সোহেল রহমান : দেশে প্রাকৃতিক গ্যাসের চাহিদা পূরণে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি)-এর ওপর অধিক নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে সরকার। কিন্তু এলএনজি এক ধরনের অনিশ্চিত জ¦ালানি পণ্য। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে এলএনজি’র দাম যেভাবে বাড়ছে, এতে খুব শিগগিরই এর দাম কমবে না। অন্যদিকে বিভিন্ন মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এলএনজির’র আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীরা দীর্ঘ মেয়াদে স্থির মূল্যের চুক্তিতে আগ্রহী নয়। পাশাপাশি আঞ্চলিকভাবে গ্যাসের মূল্য একীভূত হচ্ছে, যাা ফলে এলএনজি রপ্তানি কম লাভজনক হয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় দেশের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে এলএনজি আমদানি চালিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলেও বিকল্প পরিচ্ছন্ন শক্তির উৎস সন্ধান করতে হবে এবং অভ্যন্তরীণ গ্যাসের মজুদ থেকে গ্যাস সরবরাহের উপর জোর দিতে হবে।
রোববার বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জ¦ালানি সরবরাহে গ্যাস-এলএনজি বির্তক : বিদ্যুৎ খাতের জন্য এলএনজি আমদানির ব্যয় এবং পরিণতি শীর্ষক এক ওয়েবিনারে এসব কথা হয়েছে। অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম ও সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট আবদুল্লাহ ফাহাদ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরের জন্য প্রতি ইউনিট এলএনজি’র যে আমদানি মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা স্থানীয়ভাবে উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে ২৪ গুণ বেশি। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রতি ঘনমিটার এলএনজি’র দাম ছিল ৩১ টাকা ৫৬ পয়সা। এর পিরীতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো প্রতি ঘনমিটারে দিয়েছে মাত্র ৪ টাকা ৪৫ পয়সা। এটা সরকারের ওপর বোঝা। এমতাবস্থায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য এলএনজি আমদানির উপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতা এবং সংশ্লিষ্ট অবকাঠামো উন্নয়ন পরিকল্পনার উপর দেশের বিদ্যমান পদ্ধতির পুনর্বিবেচনার সময় এসেছে। সিপিডি’র মতে, নতুন এলএনজি-ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন (পাইপলাইনে ৬,৪৬৮ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১১টি প্ল্যান্ট) যৌক্তিক নয়।
স্বল্পমেয়াদে এলএনজি আমদানির সুপারিশ করে সংস্থাটি বলেছে, তাৎক্ষণিকভাবে চাহিদা-সরবরাহের ব্যবধান মেটাতে বিশেষত গৃহস্থালি, শিল্প, হোটেল রেঁস্তোরা, পরিবহন ইত্যাদি খাতে আমদানিকৃত এলএনজি ব্যবহার করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের জ্বালানি সরবরাহে ঐতিহাসিকভাবে প্রাকৃতিক গ্যাসের প্রাধান্য রয়েছে যদিও গত দশকের শেষের দিকে দেশের স্থানীয় গ্যাস উৎপাদন কমতে শুরু করে। অনুমান অনুযায়ী অবশিষ্ট গ্যাস রিজার্ভ (১০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট) ধীরে ধীরে (২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন এক তৃতীয়াংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে শূন্য) হ্রাস পাবে। তবুও দেশের বর্তমান জ্বালানি সরবরাহের অবকাঠামো প্রাকৃতিক গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্তমানে দেশের গ্যাসের ঘাটতি মোট চাহিদার ৩৭ তশমিক ৫ শতাংশ। স্থানীয় উৎপাদনের তুলনায় ক্রমবর্ধমান চাহিদার হারের কারণে ২০২৩-২৪ সালে এই ব্যবধান সর্বোচ্চ হবে।