ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়ার দখলে
অর্থনীতি ডেস্ক : ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিজ্জিয়া। এই স্পর্শকাতর জায়গাটিতেই হামলা করে বসেছে রুশ বাহিনী। ছয়টি পারমাণবিক চুল্লির মধ্যে একটির কাছে আগুন লেগে যায়। এই ঘটনা মস্কোর কঠোর নিন্দা জানাচ্ছে বিশ্বের অনেক দেশের রাষ্ট্রপ্রধান।
রুশ বাহিনীর বাঁধা পরও এক ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার দাবি করেছে ইউক্রেনে জরুরি পরিষেবার কর্তৃপক্ষ। এখনও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করতে পারেনি। তবে তারা বলছেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনায় আপাতত ঝুঁকি নেই।
এ ঘটনায় নিন্দার ঝড় তুলে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, এই ধরনের বেপরোয়া হামলা প্রত্যক্ষভাবে পুরো ইউরোপের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
মস্কোকে অবিলম্বে জাপোরিজ্জিয়ার আশপাশে সামরিক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বাইডেন গভীরভাবে পর্যেবক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছে হোয়াই হাউজ।
তাৎক্ষণিকভাবে নিন্দা জানিয়েছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। একে ভয়াবহ হামলা অ্যাখা দিয়ে দ্রুত ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। এই তিন নেতাই শুক্রবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিশ্বকে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া তাগিদ দিয়েছেন জেলেনস্কি। এক ভিডিও বার্তায় রাশিয়া পরমাণু সন্ত্রাস চালাচ্ছে উল্লেখ করে ১৯৮৬ সালে চেরনোবিল বিপর্যয় ঘটাতে চায় বলে অভিযোগ করেন তিনি। কেন্দ্রটির ক্ষয়ক্ষতি-সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য এখনো সামনে আসেনি। তবে কেন্দ্রের বিকিরণের মাত্রা এখনও স্বাভাবিক বলে জানা গেছে।
ইউক্রেনের আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানায়, জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির এক নম্বর বগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে এর পাওয়ার ইউনিট সুরক্ষার কোনো ক্ষতি হয়নি।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, অপারেশনাল কর্মীরা বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছেন। এছাড়া ওই এলাকায় বিকিরণের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে ছিল না। তবে এ ঘটনায় হতাহতের বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
এ হামলার পরপরই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং অন্যান্য বিশ্ব নেতা ফোনালাপ করেছেন। এছাড়া মার্কিন জ্বালানি বিভাগ সতর্কতা হিসাবে এর নিউক্লিয়ার ইনসিডেন্ট রেসপন্স টিমকে সক্রিয় করেছে।
এর আগে বিদ্যুৎকেন্দ্রটির মুখপাত্র আন্দ্রি টুজ ইউক্রেনীয় টেলিভিশনকে বলেছেন, গোলা সরাসরি জাপোরিঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রে পড়ছিল এবং এর ছয়টি চুল্লির মধ্যে একটিতে আগুন ধরে যায়। ওই চুল্লিটি কাজ করছে না এবং সংস্কার করা হচ্ছে। তবে এর ভেতরে পারমাণবিক জ্বালানি রয়েছে।
জাপোরিঝিয়ার আঞ্চলিক সামরিক প্রশাসন জানায়, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় করা পরিমাপে দেখা যায় এই অঞ্চলে বিকিরণের মাত্রা অপরিবর্তিত এবং জনসংখ্যার জীবন ও স্বাস্থ্যকে বিপন্ন করে না।
মধ্যরাতে একটি আবেগঘন বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, তিনি একটি বিস্ফোরণের আশঙ্কা করছিলেন যা সবাইকে শেষ করে দেবে। ইউরোপকে শেষ করে দেবে।
তিনি বলেন, ইউরোপের জরুরি পদক্ষেপই রুশ সেনাদের থামাতে পারে। একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপর্যয় থেকে ইউরোপ ধ্বংসের অনুমতি দেবেন না। সূত্র : ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা