দেশে করোনা শনাক্তের দুই বছরে ২৯ হাজার ৮৯ জনের মৃত্যু
শাহীন খন্দকার : করোনা মহামারির দু’বছর পার করল বাংলাদেশ। তবে বর্তমানে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও প্রশ্ন রয়েছে ব্যবস্থাপনা নিয়ে। এ ছাড়া রিজেন্ট-জেকেজি কেলেঙ্কারিসহ নানা অব্যবস্থাপনা মহামারিকালে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে স্বাস্থ্যখাতের দুর্বলতা। যদিও গত দুই বছরের কার্যক্রম সফল বলেই দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
৮ মার্চ ২০২০। বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ছড়ানো করোনাভাইরাসের ভয়াল থাবায় বাংলাদেশও। দেশে প্রথমবারের মতো ৩ জন আক্রান্তের তথ্য জানায় আইইডিসিআর। মুহূর্তেই সারাদেশে ব্যাপক আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়ে। জনমনে তীব্র শঙ্কার সুযোগ নিয়ে মাস্ক-স্যানিজাইটারের দাম বেড়ে যায় অস্বাভাবিক হারে। এরপর কখনো স্বস্তি, কখনো উদ্বেগ, কখনো লকডাউনসহ নানা বিধিনিষেধ-এভাবেই কেটেছে মহামারির গত দুই বছর।
এ সময়ে করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হন ১৯ লাখ ৪৭ হাজার ৭০২ জন। সবচেয়ে বেশি ভয়াল সময় কেটেছে গত বছরের জুলাই-আগস্টে। ডেল্টার ধাক্কায় দেশে এ যাবৎকালে কোভিডে মোট মৃত্যুর ৪০ শতাংশই প্রাণ হারান এ দুই মাসে। আক্রান্ত হয় প্রায় ৬ লাখ মানুষ।
আর চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওমিক্রনের প্রভাবে সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি শঙ্কা জাগালেও বড় ধরনের বিপদের কারণ হয়ে ওঠেনি। অন্যদিকে, উন্নত অনেক দেশের আগেই গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে গণহারে কোভিড টিকা কার্যক্রম শুরু করে বাংলাদেশ।
নিয়মিত কার্যক্রমের বাইরেও কয়েক দফা গণটিকা কর্মসূচির সুবাদে দেশে এখন টিকার আওতায় ১২ কোটি ৫৫ লাখ মানুষ। পুরোদমে শুরু হয়েছে বুস্টার ডোজ প্রয়োগও। প্রথম ডোজ প্রাপ্ত বয়স্ক থেকে ছাত্র ও ভাসমান মানুষদের সবমিলিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছে প্রায় ২৩কোটি ৪৪ লাখ ৯৪ হাজার ৬৪৯ ডোজ। এরমধ্যে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ১২ কোটি ৫৫লাখ ৮৮হাজার ৭২১ ডোজ ,দ্বিতীয় ডোজ ৮ কোটি ৭৩ লাখ ১০ হাজার ৭৪৬ ডোজ বুস্টার দেওয়া হয়েছে ৪৩ লাখ ৬৭ হাজার ১৩৩ ডোজ। এছাড়া শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৭০ লাখ৩৯ হাজার ৮৫৫ ডোজ আর ভাসমানজনগোষ্ঠিকে দেওয়া হয়েছে সোমবার পযন্ত ১ লাখ ৮৮হাজার ১৯৪ ডোজ।
অন্যদিকে গত দুই বছরে নানা কারণে বিতর্কের কেন্দ্রে ছিল কোভিড ব্যবস্থাপনা। রিজেন্ট- জেকেজি কেলেঙ্কারির কারণে কারাগারে যেতে হয় শাহেদ-সাবরিনাকে, আর পদত্যাগে বাধ্য হন স্বাস্থ্যের সাবেক মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদকে। এ ছাড়া অপর্যাপ্ত কোভিড পরীক্ষা, কিটের ঘাটতি, অক্সিজেন-আইসিইউ সংকটসহ নানা অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় বিভিন্ন সময় সমালোচনার কেন্দ্রে থাকলেও মন্ত্রীর দাবি ভিন্ন।
করোনা ভাইরাসের টিকাদানে বিশ্বে বাংলাদেশ এখন শীর্ষ দশে অবস্থান করছে। এটা অনেক বড় পাওয়া বলে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, এমন অর্জন এমনি এমনি হয়নি। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় হয়েছে।’ উল্লেখ্য গত (২৭ ফেব্রুয়ারি) বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ৪২তম বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া চিকিৎসকদের ওরিয়েন্টেশন প্রোগ্রামে বক্তব্য প্রদানকালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও দাবি করেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ এখন শীর্ষে। কোভিডে বাংলাদেশে এখন ভালো অবস্থানে আছে, এটা ধরে রাখতে হবে। আর কোভিড ধাক্কা কাটিয়ে বিভিন্ন খাত ঘুরে দাঁড়ালেও এখনো সম্ভব হয়নি শিক্ষা খাতের ক্ষতি পোষাণো।