যুদ্ধের বাজারে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে সামাজিক অস্থিরতা : বিশ্ব ব্যাংক
শোভন দত্ত : ইউক্রেইনে আগ্রাসনের জবাবে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে বেড়ে চলা জ্বালানি ও খাদ্যমূল্য মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায় দেশগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং সামাজিক অস্থিরতায় আরও ইন্ধন যোগাতে পারে বলে সতর্ক করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কারমেন রেইনহার্ট।
এই যুদ্ধের প্রভাব এবং খাদ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় রাখা নিয়ে ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের মধ্যেই শুক্রবার বিশ্বের প্রভাবশালী অর্থনীতির দেশগুলোর জোট জি-৭ এর কৃষিমন্ত্রীদের নিয়ে একটি ভার্চুয়াল সভার আয়োজন করতে যাচ্ছে জার্মানি।
রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে কারমেন রেইনহার্ট বলেন, “বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা ও সাব-সাহারান আফ্রিকার দেশগুলোর ওপর এর (নিষেধাজ্ঞা) গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব দেখা দেবে। এসব দেশ এখনই খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে রয়েছে, সামনে আরও দুর্দিন আসছে।” তিনি বলেন, “আমি নাটকীয় কিছু বলতে চাই না, কিন্তু এটাও অস্বীকার করার উপায় নেই যে আরব বসন্তের নেপথ্যে খাদ্য নিরাপত্তার অভাব এবং দাঙ্গার যোগসূত্র ছিল।” গত দুই বছরে আফ্রিকায় বেশ কয়েকটি সফল ও ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টার কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ।
২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের গায়ে আগুন জ্বেলে বিপ্লবের মশাল জ্বেলে দেন তিউনিসিয়ার এক ফেরিওয়ালা। ঘুষ, দুর্নীতি, বেকারত্ব, রাজনৈতিক নিপীড়ন ও স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে তা ছিল এক জ্বলন্ত বিদ্রোহ।
ওই বিদ্রোহের আগুন আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তিউনিসিয়া, মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন, বাহরাইন ও সিরিয়ায় সেই গণ আন্দোলন ‘আরব বসন্ত’ নামে পরিচিতি পায়।
রয়টার্স লিখেছে, খাবারের দাম আকস্মিক বেড়ে গেলে সামাজিক পরিস্থিতি মোড় নেয় অস্থিরতার দিকে, যেমনটি ঘটেছিল ২০০৭-০৮ এবং ২০১১ সালে; যা পৃথিবীর ৪০টি দেশে ঘটে যাওয়া দাঙ্গার কারণ।
বিশ্ব ব্যাংকের গত মসের প্রতিবেদন বলছে, জানুয়ারিতে কৃষিপণ্যের দাম আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৫ শতাংশ বেশি ছিল। এখন যুদ্ধ বেঁধে যাওয়ায় দাম আরও বাড়বে, কারণ রাশিয়া ও ইউক্রেন গম, ভুট্টা, বার্লি ও সূর্যমুখী তেলের বড় রপ্তানিকারক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জ্বালানি ও খাদ্য মূল্য বাড়ার প্রভাবে নীতি নির্ধারকরা আরও ভর্তুকি দিতে বাধ্য হবেন। তাতে নি¤œ আয়ের দেশগুলো আরও ঋণের চাপে পড়বে। এসব দেশের মধ্যে ৬০টি ইতোমধ্যে ঋণ সংকটে আছে।
গত মাসে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বিশ্ব ব্যাংক সতর্ক করেছিল, রাশিয়া-ইউক্রেইনের অস্থিরতা মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বড় ধাক্কা দিতে পারে, করাণ মিশরের মত দেশগুলো তাদের গমের চাহিদার ৮০ শতাংশ পর্যন্ত ইউক্রেইন ও রাশিয়া থেকে আমদানি করে। মোজাম্বিকও গম ও তেলে আমদানিনির্ভর।
অর্থনীতিবিদ রেইনহার্ট বলেন, বাণিজ্য এবং অর্থনীতিতে রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্কে রেখে চলা মধ্য এশিয়ার দেশগুলো উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও আশঙ্কা করছে, পশ্চিমা অবরোধের কারণে এ বছর ওই অঞ্চলে একটি অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির দেখা হতে পারে।
এর মধ্যে শরণার্থীর ঢেউ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলতে পারে বলে মনে করছেন রেইনহার্ট। তিনি বলেন, “এর প্রভাব পড়বে তাদের মুদ্রার মানে। এরই মধ্যে ব্যাংকগুলোতে সেই লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, আস্থার এই সংকট আরও বাড়তে পারে, যার সঙ্গে যোগ হতে পারে খাদ্য নিরাপত্তার অভাব এবং রেমিটেন্স প্রবাহে ধীর গতি।” সূত্র : রয়টার্স, বিডিনিউজ।