উন্নয়নের মহাসড়কে জনগণ নিষ্পেষিত হলে সব মøান হয়ে যাবে কিছু আমলা দেশেকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করতে চান : ক্যাব সভাপতি
মো. আখতারুজ্জামান : কনজুমারস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, প্রশাসনে কিছু আমলা রয়েছেন এবং তাদের সায় দিচ্ছেন কিছু রাজনীতিবিদ। যারা এই রাষ্ট্রকে একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচালনা করতে চাচ্ছেন। বিভিন্ন কাজে তারা সফলও হচ্ছেন।
মঙ্গলবার ক্যাব আয়োজিত পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে অনলাইন সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
গোলাম রহমান বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। কিন্তু উন্নয়নের মহসড়কে জনগণ যদি নিষ্পেষিত হয় তখন কোন উন্নয়নই আর উন্নয়ন হিসেবে বিবেচিত হবে না। এবং সব অর্জন মøান হয়ে যাবে। তাই আমি অনুরোধ করবো, রাজনৈতিক নেতৃত্ব যেন সর্বক্ষেত্রে জনগণের কাছে জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে জনজীবনে স্বস্তি প্রদান করবেন।
ঢাকা ওয়াসার কর্মকর্তাদের বোনাস পাবার বিষয়ে ক্যাব সভাপতি বলেন, একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান যদি ভোক্তাদের উপর বাড়তি মূল্যের বোঝা চাপিয়ে দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে লাভ দেখায়, সেই সব কর্মচারী বা কর্মকর্তারা বোনাস পাবার যোগ্য? ইহা, তিরস্কার পাবার যোগ্য?
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, ক্যাব’র সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট প্রফেসর ড. এম শামসুল আলম, সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবীর র্ভূইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক সৈয়দ মিজানুর রহমান (রাজু), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ভূ-তত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভোক্তা কণ্ঠের সম্পাদক কাজী আব্দুল হান্নান। তিনি বলেন, অমিতব্যয়িতা, অব্যবস্থানা, ও দুর্নীতি-অপচয়ের সব দায়ভার ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে ভর্তুকি কমানোর পথ বেছে নিয়েছে ঢাকা ওয়াসা। ওয়াসা একটি অ-লাভজনক প্রতিষ্ঠান হলেও সেবার চেয়ে বাণিজ্যের দিকেই এর নজর এখন বেশি।
সভারসঞ্চলনা করেন ক্যাবের প্রচার সম্পাদ মুহাম্মদ সাজেদুল ইসলাম। প্রতিবাদ সভায় সারাদেশ থেকে ক্যাবের জেলা কমিটির নেতারাও অংশ নেন। এ সময় তারা পানি, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেন। রাজশাহীতেও পানির দাম তিনগুণ বৃদ্ধির প্রতিবাদে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বক্তারা। অপরদিকে রমজানে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি রোধ করার জন্য সিলেট বিভাগে ক্যাবের বিশেষ পাইলট কর্মসূচিকে সফল করার জন্য সর্বাত্ত্বক সহযোগিতা ও সমর্থন প্রত্যাশা করেন সিলেট ক্যাব সভাপতি জামিল চৌধুরী।
ড. এম শামসুল আলম বলেন, দেয়ালে আমাদের পিঠ ঠেকে গেছে। আমরা মূল্য বৃদ্ধি সইতে পারছি না। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ভুর্তুকি সরকার আর দিতে পারছেন না। আমরা তার সঙ্গে সমস্বরে বলতে চাই, আমরা এই মূল্য বৃদ্ধি আর সইতে পারছি না।
ওয়াসার এমডি এবং কর্মকর্তাদের বেতন বৃদ্ধি এবং বোনাসের বিষয়ে তিনি বলেন, ব্যক্তিখাত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি বিশেষের বেতন বাড়াতেই পারে। যাকে দিয়ে যত বেশি আয় করা সম্ভব, তার তত বেশি বেতন বাড়িয়ে তারা সেই ব্যক্তির কর্মদক্ষতা বাড়ায়। কিন্তু মূল্য বৃদ্ধি করা যদি তার দক্ষতা হয়, এবং সেই দক্ষতার পুরষ্কার স্বরূপ যদি বেতন হয়, তাহলে আমাদের এই জায়গাটিতে আঘাত করতে হবে।
তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো সব সময় সরকারি এবং এর মালিক জনগণ। সরকার জনগণের পক্ষে কোম্পানির মালিকানা তদারকি করে। এখানে কোন কোম্পানির বেতন ভাতা সরকারি নিয়মের বাইরে হবে না, সরকারি নীতিমালা, সরকারি নিয়মের বাহিরে কোন সুযোগ সুবিধা হবে না, যারা পদাধিকার বলে এখানে বোর্ডের চেয়ারম্যান, তারা কোন সভা করার ভাতা পাবেন না, কোন টিএ-ডিএ থাকলে তা নিবেন সরকারের কাছ থেকে। কারণ সেখানে আমরা ট্যাক্স-ভ্যাট দেই। তেল, গ্যাস, পানি, বিদ্যুৎ মত যেসমস্ত খাত লাভজনক নয়, যেসমস্ত খাতে সরকারকে ভুর্তকি দিতে হবে এবং সেই সমস্ত খাত সরকারি শুল্ক মুক্ত হতে হবে।
তিনি বলেন, গ্যাস, বিদ্যুৎ খাতে এক লক্ষ কোটি টাকারও মজুদ ছিল, যা সরকার আইন করে নিয়ে গেছে। জ্বালানি তেলের ৪৪ হাজার কোটি টাকা সমন্নয় না করে মুনাফা করেছে।