তেলের দর ব্যারেলে ছাড়ালো ১১১ ডলার
রাশিদ রিয়াজ : ২০১৪ সালের জুলাইয়ের পর তেলের দাম ব্যারেলে শত ডলার ছাড়িয়ে গেল। বুধবার লন্ডনে ব্রেন্ট অয়েলের দাম ৫.৮৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি ব্যারেল বিক্রি হয় ১১১.০৯ ডলার। ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর তেল সরবরাহে ঘাটতি ও সংকট থেকেই তেলের দর বাড়ছে। বিশেষ করে রুশ ব্যাংকগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নিষেধাজ্ঞার ফলে তেলের সরবরাহে বড় ধরনের ঘাটতি ও উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। রাশিয়া বিশে^র দ্বিতীয় বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ। বিশে^ তেল রফতানির ৮ শতাংশ সরবরাহ করে দেশটি। বিকল্প উৎস হিসেবে তেলের সরবরাহ পাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে বলে শঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা। ওয়েস্টপ্যাকের অর্থনীতিবিদ জাস্টিন স্মর্ক বলেন তেল উৎপাদন ও সরবরাহে বড় ধরনের ব্যাঘাতের নেতিবাচক প্রভাব সহজেই পড়বে এর ব্যবসার ওপরে। কৃষ্ণসাগর থেকে তেলের সরবরাহ ঠিক রাখতে যে মূলধন ও ইন্স্যুরেন্সের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে তারই প্রভাব পড়ছে বাজারে। তাস/টাইমস অব ইন্ডিয়া
এদিকে তেলের দর নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতিও বড় ধরনের প্রভাব রাখছে বলে মনে করছেন বাজার বিশ্লেষকরা। ইউক্রেনে রুশ হামলা ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলো নানাভাবে চেষ্টা করলেও অনড় রাশিয়া। মস্কোকে কোণঠাসা করতে একগুচ্ছ অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক দেশ। আন্তর্জাতিক বাজারে হু হু করে অপরিশোধিত তেলের দাম বৃদ্ধির পেছনে সেটিও এক কারণ। তেলের দর বৃদ্ধির মধ্যে বাজারে তেলের জোগান দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম নিয়ে মঙ্গলবার বৈঠকে বসে প্যারিসভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সি বা আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ)। আলোচনার পর বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, আন্তর্জাতিক বাজারে ভারসাম্য বজায় রাখতে ৬০ মিলিয়ন ব্যারেল অপরিশোধিত তেলের জোগান দেবে সংস্থাটির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো। আর এর অর্ধেকটাই আসবে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে। এ বৈঠকের পর কংগ্রেসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, ‘আমি ঘোষণা করছি যে আরও ৩০টি দেশের সঙ্গে যৌথভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ৬০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল জোগান দেওয়া হবে। এ উদ্যোগে নেতৃত্ব দেবে যুক্তরাষ্ট্র। আমরা বাজারে ছাড়ব ৩০ মিলিয়ন ব্যারেল তেল। প্রয়োজনে জোগান আরও বাড়াতে প্রস্তুত ওয়াশিংটন।’
আইইএর গভর্নিং বোর্ডের সদস্য ৩১টি দেশ। বাজারে তেলের সরবরাহ বাড়াতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এক বিবৃতিতে আইইএ বলেছে, ইউক্রেনে সংঘাতের কারণে বৈশ্বিক তেলের বাজারে একটি ঐক্যবদ্ধ ও শক্তিশালী বার্তা পাঠানো যে সরবরাহে কোনো ঘাটতি হবে না। আইইএ ইউক্রেনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছে। ইতিমধ্যেই বৈশ্বিক তেলের বাজারে দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের মূল্য নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা আছে আইইএর।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। এরপর চলছে ভয়ংকর লড়াই। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে বাগে আনতে অন্য আর্থিক নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংককে আন্তর্জাতিক আর্থিক লেনদেনের ‘সুইফট’ ব্যবস্থা থেকে বাদ দেওয়ার উদোগ নেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের বড় জোগানদাতা রাশিয়া। বিশেষ করে মস্কোর গ্যাস সরবরাহের ওপর নির্ভরশীল জার্মানির মতো ইউরোপের দেশগুলো। এ কারণে স্বাভাবিকভাবেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ধাক্কা খাচ্ছে তেলের জোগান।