একনেকে ১১ প্রকল্পে ৩৭,৫০৭ কোটি ২২ লাখ টাকা অনুমোদন
সোহেল রহমান : ‘চতুর্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি’ (এইচপিএনপি)-এর প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাব অনুমোদন দিয়েছে ‘জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি’ (একনেক)। এতে ব্যয় বাড়ছে ৩০ হাজার ৪৪৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। প্রকল্পটি বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট হলেও সংশোধিত ব্যয়ের প্রায় পুরোটাই বহন করতে হবে সরকারকে। সংশোধিত ব্যয়ের মধ্যে বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ মাত্র ৬১ কোটি ৪ লাখ টাকা। একই সঙ্গে প্রকল্পের মেয়াদ ১ বছর বাড়ানো হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সীমা ছিল ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত। এটি বাড়িয়ে ২০২৩ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে বৈঠকে অংশ নেন তিনি।
বৈঠক শেষে এক ব্রিফিং-এ পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান সাংবাদিকদের জানান, ‘৪র্থ স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচি’ (এইচপিএনপি)-এর মূল প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৮৬ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবে এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৩৪ কোটি ৯৯ লাখ টাকা।
সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্প ব্যয় বাড়ার ৮টি কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ অপারেশনাল প্ল্যানভিত্তিক ব্যয় ও কার্যাবলী পুনঃনির্ধারণ; করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় চলমান কার্যক্রমসমূহ পর্যালোচনাপূর্বক লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন ও বাজেট সমন্বয়; ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সুপারিশ অনুযায়ী বাজেট বৃদ্ধিকরণ; স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে দু’টি বিভাগে বিভক্তকরণ; কর্মসূচির মধ্যবর্তী মূলায়নের সুপারিশ বাস্তবায়ন; মায়ানমার হতে বলপূর্বক বিতাড়িত জনগোষ্ঠীসহ কক্সবাজার জেলার স্থানীয় জনগোষ্ঠীদের স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেবা প্রদানের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম অন্তর্ভুক্তি ও নতুন অপারেশনাল প্ল্যান গ্রহণ; ‘কমিউনিটি বেইজড হেলথ কেয়ার (সিবিএইচসি)’ শীর্ষক ওপিকে বিভক্ত করে ‘সিবিএইচসি’ এবং ‘উপজেলা হেলথ কেয়ার’ নামক দু’টি ওপি সৃষ্টি ; ওপি লেভেল ইন্ডিকেটরের সংখ্যা বৃদ্ধি।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, বৈঠকে মোট চারটি সংশোধিত প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। অপর তিনটির মধ্যে ‘আশুগঞ্জ নদীবন্দর-সরাইল-ধরখার-আখাউড়া স্থলবন্দর মহাসড়ককে চারলেন জাতীয় মহাসড়কে উন্নীতকরণ (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় ২ হাজার ২২৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; ‘গোপালগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় ৭০৪ কোটি ৮০ লাখ টাকা এবং ‘ঢাকা পানি সরবরাহ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন (১ম সংশোধিত)’ প্রকল্পের ব্যয় ৫৯৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা বাড়ানো হয়েছে।
তিনি জানান, বৈঠকে ৭টি নতুন প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এগুলো হচ্ছেÑ ১ হাজার ৫০৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অব ফ্রনটিয়ার টেকনোলজি এর প্রাথমকি অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্প’; ৬৯৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘মোংলা কমান্ডার ফ্লোটিলা ওয়েস্ট (কমফ্লোট ওয়েস্ট) এর অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’; ৫৫৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশের ১০(দশ) টি অগ্রাধিকারভিত্তিক শহরে সমন্বিত স্যানিটেশন ও হাইজিন (সমন্বিত কঠিন ও মানব বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) প্রকল্প; ৩৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের অধিভুক্ত এলাকায় বর্জ্য অপসারণ ও ব্যবস্থাপনা । সড়ক মেরামত ব্যবহৃত আধুনিক যান-যন্ত্রপাতি সংগ্রহ এবং ম্যাকানাইজড্ পার্কিং স্থাপনের মাধ্যমে যানজট নিরসনকরণ প্রকল্প; ২৬৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম, কুমিল্লা এবং ময়মনসিংহ (ত্রিশাল) মিলিটারি ফার্ম আধুনিকায়ন প্রকল্প’; ১০৭ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘স্মার্ট কৃষি কার্ড ও ডিজিটাল কৃষি (পাইলট) প্রকল্প’ এবং ৬৪ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঢাকার আজিমপুরস্থ মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানে প্রকল্প’।