আমিরাতে মাল্টিবিলিয়ন ডলারের রিসোর্ট করছে ক্যাসিনো জায়ান্ট উইন
রাশিদ রিয়াজ : ক্যাসিনো জায়ান্ট হিসেবে পরিচিত উইন আমিরাতে একটি কৃত্রিম দ্বীপে এ রিসোর্ট চালু করবে ২০২৬ সালে এবং সেখানে ক্যাসিনো খেলার বিলাসবহুল ১ হাজার রুম থাকবে। রাস আল-খাইমার শেখডম বলেছেন রিসোর্টে ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার অনুমতি দেওয়া হবে। আমিরাতের কৃত্রিম দ্বীপ আল-মারজানে ওই রিসোর্টটি নির্মিত হবে। যে সাতটি দ্বীপ নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাত গঠিত তার অন্যতম রাস আল-খাইমার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের লাস ভেগাস ভিত্তিক বিখ্যাত ক্যাসিনো জায়ান্ট উইন রিসোর্টের সঙ্গে বিনিয়োগ চুক্তির অংশ হিসেবেই এ রিসোর্টটি নির্মিত হচ্ছে।
এতে থাকবে ‘এক্সক্লুসিভ’ স্পা ও ১০টিরও বেশি রেস্তোঁরা ও লাউঞ্জ। এসব রেস্তোঁরা ও লাউঞ্জ থেকে অতিথিরা আরব উপসাগরের দর্শণীয় দৃশ্য উপভোগ করতে পারবেন। এমনিতে আরব আমিরাতে অধিকাংশ মানুষের ধর্ম ইসলাম অনুসারে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ হলেও আকাশচুম্বী দুবাই এবং তেল সমৃদ্ধ আবু ধাবিতে জুয়া খেলার গুজব ছড়িয়ে পড়ার কয়েক মাস পরে এই রিসোর্ট নির্মাণের ঘোষণা এল। ইতিমধ্যে ক্যাসিনো অপারেটার সিজার্স প্যালেস দুবাইতে বেশ কিছু রিসোর্ট পরিচালনা করলেও কোনো ক্যাসিনো খেলার সুযোগ সেখানে নেই। আমিরাতের অন্যান্য দ্বীপাঞ্চলে এধরনের ক্যাসিনো খেলা নিষিদ্ধ। ডেইলি মেইল
প্রাথমিকভাবে উইন রিসোর্ট ও রাস আল-খাইমাহ কর্তৃপক্ষ জুয়া খেলার কথা পরিস্কার করে না বললেও ‘গেমিং’এর সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছে। এব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলা হয়নি। আমিরাত টুরিজ্য ডেভলপমেন্ট অথোরিটি গেমিংএর সঙ্গে অর্থযোগ বা বাজি ধরার সুযোগ থাকছে কি না এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। তবে কর্তৃপক্ষের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে একটি নতুন গেমিং বিভাগের জন্য ‘অপারেটর, সরবরাহকারী এবং কর্মচারিদের সমস্ত প্রযোজ্য আইন এবং প্রবিধান (আর্থিক অপরাধ আইন সহ) মেনে চলতে হবে যা সব স্তরে দায়িত্বশীল গেমিং নিশ্চিত করবে। রাস আল-খাইমাহ আমিরাতের উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত। এবং সেখানকার স্বৈরচারী শাসক ব্যাপক ক্ষমতার অধিকারী। শেখ সউদ বিন সাকর আল কাশিমি এ দ্বীপটির শাসক এবং আরএকে সিরামিক কোম্পানি মালিক সুপরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রে গেমিং বলতে প্রকাশ্যে জুয়া খেলাকেই বুঝায়। উইন রিসোর্ট লিমিটেডের মুখপাত্র মাইকেল ওয়েভার রাস আল-খাইমার নিয়ন্ত্রকদের কাছে এধরনের প্রশ্নগুলো তুলেছেন। লাস ভেগাস, ম্যাকাও এবং ম্যাসাচুসেটসে উইন রিসোর্টের সমস্ত সম্পত্তিতে ক্যাসিনো খেলার বিশেষ সুযোগ রয়েছে। অবশ্য ইউএস সিকিউরিটিস এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে উইন রিসোর্ট জানিয়েছে তারা রাস আল-খাইমাহতে একটি সমন্বিত রিসোর্টের উন্নয়ন এবং পরবর্তী ব্যবস্থাপনা’র জন্য রাস আল-খাইমার সাথে একটি চুক্তিতে প্রবেশ করেছে। ইন্টিগ্রেটেড রিসোর্ট ধরনের বিনিয়োগ সিঙ্গাপুরে প্রচলিত যা এমন একটি হোটেলকে বোঝায় যেখানে একটি ক্যাসিনো এবং অন্যান্য সুবিধা রয়েছে। এছাড়া উইন রিসোর্টের ওয়েবসাইটে একই ধরনের সুযোগ সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
রাস আল-খাইমাহতে ভারত, রাশিয়া, ব্রিটেন ও মিসর থেকে সর্বাধিক পর্যটকরা যান ভ্রমণে। দ্বীপটিতে মদ পানের ব্যাপারে আইন বেশ শিথিল। বিচরিসোর্টগুলোতেও বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা রয়েছে। দ্বীপটিতে ৬ হাজার ৩৪৫ ফুট উঁচু ভবন জেবেল জাইস পর্যটকদের বেশ আকর্ষণীয় স্থান হিসেবে পরিচিত। জেপি মরগ্যানের বিশ্লেষক জোসেফ গ্রেফ আমিরাতে উইনের এ বিনিয়োগকে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগের উল্লেখযোগ্য হিসেবে অভিহিত করে বলেন এতে আমিরাতের স্থানীয় ৯০ লাখ মানুষ উপকৃত হবে। গ্রেফ বলেন রিসোর্ট ও ক্যাসিনো খেলার সুযোগ সহজেই দেশটিতে বিদেশি পর্যকটদের টানবে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে জুয়া নিষিদ্ধ হলেও মিসর, লেবানন, মরোক্কো ও তিউনিশিয়ায় তা চোখের আড়ালে ঠিকই চলে।
আর উইন লাস ভেগাস থেকে শুরু করে ম্যাকাউ, মাসাচুয়েটসে রিসোর্টে ক্যাসিনো খেলার সুবিধা রেখেছে। ১৯৭১ সালে সংযুুক্ত আমিরাত হওয়ার পর দেশটির প্রথম রাষ্ট্রপতি প্রয়াত শেখ জায়েদ বিন সুলতান আল নাহিয়ানের মত না থাকায় দুবাইয়ের ক্যাসিনো পরিকল্পনাগুলি ঠিকমত বিনিয়োগ পায়নি। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, ক্যাসিনো নিয়ে গুজব বেড়েই চলেছে। ব্রিটেনের বিখ্যাত জাহাজ কুইন এলিজাবেথ ৭৩.৬ মিলিয়ন খরচে মেরামতের পরে ২০১৮ সালে দুবাইতে একটি হোটেল হিসাবে খোলা হয়েছিল। সেখানে ক্যাসিনো খোলার স্লট মেশিন থাকলেও তা রয়েছে নিষ্ক্রীয়।
একই বছর দুবাইতে সিজার খোলা হয়েছে। ক্যাসিনো ফার্ম এমজিএম, বেল্লাজিও ও জেস আরিয়া আমিরাতে তাদের বিনিয়োগ অব্যাহত রয়েছে। তবে
ক্যাসিনো থেকে যে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থের উৎস সৃষ্টি করে যা পাচারের ঝুঁকি বাড়ায়। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক অনুমোদিত যুদ্ধের মুনাফাখোর, সন্ত্রাসের অর্থ যোগানদাতা এবং মাদক পাচারকারীরা দুবাইয়ের রিয়েল-এস্টেট বাজারকে তাদের সম্পদের আশ্রয়স্থল হিসাবে ব্যবহার করেছে।