প্রবেশে লাগবে টিকা সনদ প্যাভিলিয়ন বিন্যাসসহ নতুন চমকে আজ দুয়ার খুলছে বইমেলার
শরীফ শাওন : অমর একুশে বইমেলার আটত্রিশতম আসর এবার ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ শুরু হচ্ছে। মঙ্গলবার বিকেল ৩ টায় গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাস্থ্যবিধি রক্ষা ও সাজসজ্জাসহ এবারের মেলায় বিপুল পরিবর্তন আনা হচ্ছে জানিয়েছে মেলার আয়োজক সংস্থা বাংলা একাডেমি।
সোমবার বাংলা একাডেমির বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২১ প্রদান করা হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ এমপি। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রতি বছর যেসব উপাদান বইমেলায় থাকে, যেমন, গ্রন্থ উন্মোচন, লেখক বলছি মঞ্চ, নতুন বইয়ের স্টল, শিশু চত্বর, পুলিশ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, পর্যাপ্ত প্রবেশ ও বাহির পথ, আশ্রয় কেন্দ্র, পার্কিং ব্যবস্থা, ব্রেস্ট ফিডিং জোন, নামাজ ঘর, টয়লেট ব্যবস্থা, হুইল চেয়ার ও ফুডকোর্ট ইত্যাদি।
আরও বলা হয়, এবারের মেলায় নতুন যুক্ত হচ্ছে- অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর মূল প্রতিপাদ্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। এই প্রতিপাদ্য নির্ধারণের বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে। এবার ভাষা আন্দোলনের সত্তর বছর। একই সঙ্গে এ-বছর আমাদের সংবিধান প্রণয়নের পঞ্চাশ বছরও। ভাষা আন্দোলন, বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা ও সংবিধানপ্রাপ্তির এই বিশেষ সময়ে বাঙালিত্বের চেতনা-জাগানিয়া বইমেলার আয়োজন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন ও স্বাধীনতার মর্মবাণী সবার মাঝে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু-গ্রন্থভুক্ত হস্তলিপি বিভিন্ন স্থাপনায় ব্যবহার করা হয়েছে। এর ফলে স্থাপনাগুলো সৌন্দর্যম-িত হয়েছে। লিপি পাঠ করে তরুণেরা বঙ্গবন্ধুর হাতের লেখার সঙ্গে পরিচিত হবে। একই সঙ্গে তার চিন্তা ও দর্শনের অন্তর্নিহিত অর্থও উদ্ধার করতে পারবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ বাস্তবায়ন কমিটি একটি প্যাভিলিয়ন নিয়েছেন। এই প্যাভিলিয়নটি ইতোমধ্যে অনন্য সুন্দররূপে সাজানো হয়েছে। আমরা আশা করি, বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ উদযাপনে সারাদেশে যে জাগরণ তৈরি হয়েছে তার প্রতিফল এই প্যাভিলিয়ন থেকে মেলায় আগত দর্শক-পাঠক ও বঙ্গবন্ধু-অনুরাগীরা পাবেন।
কোভিড মহামারি পরিস্থিতিতে যখন বইমেলা হচ্ছে তখন মেলায় যাতে স্বাস্থ্যবিধি সম্পূর্ণভাবে মান্য করা হয় সেদিকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কোভিড-প্রটোকল মানা এবার সবার জন্য বাধ্যমূলক করা হয়েছে।
এ বছর মেলার বিন্যাসে কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। গতবার প্যাভিলিয়নগুলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যমাঠে রাখা হয়েছিল। এই বিন্যাস অনেকের দ্বারা সমালোচিত হয়। এবার প্যাভিলিয়নগুলো উদ্যানের সকল প্রান্তে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে বিন্যাসে পরিবর্তন ও সৌন্দর্যে নতুন মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
এ বছর লিটল ম্যাগাজিনের স্টলগুলোকে উদ্যানের এম্ফি থিয়েটারের পূর্বদিকে উদ্যানের মূল প্রাঙ্গণে বিন্যস্ত করা হয়েছে। এর ফলে আমাদের তরুণ ও উদ্ভানশীল সাহিত্যকর্মীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান যেমন বরাদ্দ করা হয়েছে তেমনি এটি মেলার বিন্যাসেও পরিবর্তন এনেছে।
বইমেলার বিস্তারিত তথ্যে জানানো হয়, এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ৭ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিট; মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৫টি প্যাভিলিয়ন থাকবে। এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের এম্ফি থিয়েটারের পূর্বদিকে মেলার মূল প্রাঙ্গণে। সেখানে ১২৭টি লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশ কমিশনে বই বিক্রি করবে।
বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন, শিশুকিশোর উপযোগী বইয়ের জন্য ১টি এবং সাহিত্য মাসিক উত্তরাধিকার-এর ১টি স্টল থাকবে। এবারও শিশুচত্বর মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে থাকবে। তবে কোভিড পরিস্থিতির কারণে প্রথমদিকে ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে না। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে।
এবারের গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমি প্রকাশ করছে নতুন ও পুনর্মুদ্রিত ১০৭টি বই। বইমেলা ১৫ই ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন দুপুর ২টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১শে ফেব্রুয়ারি মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বইমেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪টি প্রবেশ পথ ও ৩টি বাহির পথ থাকবে। বিশেষ দিনগুলোতে লেখক, সাংবাদিক, প্রকাশক, বাংলা একাডেমির ফেলো এবং রাষ্ট্রীয় সম্মাননাপ্রাপ্ত নাগরিকদের জন্য প্রবেশের বিশেষ ব্যবস্থা করা হবে। বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ। নিñিদ্র নিরাপত্তার জন্য মেলায় এলাকাজুড়ে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বইমেলা পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত থাকবে। মেলাপ্রাঙ্গণ ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (সমগ্র মেলাপ্রাঙ্গণ ও দোয়েল চত্বর থেকে টিএসসি হয়ে শাহবাগ, মৎস্য ভবন, ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউট হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত এবং দোয়েল চত্বর থেকে শহিদ মিনার হয়ে টিএসসি, দোয়েল চত্বর থেকে চাঁনখারপুল, টিএসসি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত) নিরাপত্তার স্বার্থে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকবে। মেলার পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা এবং নিয়মিত ধূলিনাশক পানি ছিটানো এবং প্রতিদিন মশক নিধনের সার্বিক ব্যবস্থা থাকবে।
এসব আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী নিয়ে প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
অমর একুশে বইমেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের ২০২২ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশককে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার এবং ২০২২ সালের বইমেলায় প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে শৈল্পিক বিচারে সেরা বই প্রকাশের জন্য ৩টি প্রতিষ্ঠানকে মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার দেওয়া হবে। এছাড়া ২০২২ সালে প্রকাশিত শিশুতোষ গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগত মান বিচারে সর্বাধিক গ্রন্থের জন্য ১টি প্রতিষ্ঠানকে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার এবং এ-বছরের মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের মধ্য থেকে স্টলের নান্দনিক সাজসজ্জায় শ্রেষ্ঠ বিবেচিত প্রতিষ্ঠানকে কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার প্রদান করা হবে।
অমর একুশে বইমেলা ২০২২-এর প্রচার কার্যক্রমের জন্য একাডেমিতে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদিতে ১টি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২টি তথ্যকেন্দ্র থাকবে। সাংবাদিকদের অবাধ তথ্য আদান-প্রদানের সুবিধার্থে বইমেলায় মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ ধারণার অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এটুআই কর্তৃপক্ষ বইমেলায় তাদের নিয়মিত কার্যক্রমের পাশাপাশি গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন, তথ্যকেন্দ্রের সর্বশেষ খবরাখবর এবং মেলার মূল মঞ্চের সেমিনার প্রচারের ব্যবস্থা করবে। মেলায় ওয়াইফাই সুবিধা থাকবে।
মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। এছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ থেকে বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মেলার তথ্যাদি প্রতিদিন সরাসরি সম্প্রচার করবে। এফ এম রেডিওগুলোও মেলার তথ্য প্রচার করবে। গ্রন্থমেলার খবর নিয়ে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি বুলেটিন প্রকাশিত হবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে।