ট্রাল কমপ্লেন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সার্ভার চালু করব।
ই-কমার্স খাতে কী পরিমাণ ট্রানজেকশন হয়, কারা কোথায় কী পরিমাণ পণ্য কেনা-বেচা করে তা পর্যবেক্ষণের জন্য সেন্ট্রাল লিকুইডিটি ট্র্যাকিং প্রোগ্রাম (সিএলটিপি) চালু করা হবে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, এছাড়া যেগুলো ট্র্যাকিং করা সম্ভব নয়, তাদের বিষয়ে দেখভালের জন্য আরও একটি ‘ইন্টার অপারেটর ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম’ তৈরি করা হবে। চার কর্মসূচির কার্যকর পদক্ষেপে ই-কমার্স খাতকে বিতর্কমুক্ত এগিয়ে নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সার বলেন, দেশে ফেসবুক, অন-লাইনভিত্তিক অনেক ভালো ভালো প্রতিষ্ঠান ব্যবসা করছে। তবে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রতারণার কারণে তার দায়ভার সব ই-কমার্স খাতে পড়ছে। ই-কমার্স খাতকে প্রতারণা থেকে দূরে রাখতে এবং এর ভবিষ্যৎ সুষ্ঠু পরিচালনার মাধ্যমে আরও প্রসারের লক্ষ্যে যে ডিবিআইডি কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, আশা করছি এতে ই-কমার্স তার সম্ভাবনা মেলে ধরতে সক্ষম হবে।
প্রথম দিনে ডিবিআইডি নিবন্ধন পাওয়া ১১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে- চালডাল লিমিটেড, ডায়াবেটিস স্টোর, রকমারি ডটকম, আজকের ডিল, সাজগোজ লিমিটেড, যাচাই ডটকম, ক্লোসেট, নওরিনস মিরর, আঁখিস কালেক্শন্ (ফেসবুক শপ), নিথান (ফেসবুক শপ ও আনন্দমেলা মার্চেন্ট) ও মম ফানুস (ফেসবুক শপ ও আনন্দমেলা মার্চেন্ট)।