দাম বাড়বে তাই সরবরাহ বন্ধ করেছে তেল কোম্পানিগুলো
মো. আখতারুজ্জামান : কয়েক সপ্তাহ থেকে দেশের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী ভোজ্যতেলের দাম। সরকারের নানা উদ্যোগেও কোনো সুফল পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ। তার ওপর আবার গত দুই সপ্তাহ থেকে খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এই পরিস্থিতিতে কারখানায় অভিযান শুরু করে দিয়েছে ভোক্তা অধিদপ্তর।
খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আসল জায়গায় না গিয়ে দোকানে অভিযান পরিচালনা করলে কোনো সুফল হবে না।
রাজধানীর মগবাজারের মুদি দোকানী নয়ন জানান, সয়াবিনের দাম আরও বাড়াবে তাই কোম্পানিগুলো বেশ কিছুদিন থেকে তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। গত তিন দিন থেকে মজুত না থাকায় তার দোকানে সয়াবিন তেল বিক্রি হয় না।
সুপার শপগুলোতেও সয়াবিনের সরবরাহ কম। আগে যেখানে সুপার শপগুলোতে সারি সারি তেলের বোতল ছিলো এখন সেই জায়গাগুলো ফাঁকা পড়ে রয়েছে।
সুপার শপের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কোম্পানিগুলো তেলের দাম বৃদ্ধি করবে তাই এখন তেল সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সাধারণত তিন থেকে চার মাসের তেল মজুত থাকে। কিন্তু গত কয়েক দিন থেকে হঠাৎ করে তেলের সরবরাহ বন্ধ থাকা সন্দেহজনক।
জানা যায়, ছয়টি মিল সয়াবিন তেল এবং পামওয়েলসহ ভোজ্য তেল পরিশোধন করে দেশের বাজারে সরবরাহ করে থাকে। দেশে বছরে ভোজ্য তেলের চাহিদা ২০ লাখ টন। সে অনুযায়ী তিন মাসের চাহিদা এক লাখ ৫০ হাজার টনের মতো।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান জানান, মিল মালিকরা গত তিন মাসের সরবরাহের তথ্য বা তালিকা দিয়েছেন। তাদের তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সয়াবিন তেলের কারখানায় অভিযান পরিচালনা শুরু করে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুই কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। সেখান থেকে আমরা বেশি কিছু কাগজপত্র নিয়ে এসেছি। সেগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। যদি কোনো ধরনের অসংগতি পাওয়া যায়। তাহলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি। পর্যায়ক্রমের সব কারখানায় অভিযান পরিচলানা করা হবে বলে জানান তিনি। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন জানান, সরকারের পক্ষ থেকে মুদির দোকানে সয়াবিনের বিষয়ে অভিযান চলতে। এটা ভালো দিক যে সরকার জানুক আসলে সমস্যাটা কোথায়?
রোববার থেকে পাকা রশিদ ছাড়া সয়াবিন তেল বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তর। তাদের এই প্রস্তাবনাকেও আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি।
এক প্রশ্নের জবাবে হেলাল উদ্দিন বলেন, কোম্পানিগুলো যদি তেল সরবরাহ না করে তাহলে তো আমরা তেল বিক্রি করতে পারবো না। ফলে অনেক দোকানেই এখন তেল নেই।
সয়াবিন তেলের বাজারে এই অস্থির অবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসতে বুধবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এবং জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানের নেতৃত্বে ভোজ্য তেল মিল মালিক ও ডিলারদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে সফিকুজ্জামান জানিয়েছেন, তেলের বাড়তি দাম নিয়ে গত ১৫ দিনে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। প্রতিদিনের ভোজ্য তেলের চাহিদার সঙ্গে তুলনা করে তারা অনুমানিক এই পরিসংখ্যান পেয়েছেন। প্রতিদিন যদি ৫ হাজার টন ভোজ্য তেলে চাহিদা রয়েছে। সেই হিসেবে লিটারে ১০ টাকা করে বাড়লে মোট অংকটা অনেক বড় হয়।