প্রথম ডোজ বন্ধ হচ্ছে না নিবন্ধন ছাড়া টিকা পেতে যুদ্ধ
শিমুল মাহমুদ : দেশজুড়ে কোটি মানুষকে কোভিড টিকা প্রয়োগে লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে শনিবার ৮টায় শুরু হয় গণটিকাদান কার্যক্রম। কোনো ধরনের নিবন্ধন কিংবা কাগজপত্র ছাড়াই শুধু মাত্র নিজের নাম ্আর মোবাইল নাম্বার একটি টিকা কার্ডে লিখে দিয়ে দেওয়া হয় টিকা।
এবারে সারা বাংলাদেশের বিভিন্ন কেন্দ্রে চীনের ওষুধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সিনোফার্মের টিকা সিনোভ্যাক দেয়া হচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজারের টিকা ফাইজার বায়োএনটেক কোভিড-১৯ টিকাটি দেয়া হচ্ছে শুধুমাত্র ঢাকার কয়েকটি কেন্দ্রে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে টিকা নিতে আসা মানুষের উপচে পড়া ভিড়ে থেমে থেমে অপেক্ষমানদের বিশৃঙ্খলা। এ ভিড় নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খেতে হয় কর্তৃপক্ষকে। অনেক কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার খবরও পাওয়া যায়।
সারা দেশে ২৮ হাজার বুথে শনিবার সকাল ৯টা থেকে টিকা দেওয়া শুরু হয়। এসব বুথে টিকা দেওয়ার কাজে যুক্ত রয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকসহ মোট ১ লাখ ৪২ হাজার জন। দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে নির্ধারিত টিকাকেন্দ্রের বাইরেও পাঁচটি করে ভ্রাম্যমাণ দল (তারাও টিকা দেবেন) রয়েছে। এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি অঞ্চলে ৩০ থেকে ৫০টি করে বুথে টিকা দেওয়া হচ্ছে।
তবে সকাল থেকে টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে ব্যাপক ভিড়ের প্রেক্ষাপটে গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় প্রথম ডোজ দেওয়ার সময় আরও দুদিন বাড়ানোর কথা জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ডেপ্লয়মেন্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি বলেন, এখনও প্রচুর ভিড় দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন কেন্দ্রে। মানুষকে দীর্ঘসময় ধরে কেন্দ্রে অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। সে কারণে আমরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ানোর।
যারা এতদিন টিকা নিতে পারেননি, এমন হাজার হাজার মানুষ সকাল থেকে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে। এরমধ্যে অনেকেই আছেন, যারা টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন কিন্তু এসএমএস আসেনি।
সবাইকে টিকা নিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, এখন পর্যন্ত যারা করোনাভাইরাসের টিকা জন্য নিবন্ধন করেছেন বা করেননি, এমন সবাই এই সময়ের মধ্যে টিকার প্রথম ডোজ নিয়ে নেবেন। কেউ এসএমএসের জন্য অপেক্ষা করবেন না।
তবে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ বাদ পড়লে স্থায়ী কেন্দ্র থেকে করোনা ভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিতে পারবেন। আমরা কখনও বলিনি, করোনা ভাইরাসের প্রথম ডোজ দেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। এ কারণে বিষয়টি নিয়ে বিভ্রান্তির সুযোগ নেই। আমরা বলেছি, ২৬ তারিখের মধ্যে সবাইকে টিকার আওতায় নিয়ে আসা হবে। এরমধ্যে যৌক্তিক কারণে কেউ যদি টিকার প্রথম ডোজ নিতে না পারেন, তারা আমাদের যে স্থায়ী কেন্দ্রগুলো আছে যেখানে দ্বিতীয় ডোজ এবং বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে সেখানে আসলে টিকা নিতে পারবেন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে, শুক্রবার পর্যন্ত সারাদেশে ১০ কোটি ৯৫ লাখ ৮১ হাজারের বেশি মানুষ করোনাভাইরাসের টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছেন ৮ কোটি ১৯ লাখ এবং বুস্টার ডোজ নিয়েছেন ৩৫ লাখ ৫৯ হাজারের বেশি মানুষ।