আবার রপ্তানিতে ফিরল চিলমারী নৌবন্দর
অর্থনীতি ডেস্ক : ৪৭-এর দেশ ভাগের পর বন্ধ হয়ে যায় কুড়িগ্রামের চিলমারী নৌবন্দর। দীর্ঘ সময় পর এই বন্দর থেকে চালু হলো পণ্য রপ্তানি। রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের কাঁচকোল নৌ পয়েন্ট থেকে সোমবার দুপুর ১টার দিকে রপ্তানি পণ্য নিয়ে ভারতের উদ্দেশে বন্দর ছাড়ে বাংলাদেশি পতাকাবাহী ভেসেল সান আবিদ-১।
চিলমারী নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, এই বন্দর দিয়ে ভারতে পণ্য পরিবহনের খরচ কম। ৬ থেকে ৭ মাস ধরে চিলমারী নৌবন্দর ও রৌমারী নৌঘাটে ভারতের ট্রানজিট দিয়ে পাথর আমদানি করা হতো। তবে এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে পণ্য ভারতে পাঠানো হলো।
রপ্তানির প্রথম চালান হিসেবে ২৭ টন ঝুট নিয়ে লিজেন্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের সান আবিদ-১ ভারতের আসাম রাজ্যের ধুবড়ি নৌ বন্দরের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। শেরপুর তুলার মিল নামের একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান এগুলো পাঠিয়েছে।
লিজেন্ড কনসোর্টিয়াম লিমিটেডের ব্যবস্থাপক হাবিবুর মমিন জানান, ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিলমারী সফরে এসে এই নৌবন্দর চালুর প্রতিশ্রুতি দেন। বন্দর উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয় প্রায় ৩ শ কোটি টাকা। ২০১৭ সালেই বন্দরের উন্নয়ন কার্যক্রম উদ্বোধন করেন তৎকালীন নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান।
এরপর গত বছর থেকে ধুবড়ি ট্রানজিট দিয়ে ভুটান থেকে ট্রাস্টন পাথর আমদানি শুরু করে বাংলাদেশ। প্রতি মাসে গড়ে ৩০টি ভেসেল ৪ হাজার পাথর আনছে। মমিন বলেন, প্রথম দফায় পরীক্ষামূলকভাবে রপ্তানি শুরু করতে পারায় আমরা খুশি। আসাম একটি বড় বাজার। আসামের সঙ্গে নৌ পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হলে রপ্তানির মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব হবে।
রাজস্ব কর্মকর্তা তাপস কুমার সাহা বলেন, ‘চিলমারী নৌবন্দরের অবকাঠামো আরও উন্নয়ন করা গেলে আমদানি-রপ্তানি বেগবান হবে। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
চিলমারী নৌবন্দর দিয়ে রপ্তানি শুরু হওয়ায় খুশি স্থানীয়রাও। অনেকেরই এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হবে এবং এর মাধ্যমে অভাব মিটবে বলে তারা মনে করছেন।
স্থানীয় আকাশ মিয়া বলেন, ‘এই বন্দর ফির চালু হওয়ায় খুশি হামরা। হামরা এলা নৌবন্দরে কাম করি খাবার পামো। হামার এলাকার মধ্যে আর অভাব থাকবার নয়।’
মফিজল হক বলেন, ‘চিলমারী বন্দরের ইতিহাস দেশ-বিদেশের মানুষও কবার পায়। দেশ ভাগের পর অবহেলায় বন্দর হারায়ে যায়। এই প্রথম বাংলাদেশ থেকে মাল পাঠানো হলো ভারতে। হামরা খুব খুশি। এমন করি মালামাল যাওয়া আসা করলে এলাকার ও দেশের উন্নয়ন হইবে।’
ধুবড়ি যেতে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা সময় লাগে বলে জানান নৌ শ্রমিক রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘নদীতে পানি থাকায় সময় বেশি লাগছে। নদী খনন করা গেলে আমাদের টাকা ও সময় কম লাগবে।’
চিলমারী উপজেলা চেয়ারম্যান বীর বিক্রম শওকত আলী বলেন, ‘আমি এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের স্বাক্ষী হলাম। এই বন্দর দিয়ে রপ্তানি শুরু হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারই বাস্তবায়ন হলো। এখন বন্দরের দ্রুত অবকাঠামো উন্নয়ন দরকার।’ সূত্র : নিউজবাংলা, বাংলানিউজ।