নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ীরা ঝুঁকছেন দামি পোশাক উৎপাদনে
মো. আখতারুজ্জামান : বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তবে এর অধিকাংশ কম দামি পোশাক। এই কম দামি পোশাক থেকে বেড়িয়ে এসে দামি পোশাক উৎপাদনে ঝুঁকছে ব্যবসায়ীরা।
ফ্যাশনসমৃদ্ধ পোশাকের বিশ্ববাজারে চাহিদা এবং দাম বেশি বলে দামি পোশাক উৎপাদনে নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বর্তমানে দেশের মোট পোশাক উৎপাদনের মধ্যে অন্তত ৩০ শতাংশ বেশি দামের, যাকে হাই এন্ড ক্যাটাগরির পোশাক বলা হয়।
পোশাক ব্যবসায়ীরা জানান, সাধারণত ৭০ ডলারের বেশি দরের পোশাককে হাই এন্ড, ৩৫ থেকে ৭০ ডলারের মধ্যে হলে গড় এবং ১৫ ডলারের নিচের পোশাককে লো এন্ড বা কম দামের পোশাক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। টি-শার্ট লো এন্ড এবং স্যুট বা ব্লেজার হাই এন্ড পোশাকের প্রান্তিক উদাহরণ। অনেক ক্ষেত্রে ব্র্যান্ডের ওপর নির্ভর করে পণ্যটি কম দামি না বেশি দামি।
তৈরি পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র পরিচালক মো. মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, আমরা যেসব পোশাক উৎপাদন করে থাকি তার বেশিভাগ কম দামি। তবে এখন অনেকেই বেশি দামি পোশাক উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন। এখানে সব ধরনের ব্যবসায়ীদের আগ্রহ রয়েছে। তবে নতুন প্রজন্মের ব্যবসায়ীদের দামি পোশাক তৈরিতে আগ্রহ সব থেকে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
ব্যবসায়ীরা বলেন, বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের কম-বেশি ৩০ শতাংশ বেশি দামের পোশাক। বিশ্ববাজারে এ ধরনের মোট পোশাকের মধ্যে মাত্র ১০ শতাংশ উৎপাদন হয় বাংলাদেশে। জাপান, ইতালি ও তুরস্ক বেশি উৎপাদান করে থাকে। টমি হিলফিগার, হুগু বস, মার্কস এন্ড স্পেন্সার, গুসি, পুমা, জারা হাই এন্ড পোশাকের ব্র্যান্ডের উদাহরণ। বিশ্বের দামি ব্র্যান্ডগুলোও এখন এ দেশে আসতে শুরু করছে। ফলে মৌলিক পোশাকের পর আগামীতে এ ধরনের পোশাকেও সম্ভাবনা রয়েছে।
জিয়া অ্যাপারেলের এমডি জিয়া আহম্মেদ হাই এন্ডের পোশাক হিসেবে স্যুট, ব্লেজার জ্যাকেটের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, শুরুর দিকে কম দামের মৌলিক পণ্য উৎপাদন করলেও এখন তিনি উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদন করছেন।
জিয়া আহম্মেদ বলেন, বিশ্ব পরিস্থিতি বুঝে চীন যেমন পোশাক পণ্যকেই রপ্তানি তালিকা থেকে বাদ দিতে শুরু করেছে, তেমনি বাংলাদেশকেও কম দামের পণ্যের পরিবর্তে বেশি দামের ফ্যাশনেবল পণ্য উৎপাদনে মনোযোগ দিতে হবে। তা না হলে প্রতিযোগিতার বিশ্ববাজারে টিকে থাকা মুশকিল হবে।
৪ মার্চ এক অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাকের ২য় শীর্ষ রপ্তানিকারক হলেও মূলত তূলনামূলক কম দামের পোশাক বিক্রি করে বাংলাদেশ। এ অবস্থার উন্নয়নে তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পমালিকদের বিনিয়োগে বৈচিত্র নিয়ে আসতে হবে। বেশিরভাগ উদ্যোক্তারা কটনবেজড পোশাকের কারখানা এবং স্পিনিংয়ে বিনিয়োগে আগ্রহী। কিন্তু এখন বিশ্ববাজারে কৃত্তিম ফাইবারের পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। তাই তৈরি পোশাক ও বস্ত্রখাতের উদ্যোক্তাদের ম্যান মেড ফাইবার খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান সভাপতি।
তিনি বলেন, পোশাক উৎপাদনে দীর্ঘদিন ধরে কম দামে গ্যাস-বিদ্যুতের সুবিধা পেয়ে আসছিলো। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে এ সুবিধা কমে যাচ্ছে। তূলনামূলক স্বস্তাশ্রমের সুবিধাও এখন আর নেই।
অন্যদিকে এ শিল্পের কাঁচামালের দাম ক্রমাগত বাড়ছে। তাই এ শিল্পে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হলে, এখন উচ্চমূল্যের পোশাক রপ্তানিতে মনোযোগ দিতে হবে। বাংলাদেশকে নতুনভাবে ব্র্যান্ডিং করার জন্যও উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্যে দেখা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে পোশাক খাতে ৪.০৮ বিলিয়ন ডলার আয় হয়েছে। বর্তমান বিনিময় হার (প্রতি ডলার ৮৬ টাকা) হিসাবে টাকার অঙ্কে এই অর্থের পরিমাণ ৩৫ হাজার ১২৭ কোটি টাকা। এই আয় এক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি। এর আগে পোশাক রপ্তানি থেকে এক মাসে সর্বোচ্চ আয় ছিল গত বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে, ৪.০৪ বিলিয়ন ডলার। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে অর্থাৎ জুলাই-জানুয়ারি সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ২ হাজার ৯৫৫ কোটি ডলার রপ্তানি আয় করেছেন বাংলাদেশের রপ্তানিকারকরা।